মামলা থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলে ঘুষ নেন দুদক কর্মকর্তা সুদীপ কুমার
Published: 16th, April 2025 GMT
মামলা থেকে ‘রেহাই’ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আসামি থেকে ঘুষ নিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-সহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরী। বিভাগীয় মামলার তদন্তেও তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৩৯(খ), ৩৯(৪) ও ৩৯(চ) বিধি মোতাবেক অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ‘চাকরি হতে বরখাস্ত’ করে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) এ-সংক্রান্ত এক আদেশ জারি করা হয়েছে। আদেশে সই করেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
এতে বলা হয়, সুদীপ কুমার চৌধুরী, উপ-সহকারী পরিচালক (সাময়িক বরখাস্ত)-এর বিরুদ্ধে আনিত অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বর্ণিত অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৪০(১) (খ) (৫) মোতাবেক তাকে ‘চাকরি হইতে বরখাস্ত’ গুরুদণ্ড প্রদান করা হলো। এ আদেশ জারির তারিখ থেকে শাস্তি কার্যকর হবে বলেও জানানো হয় আদেশে।
অভিযোগে জানা যায়, সুদীপ কুমার চৌধুরী, দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, বগুড়া জেলা পুলিশে গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পরিদর্শক আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন।
আসামির সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তাকে মামলা (নং-০১ জি,আর-০১/২০২১ (দুদক) তাং-২৪/০১/২০২১) হতে অব্যাহতি প্রদানের আশ্বাস দিয়ে বড় অংকের ঘুষ দাবি করেন। এক পর্যায়ে আসামি আলমগীর হোসেনের খালাতো বোন বেগম রুমাইয়া শিরিনের নিকট হতে তিনি ৭ লাখ টাকা ঘুষের কিছু অর্থ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বাকি টাকার অংশ হিসেবে বগুড়া বারের আইনজীবী কামাল উদ্দিন থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন। পরে অ্যাডভোকেট সৈয়দ আসিফুর রহমানের মাধ্যমে আরো ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন দুদকের এই কর্মকর্তা।
জানা গেছে, সুদীপ কুমার চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে দুদক অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য সমন্বিত জেলা কার্যালয় টাঙ্গাইল
উপপরিচালক নাছির উদ্দিনকে নিয়োগ দেয়।
তিনি অভিযোগ তদন্তকালে সুদীপ কুমারের বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনকে মামলা হতে অব্যাহতি প্রদানের জন্য তার খালাতো বোন বেগম রুমাইয়া শিরিন এবং অ্যাডভোকেট সৈয়দ আসিফুর রহমানের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত মোবাইলের মাধ্যমে ঘুষ দাবি ও গ্রহণের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সংগ্রহ করে তা দুর্নীতি দমন কমিশনের ফরেনসিক ল্যাবে পাঠান। পরে বিশেষজ্ঞগণের মতামতে সুদীপ কুমারের বিরুদ্ধে প্রমাণ পান।
দুদক জানায়, দুদকের যে কোনো অনুসন্ধান ও মামলা তদন্তকালে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সাক্ষীদের সাথে টেলিফোনে কিংবা মোবাইলে যোগাযোগ না করার জন্য নির্দেশনা থাকলেও আসামি সুদীপ কুমার তা প্রতিপালন না করে দুর্নীতি দমন কমিশনের জারিকৃত আদেশ অমান্য করেছেন।
এমনকি, তিনি কমিশনের আদেশ অমান্য করে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট হতে ঘুষ দাবি ও গ্রহণ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ মোতাবেক সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা নম্বর ০৯/২০২৩ রুজু পূর্বক তার নিকট অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী জারি করা হয়।
পরবর্তীতে সুদীপ কুমার অভিযোগের জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানি চাইলে ২০২৩ সালের ৮ জুলাই তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়। শুনানি শেষে অভিযোগের বিষয়ে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ মোতাবেক আবারো একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা দীর্ঘ তদন্ত শেষে ওই বছরের ২ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে সুদীপ কুমার চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী, ব্যক্তিগত শুনানিতে প্রদত্ত বক্তব্য, তদন্ত প্রতিবেদন, অন্যান্য কাগজপত্র ও প্রমাণক পর্যালোচনায় সুদীপ কুমার চৌধুরী বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বর্ণিত অভিযোগে তাকে ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত কমিশনের ০৩/২০২৫ নম্বর সভায়
চাকরি হতে বরখাস্ত করার গুরুদণ্ড প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। যা বুধবার দুদক চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত আদেশে কার্যকর করা হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত বরখ স ত তদন ত হওয় য় দমন ক গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
আত্মসমর্পণের পর কারাগারে খালেদা জিয়ার ভাগ্নে তুহিন
দুর্নীতি ও কর ফাঁকির পৃথক দুই মামলায় খালেদা জিয়ার ভাগ্নে শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন আদলাতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়েছেন। আদালত তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ঢাকার পৃথক দুই বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করেন শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। মামলার শুরু থেকে পলাতক ছিলেন তিনি। রায় ঘোষণার ১৭ বছর পর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তুহিন।
দুই মামলার মধ্যে প্রথমে কর ফাঁকির মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক কবির উদ্দিন প্রামাণিকের আদালতে তার আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরপর অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক প্রদীপ কুমার রায়ের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে এ আদালতও তার জামিন নামঞ্জুর করেন।
এসময় আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তার চিকিৎসা ও ডিভিশন চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন বলে জানান আদালতকে। এ জন্য ব্যক্তিগত খরচে তাকে অ্যাম্বুলেন্স যোগে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করা হয়। আদালত কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশন ও চিকিৎসার নির্দেশ দেন।
জানা যায়, কর ফাঁকির অভিযোগ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমশিন (দুদক)।
এর মধ্যে কর ফাঁকির মামলায় ২০০৮ সালে পৃথক দুই ধারায় তিন বছর ও পাঁচ বছর করে মোট আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। দুই ধারার সাজা একত্রে চলবে বিধায় তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজা ভোগ করতে হবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।
এছাড়া, অবৈধ সম্পদের মামলায় ২০০৮ সালে তাকে পৃধক দুই ধারায় তিন বছর এবং ১০ বছর অর্থাৎ ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ঢাকা/এম/ইভা