Samakal:
2025-08-01@22:26:52 GMT

নীরব জাদুকরের কবিতাগুচ্ছ

Published: 17th, April 2025 GMT

নীরব জাদুকরের কবিতাগুচ্ছ

কিছু কিছু লেখা থাকে, বই থাকে; যার সাথে পাঠক-কথক সম্পর্ক থাকে না। তারা এমন এক প্রচণ্ড তীব্র বোধ নিয়ে সামনে আসে যে পাঠককে উড়িয়ে নিয়ে যায়। কবিতার বই হলে সেই সব শাস্তি ধাক্কার মতো বুকে লাগে। তার পরও বিক্ষত অবস্থা যা পড়ে যেতে হয়। কবির জীবন ও মৃত্যু কবিতার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকে। এটাই বাস্তবতা। সৌভিক করিমের ‘জাদুকর ও ডানার কবিতাগুচ্ছ’ গ্রন্থের সাথে সম্পর্ক আমার। কবি আর কবিতার সীমারেখা টানা কঠিন।

যখন বইয়ের কবিতাগুলো পড়েছি যে কোনো ইচ্ছা করেই এলোমেলোভাবে পড়েছি যেন কবিকে সন্ধান পাই অতর্কিতভাবে, যে কোনো চলে যাওয়া মানুষের ক্ষেত্রে তাই হয় কিন্তু কবিতার বাঁধুনি ও গঠন এমনই যে পরিপাটি পাঠে ফেরত আনে। তখন ভালো লেগেছে সেই শৃঙ্খলা। তাহলে এই কবি শ্রোতাকে নীরবে পাশে ডেকে এনে বসায়, বলে এটাই আমার কথা, এবার শোনা যাক। 

কিন্তু তার নিজের ভেতরও সে একাধিক সত্তা পরিচিতি ধারণ করেছিল মনে হয়। খুব বড় কিছু নয় তবে সে গীতিকার ছিল, কবিও। এটা তো অনেকেরই হয় কিন্তু সৌভিক নিজের প্রচার চায়নি, জীবিত অবস্থায় সেসব খুব একটা ছাপায়নি কোথাও। হয়তো সে বুঝেছিল এসবের যে আলাদা আনন্দ থাকে তা ছাপার অক্ষরে গেলেই অধিক কিছু হয় না। এমন নিরাসক্ত কবি, মানুষ, গীতিকার .

.. হঠাৎ করেই মনে একটা আড়ষ্টতা জেগেছে আমার। কে এই মানুষ, কবি?

“আমি একটা রংধনুর ওপর বসে তোমার/ ‘না’ এর সমান দীর্ঘ হিমবাহের পথে/ পরিবর্তন করতে করতে/ তোমার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।” (প্রেরণা, তুমি আর এসো না) ।
এই অপেক্ষাটা যে অনেক বেদনার, সেটা কবিতায় বোঝা যায় কিন্তু কবি সেই কথাটা বলছেন স্মিত চিত্রকল্প দিয়ে। কিন্তু শেষের লাইনগুলো ইচ্ছা করে ধাক্কা দেয়।
“দেখো, সেই ঠান্ডা মেঝে ফুঁড়ে জেগে উঠছে/ অলস দুপুরের মতো তোমার আগুনচায়া/ দেবদারু ... বাহু”
সকল অনুভূতি যেন জড়ো হয়েছে কবিতার লাইনে লাইনে।

“শহর” কবিতাটি শব্দ প্রয়োগ আর চিত্রকল্প সৃষ্টিতে সফল।
১. “তীক্ষ্ণ চুরির ফলে ফোঁটা ফোঁটা রক্তের মতো লেগে থাকে সূর্যাস্ত
২. এক সংগমহীন শব্দের দেয়ালে দেয়ালে বাড়ি খেয়ে খুলে পড়ে যায় গুঁড়ো গুঁড়ো/ আর তাতে কেটে যায় না কারো নির্লিপ্ত পাপ
৩. আর এইভাবেই টের পায় মানুষ/ রাত্রির ফুসফুস ভরা অন্ধকার, কী অন্ধকার
এই ভাষাভঙ্গিটা রাত্রির বিবরণে খুবই যথাযথ কিন্তু সেটা উপলব্ধি তো কবিই করে, পাঠক জিজ্ঞাসা করে, কীভাবে কবি বলে “আর তাতে জন্ম নেয় মানুষেরা একের পর এক/ বন্ধ্যা বধির স্বপ্নের চিৎকার”    

পড়তে পড়তে লিরিক্যাল কবিতাও পেলাম। বোঝা যায় কবির মন বিবিধ ফর্ম ব্যবহার করতে সক্ষম, যেটা বাংলাদেশের কবিতার ক্ষেত্রে একটি অর্জনও বটে। সাধারণত কবিরা যখন বোঝেন তার কোন দিকে সাফল্য আছে বা কিসে অধিক সফল, একটু ঐদিকে বেশি হাঁটে। সৌভিক একটু ব্যতিক্রমই সেদিক থেকে। হয়তো একটু স্বল্প প্রকাশিত কবি বলে কবিতাই তার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় কোনো বিশেষ ধরনের কবিতা নয়, কাব্যিক অর্জন।
“অভিমান” কবিতাটি সেদিক থেকে উল্লেখযোগ্য। শুরুটাই ধরা যাক:
লাবণ্য, বুড়ো চাষিরা ফসল তুলে ঘরে ফিরেছে/ ক্লান্ত বিক্রেতারাও দোকানের ঝাঁপ ফেলে দিয়েছে/ অফিসের বড় সাহেব থেকে কেরানি, সবার ছুটি হয়ে গেছে।” 
খুব কি বেশি কিছু কবি বলছেন? এমনকি বিবরণটাও নিত্যদিনের অথচ কবিতার বলার ঢং আর মেজাজ ভীষণ টানে। এমন করে সন্ধ্যার, সমাপ্তির, এক ধরনের বিদীর্ণতার বর্ণনা মন ছুঁয়ে যায়।
পড়তে পড়তে কিন্তু এটাও মনে হয় তিনি নাগরিক কবি, শহরের কবি এবং এই বিষয়টি লক্ষণীয়। আমাদের কবিতা শহর আসে একটু অস্বস্তি নিয়ে, একটু বিব্রত হয়ে যেন শহর নগর হবার কারণেই এক ধরনের খেলাপি। কিন্তু এই কবির কবিতায় শহর নগর আসে খুব স্বচ্ছন্দে, খুব স্বাভাবিকভাবে। বোঝা যায় তার সাথে এর যোগাযোগটা সরল, অকৃত্রিম। সেদিক থেকে নগরের মানুষের সাথে তার কবিতার একটা আত্মীয়তা হয়তো একটু বেশি থাকবেই। 

মাঝে মাঝে শত কবিতার মাঝে পাঠক সন্ধান করে একটি বা দুটি কবিতা। যেটি কবির মেধা মনন, কাব্যভাবনা ধারণ করে। এক ধরনের চাতুর্য আছে। v
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বই ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ