মামলা থে‌কে ‘রেহাই’ দেওয়ার আশ্বাস দি‌য়ে আসা‌মি থে‌কে ঘুষ নি‌য়ে‌ছেন দুর্নী‌তি দমন ক‌মিশ‌নের উপ-সহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরী। বিভাগীয় মামলার তদন্তেও তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহ‌ণের অভিযোগ প্রমা‌ণিত হ‌য়ে‌ছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৩৯(খ), ৩৯(৪) ও ৩৯(চ) বিধি মোতাবেক অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ‘চাকরি হ‌তে বরখাস্ত’ ক‌রে গুরুদণ্ড দেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) এ-সংক্রান্ত এক আদেশ জা‌রি করা হ‌য়ে‌ছে। আদেশে সই ক‌রেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

এতে বলা হয়, সুদীপ কুমার চৌধুরী, উপ-সহকারী পরিচালক (সাময়িক বরখাস্ত)-এর বিরুদ্ধে আনিত অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বর্ণিত অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৪০(১) (খ) (৫) মোতাবেক তাকে ‘চাকরি হইতে বরখাস্ত’ গুরুদণ্ড প্রদান করা হলো। এ আদেশ জারির তারিখ থেকে শাস্তি কার্যকর হবে ব‌লেও জানানো হয় আদেশে।

অভি‌যো‌গে জানা যায়, সুদীপ কুমার চৌধুরী, দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, বগুড়া জেলা পুলিশে গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পরিদর্শক আলমগীর হোসেনের বিরু‌দ্ধে দুদ‌কের দা‌য়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ‌ছি‌লেন।

আসা‌মির সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তাকে মামলা (নং-০১ জি,আর-০১/২০২১ (দুদক) তাং-২৪/০১/২০২১) হতে অব্যাহতি প্রদানের আশ্বাস ‌দি‌য়ে বড় অং‌কের ঘুষ দা‌বি ক‌রেন। এক পর্যা‌য়ে আসা‌মি আলমগীর হোসেনের খালাতো বোন বেগম রুমাইয়া শিরিনের নিকট হতে তি‌নি  ৭ লাখ টাকা ঘু‌ষের কিছু অর্থ গ্রহণ ক‌রেন। পরবর্তী‌তে বাকি টাকার অংশ হি‌সে‌বে বগুড়া বারের আইনজীবী কামাল উদ্দিন থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন। প‌রে অ্যাডভোকেট সৈয়দ আসিফুর রহমানের মাধ্যমে আরো ১ লাখ টাকা ঘুষ দা‌বি ক‌রেন দুদকের এই কর্মকর্তা।

জানা গে‌ছে, সুদীপ কুমার চৌধুরীর বিরু‌দ্ধে অভিযোগ পে‌য়ে দুদক অভিযোগটি তদন্ত করার জন‌্য সমন্বিত জেলা কার্যালয় টাঙ্গাইল
উপপরিচালক নাছির উদ্দিনকে নি‌য়োগ দেয়। 

তি‌নি অভিযোগ তদন্তকা‌লে সুদীপ কুমারের বিরু‌দ্ধে পু‌লিশ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনকে মামলা হতে অব্যাহতি প্রদানের জন্য তার খালাতো বোন বেগম রুমাইয়া শিরিন এবং অ্যাডভোকেট সৈয়দ আসিফুর রহমানের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত মোবাইলের মাধ্যমে ঘুষ দা‌বি ও গ্রহণের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সংগ্রহ ক‌রে তা দুর্নীতি দমন কমিশনের ফরেনসিক ল্যাবে পাঠান। প‌রে বিশেষজ্ঞগণের মতামতে সুদীপ কুমারের বিরু‌দ্ধে প্রমাণ পান।

দুদক জানায়, দুদ‌কের যে কো‌নো অনুসন্ধান  ও মামলা তদন্তকালে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সাক্ষীদের সাথে টেলিফোনে কিংবা মোবাইলে যোগাযোগ না করার জন্য নির্দেশনা থাকলেও আসা‌মি সুদীপ কুমার তা প্রতিপালন না করে দুর্নীতি দমন কমিশনের জারিকৃত আদেশ অমান্য করেছেন।

এমন‌কি, তিনি কমিশনের আদেশ অমান্য করে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট হতে ঘুষ দা‌বি ও গ্রহণ ক‌রে দুর্নীতি দমন কমিশনের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন ক‌রে‌ছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ মোতাবেক সাম‌য়িক বরখাস্ত করা হয়। একইস‌ঙ্গে তার বিরু‌দ্ধে বিভাগীয় মামলা নম্বর ০৯/২০২৩ রুজু পূর্বক তার নিকট অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী জারি করা হয়।

পরবর্তী‌তে সুদীপ কুমার অভিযোগের জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানি চাইলে ২০২৩ সালের ৮ জুলাই তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়। শুনানি শে‌ষে অভিযোগের বিষয়ে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ মোতাবেক আবারো একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা দীর্ঘ তদন্ত শেষে ওই বছরের ২ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে সুদীপ কুমার চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী, ব্যক্তিগত শুনানিতে প্রদত্ত বক্তব্য, তদন্ত প্রতিবেদন, অন্যান্য কাগজপত্র ও প্রমাণক পর্যালোচনায় সুদীপ কুমার চৌধুরী বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বর্ণিত অভিযোগে তাকে ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত কমিশনের ০৩/২০২৫ নম্বর সভায়
চাকরি হতে বরখাস্ত করার গুরুদণ্ড প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। যা বুধবার দুদক চেয়ারম‌্যা‌নের স্বাক্ষ‌রিত আদেশে কার্যকর করা হয়েছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত বরখ স ত তদন ত হওয় য় দমন ক গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ