চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) দাবির চার বছর পর অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা গৃহকর পেয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের হাতে ১০০ কোটি টাকার চেক তুলে দেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান। এই টাকা নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি নাগরিক সেবা বাড়াতে ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারি ও বেসরকারি হোল্ডিংয়ের (স্থাপনা) কর পুনর্মূল্যায়ন করে চসিক। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের ২০৯টি স্থাপনার বিপরীতে গৃহকর দাঁড়ায় ১৬০ কোটি ১৬ লাখ টাকা, যা আগে ছিল ৪৫ কোটি টাকা। পঞ্চবার্ষিকী পুনর্মূল্যায়নে গৃহকর বেড়ে যাওয়ায় আন্দোলনে নামে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ নামের একটি সংগঠন। আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পুনর্মূল্যায়ন অনুযায়ী গৃহকর আদায় স্থগিত করে দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর সিটি করপোরেশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় মন্ত্রণালয়। ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে পুনর্মূল্যায়ন অনুযায়ী ১৬০ কোটি টাকা দাবি ছিল সিটি করপোরেশনের। তা দিতে নারাজ ছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা আগের ধার্য করা ৪৫ লাখ টাকা আদায় করে আসছিলেন। 

সর্বশেষ চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে এক চিঠিতে চসিক ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৬০ কোটি টাকা গৃহকর পরিশোধের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরকে নির্দেশনা দিতে অনুরোধ করে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন করলে, চট্টগ্রাম বন্দর ১০০ কোটি টাকা গৃহকর পরিশোধ করে। 

চসিকের মেয়র ডা.

শাহাদাত হোসেন বলেন, বর্তমানে নগরবাসীর জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বছরে ৭০ কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এই ১০০ কোটি টাকা পাওয়ার ফলে নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি নাগরিক সেবা বাড়াতে পারবে চসিক। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ, সচিব মো. ওমর ফারুক এবং চসিকের পক্ষে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল ও প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ১০০ ক ট গ হকর প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে

সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।

অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ  ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।

একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের  প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,  মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে  ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘১০০ টাকার’ বাজেটের নতুনত্ব কোথায়
  • পাঁচ বছরে বাড়বে ৬৫ শতাংশ
  • ডিজিটাল খাতে বাজেটের প্রভাব কেমন
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
  • বেসরকারি খাত পিপিপিতে আকৃষ্ট নয়, বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা
  • কমপ্লায়েন্সের অভাবে ধুঁকছে চামড়া খাতের রপ্তানি