ট্রাম্পের শুল্কাঘাত মোকাবিলায় আসিয়ানের যা করা উচিত
Published: 16th, April 2025 GMT
যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত তাঁর বহু আগে থেকেই হুমকি দিয়ে আসা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর করলেন, তখন তার মাত্রা ও বিস্তৃতি বেশির ভাগ দেশের আশঙ্কার চেয়েও খারাপ ছিল। চীন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটি অনুমিতই ছিল। কিন্তু বেশির ভাগ এশীয় দেশের ওপর যে কঠোর শুল্ক চাপানো হলো, তা ছিল এক গভীর ধাক্কা।
সৌভাগ্যবশত অর্থবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা শুরু হলে শুল্ক কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প ঘোষণা দেন, এসব ‘পারস্পরিক’ শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। এই সাময়িক বিরতিতে সুবিধাপ্রাপ্ত এশীয় সরকারগুলোর উচিত এখন আরও ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া গড়ে তোলা এবং সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের দর-কষাকষিতে বাড়তি প্রভাব সৃষ্টি করবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমার নিজের দেশ শ্রীলঙ্কার ওপর শুরুতে যে শুল্ক আরোপ করা হয়, তা ছিল ৪৪ শতাংশ। এটি একটি বিশাল হার। অথচ যখন এই শুল্ক চাপানো হয়, তখনই শ্রীলঙ্কা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে এক কঠিন সময় পার করছিল। এমনকি সে সময়ের প্রেসিডেন্টও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং পুরো দেশ একরকম দেউলিয়া হয়ে পড়ার পথে ছিল।
এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র (যা শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য) যদি ওই শুল্ক আরোপ করে, তাহলে তা শ্রীলঙ্কার ঘুরে দাঁড়ানোর বা পুনরুদ্ধারের চেষ্টাকে একটি মারাত্মক ধাক্কা দেবে। অর্থাৎ এই শুল্ক শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে দিতে পারে। কারণ, রপ্তানি থেকে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়, তা দেশের অর্থনীতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা কঠিন হয়ে পড়ে, তাহলে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে আবারও বড় সংকট দেখা দিতে পারে।
অন্য এশীয় দেশগুলোর অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়, বরং কয়েকটি দেশ আরও বেশি শুল্কের শিকার হয়েছে। যেমন কম্বোডিয়ার ওপর ৪৯ শতাংশ, লাওসের ওপর ৪৮ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ শতাংশ হারে শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।
এই প্রস্তাবিত শুল্ক এতটাই কঠিন যে কেউ কেউ ভাবতেই পারেন, ভিয়েতনাম যুদ্ধে সামরিক দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রতিশোধ নিতে ট্রাম্প এখন ইন্দোচীনের ওই দেশগুলোর ওপর অর্থনৈতিক যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছেন। এখন যখন ভিয়েতনাম সরকার দ্রুত ‘সাদা পতাকা’ তুলে যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর শুল্ক বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে এবং আলোচনার জন্য সম্মত হয়েছে, তখন ট্রাম্প হয়তো মনে করছেন, তিনি ইতিমধ্যেই জয়ী হয়ে গেছেন।
বর্তমান আসিয়ান চেয়ার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এখনো আসিয়ান জোটের পূর্ণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান উপস্থাপন করতে পারেন এবং এমন কিছু নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে পারেন, যা ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ধাক্কা থেকে সদস্যদেশগুলোকে কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে। এটি আনোয়ারের আসিয়ান চেয়ার হিসেবে গৃহীত সেই উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে তিনি আসিয়ানের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক সংহতি আরও গভীর করার পাশাপাশি উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) এবং অন্য এশীয় অর্থনীতিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছেন।
আনোয়ার মে মাসে যে আসিয়ান সম্মেলন আয়োজন করছেন, সেটি এই লক্ষ্যকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার একটি সুযোগ করে দেবে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নেতারা সম্ভবত বাণিজ্যিক অংশীদারত্বকে বহুমুখীকরণের বিষয়ে আলোচনা করবেন, যা এমন চাপের মুখে থাকা যেকোনো দেশ বা অঞ্চলের জন্য একটি ভালো পদক্ষেপ। তবে তাদের উচিত এই সম্মেলনে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার এবং নিজেদের অর্থনীতিকে আরও সহনশীল করার অন্যান্য উপায় খোঁজা।
আসিয়ান ইতিমধ্যেই তিমুর-লেস্তের সঙ্গে সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। অনেকের মতে, এ দেশটি যদি আসিয়ানে যুক্ত হয়, তাহলে এটি হবে এখন পর্যন্ত জোটের সবচেয়ে দরিদ্র সদস্য। তবে সদস্যপদ পেলে তিমুর-লেস্তে তার অর্থনীতি বৈচিত্র্যময় করতে পারবে এবং নতুন অংশীদারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাবে। এটি একই সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে দেশটির দীর্ঘদিনের বৈরিতা হ্রাস করতে সহায়ক হবে—যা পর্তুগাল থেকে স্বাধীনতার পর ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ইন্দোনেশিয়ার দখলে ছিল।
ট্রাম্পের মতো কোনো ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের দমননীতির মোকাবিলা করতে হলে শক্ত অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা জরুরি। আসিয়ানের সম্প্রসারণ-তিমোর-লেস্তেকে দ্রুত অন্তর্ভুক্ত করা এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আলোচনার সূচনা করা—এই লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে। ট্রাম্প একবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ওভাল অফিসে আলোচনায় বলেছিলেন, ‘তোমার হাতে তেমন কোনো শক্তি নেই।’
কিন্তু আসিয়ানের হাতে শক্তি আছে, বিশেষ করে যদি তারা ঐক্যবদ্ধ থাকে। আর জোট সম্প্রসারিত হলে সেই শক্তি আরও বাড়বে।
● আর এম মনিভান্নান সুপ্রিম গ্লোবাল হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র জন য র ওপর সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
তেহরানের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ
ইরানের রাজধানী তেহরানের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানের সংবাদ সংস্থা ফার্সের বরাতে আল-জাজিরা জানিয়েছে, তেহরানের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি সামরিক ঘাঁটিতে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে। এ ছাড়া তেহরানের পূর্বাঞ্চলেও বিস্ফোরণের খবর প্রকাশ করেছে ইরানি গণমাধ্যম।
এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তেহরানের কিছু অংশে হামলার হুমকি দিয়েছিল। এরপরই এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) তেহরানের একটি বিস্তৃত এলাকার মানুষকে ‘অবিলম্বে এলাকা ছেড়ে যেতে’ সতর্ক করে।
বিবিসি জানায়, আইডিএফের মুখপাত্র আভিচাই আদরায়ি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স–এ দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘আগামী ঘণ্টাগুলোতে আমরা তেহরানের এই এলাকায় অভিযান চালাব—যেমন আগের দিনগুলোতেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে।’
তিনি জানান, ইরানের সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে এই অভিযান চালানো হবে।
পোস্টের সঙ্গে একটি মানচিত্র যুক্ত করে ইসরায়েল জানায়, তেহরানের তৃতীয় জেলায় বসবাসকারীদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সতর্কবার্তায় আরও বলা হয়, ‘আপনার এই এলাকায় অবস্থান আপনার জীবনের জন্য হুমকি।’