কিছু কিছু লেখা থাকে, বই থাকে; যার সাথে পাঠক-কথক সম্পর্ক থাকে না। তারা এমন এক প্রচণ্ড তীব্র বোধ নিয়ে সামনে আসে যে পাঠককে উড়িয়ে নিয়ে যায়। কবিতার বই হলে সেই সব শাস্তি ধাক্কার মতো বুকে লাগে। তার পরও বিক্ষত অবস্থা যা পড়ে যেতে হয়। কবির জীবন ও মৃত্যু কবিতার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকে। এটাই বাস্তবতা। সৌভিক করিমের ‘জাদুকর ও ডানার কবিতাগুচ্ছ’ গ্রন্থের সাথে সম্পর্ক আমার। কবি আর কবিতার সীমারেখা টানা কঠিন।
২
যখন বইয়ের কবিতাগুলো পড়েছি যে কোনো ইচ্ছা করেই এলোমেলোভাবে পড়েছি যেন কবিকে সন্ধান পাই অতর্কিতভাবে, যে কোনো চলে যাওয়া মানুষের ক্ষেত্রে তাই হয় কিন্তু কবিতার বাঁধুনি ও গঠন এমনই যে পরিপাটি পাঠে ফেরত আনে। তখন ভালো লেগেছে সেই শৃঙ্খলা। তাহলে এই কবি শ্রোতাকে নীরবে পাশে ডেকে এনে বসায়, বলে এটাই আমার কথা, এবার শোনা যাক।
৩
কিন্তু তার নিজের ভেতরও সে একাধিক সত্তা পরিচিতি ধারণ করেছিল মনে হয়। খুব বড় কিছু নয় তবে সে গীতিকার ছিল, কবিও। এটা তো অনেকেরই হয় কিন্তু সৌভিক নিজের প্রচার চায়নি, জীবিত অবস্থায় সেসব খুব একটা ছাপায়নি কোথাও। হয়তো সে বুঝেছিল এসবের যে আলাদা আনন্দ থাকে তা ছাপার অক্ষরে গেলেই অধিক কিছু হয় না। এমন নিরাসক্ত কবি, মানুষ, গীতিকার .
৪
“আমি একটা রংধনুর ওপর বসে তোমার/ ‘না’ এর সমান দীর্ঘ হিমবাহের পথে/ পরিবর্তন করতে করতে/ তোমার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।” (প্রেরণা, তুমি আর এসো না) ।
এই অপেক্ষাটা যে অনেক বেদনার, সেটা কবিতায় বোঝা যায় কিন্তু কবি সেই কথাটা বলছেন স্মিত চিত্রকল্প দিয়ে। কিন্তু শেষের লাইনগুলো ইচ্ছা করে ধাক্কা দেয়।
“দেখো, সেই ঠান্ডা মেঝে ফুঁড়ে জেগে উঠছে/ অলস দুপুরের মতো তোমার আগুনচায়া/ দেবদারু ... বাহু”
সকল অনুভূতি যেন জড়ো হয়েছে কবিতার লাইনে লাইনে।
৫
“শহর” কবিতাটি শব্দ প্রয়োগ আর চিত্রকল্প সৃষ্টিতে সফল।
১. “তীক্ষ্ণ চুরির ফলে ফোঁটা ফোঁটা রক্তের মতো লেগে থাকে সূর্যাস্ত
২. এক সংগমহীন শব্দের দেয়ালে দেয়ালে বাড়ি খেয়ে খুলে পড়ে যায় গুঁড়ো গুঁড়ো/ আর তাতে কেটে যায় না কারো নির্লিপ্ত পাপ
৩. আর এইভাবেই টের পায় মানুষ/ রাত্রির ফুসফুস ভরা অন্ধকার, কী অন্ধকার
এই ভাষাভঙ্গিটা রাত্রির বিবরণে খুবই যথাযথ কিন্তু সেটা উপলব্ধি তো কবিই করে, পাঠক জিজ্ঞাসা করে, কীভাবে কবি বলে “আর তাতে জন্ম নেয় মানুষেরা একের পর এক/ বন্ধ্যা বধির স্বপ্নের চিৎকার”
৬
পড়তে পড়তে লিরিক্যাল কবিতাও পেলাম। বোঝা যায় কবির মন বিবিধ ফর্ম ব্যবহার করতে সক্ষম, যেটা বাংলাদেশের কবিতার ক্ষেত্রে একটি অর্জনও বটে। সাধারণত কবিরা যখন বোঝেন তার কোন দিকে সাফল্য আছে বা কিসে অধিক সফল, একটু ঐদিকে বেশি হাঁটে। সৌভিক একটু ব্যতিক্রমই সেদিক থেকে। হয়তো একটু স্বল্প প্রকাশিত কবি বলে কবিতাই তার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় কোনো বিশেষ ধরনের কবিতা নয়, কাব্যিক অর্জন।
“অভিমান” কবিতাটি সেদিক থেকে উল্লেখযোগ্য। শুরুটাই ধরা যাক:
লাবণ্য, বুড়ো চাষিরা ফসল তুলে ঘরে ফিরেছে/ ক্লান্ত বিক্রেতারাও দোকানের ঝাঁপ ফেলে দিয়েছে/ অফিসের বড় সাহেব থেকে কেরানি, সবার ছুটি হয়ে গেছে।”
খুব কি বেশি কিছু কবি বলছেন? এমনকি বিবরণটাও নিত্যদিনের অথচ কবিতার বলার ঢং আর মেজাজ ভীষণ টানে। এমন করে সন্ধ্যার, সমাপ্তির, এক ধরনের বিদীর্ণতার বর্ণনা মন ছুঁয়ে যায়।
পড়তে পড়তে কিন্তু এটাও মনে হয় তিনি নাগরিক কবি, শহরের কবি এবং এই বিষয়টি লক্ষণীয়। আমাদের কবিতা শহর আসে একটু অস্বস্তি নিয়ে, একটু বিব্রত হয়ে যেন শহর নগর হবার কারণেই এক ধরনের খেলাপি। কিন্তু এই কবির কবিতায় শহর নগর আসে খুব স্বচ্ছন্দে, খুব স্বাভাবিকভাবে। বোঝা যায় তার সাথে এর যোগাযোগটা সরল, অকৃত্রিম। সেদিক থেকে নগরের মানুষের সাথে তার কবিতার একটা আত্মীয়তা হয়তো একটু বেশি থাকবেই।
৭
মাঝে মাঝে শত কবিতার মাঝে পাঠক সন্ধান করে একটি বা দুটি কবিতা। যেটি কবির মেধা মনন, কাব্যভাবনা ধারণ করে। এক ধরনের চাতুর্য আছে। v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন
প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।
শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।
আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেনরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।
দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।
২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।
আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।
সূত্র: এনবিসি নিউজ
আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫