Samakal:
2025-11-02@06:25:52 GMT

নীরব জাদুকরের কবিতাগুচ্ছ

Published: 17th, April 2025 GMT

নীরব জাদুকরের কবিতাগুচ্ছ

কিছু কিছু লেখা থাকে, বই থাকে; যার সাথে পাঠক-কথক সম্পর্ক থাকে না। তারা এমন এক প্রচণ্ড তীব্র বোধ নিয়ে সামনে আসে যে পাঠককে উড়িয়ে নিয়ে যায়। কবিতার বই হলে সেই সব শাস্তি ধাক্কার মতো বুকে লাগে। তার পরও বিক্ষত অবস্থা যা পড়ে যেতে হয়। কবির জীবন ও মৃত্যু কবিতার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকে। এটাই বাস্তবতা। সৌভিক করিমের ‘জাদুকর ও ডানার কবিতাগুচ্ছ’ গ্রন্থের সাথে সম্পর্ক আমার। কবি আর কবিতার সীমারেখা টানা কঠিন।

যখন বইয়ের কবিতাগুলো পড়েছি যে কোনো ইচ্ছা করেই এলোমেলোভাবে পড়েছি যেন কবিকে সন্ধান পাই অতর্কিতভাবে, যে কোনো চলে যাওয়া মানুষের ক্ষেত্রে তাই হয় কিন্তু কবিতার বাঁধুনি ও গঠন এমনই যে পরিপাটি পাঠে ফেরত আনে। তখন ভালো লেগেছে সেই শৃঙ্খলা। তাহলে এই কবি শ্রোতাকে নীরবে পাশে ডেকে এনে বসায়, বলে এটাই আমার কথা, এবার শোনা যাক। 

কিন্তু তার নিজের ভেতরও সে একাধিক সত্তা পরিচিতি ধারণ করেছিল মনে হয়। খুব বড় কিছু নয় তবে সে গীতিকার ছিল, কবিও। এটা তো অনেকেরই হয় কিন্তু সৌভিক নিজের প্রচার চায়নি, জীবিত অবস্থায় সেসব খুব একটা ছাপায়নি কোথাও। হয়তো সে বুঝেছিল এসবের যে আলাদা আনন্দ থাকে তা ছাপার অক্ষরে গেলেই অধিক কিছু হয় না। এমন নিরাসক্ত কবি, মানুষ, গীতিকার .

.. হঠাৎ করেই মনে একটা আড়ষ্টতা জেগেছে আমার। কে এই মানুষ, কবি?

“আমি একটা রংধনুর ওপর বসে তোমার/ ‘না’ এর সমান দীর্ঘ হিমবাহের পথে/ পরিবর্তন করতে করতে/ তোমার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।” (প্রেরণা, তুমি আর এসো না) ।
এই অপেক্ষাটা যে অনেক বেদনার, সেটা কবিতায় বোঝা যায় কিন্তু কবি সেই কথাটা বলছেন স্মিত চিত্রকল্প দিয়ে। কিন্তু শেষের লাইনগুলো ইচ্ছা করে ধাক্কা দেয়।
“দেখো, সেই ঠান্ডা মেঝে ফুঁড়ে জেগে উঠছে/ অলস দুপুরের মতো তোমার আগুনচায়া/ দেবদারু ... বাহু”
সকল অনুভূতি যেন জড়ো হয়েছে কবিতার লাইনে লাইনে।

“শহর” কবিতাটি শব্দ প্রয়োগ আর চিত্রকল্প সৃষ্টিতে সফল।
১. “তীক্ষ্ণ চুরির ফলে ফোঁটা ফোঁটা রক্তের মতো লেগে থাকে সূর্যাস্ত
২. এক সংগমহীন শব্দের দেয়ালে দেয়ালে বাড়ি খেয়ে খুলে পড়ে যায় গুঁড়ো গুঁড়ো/ আর তাতে কেটে যায় না কারো নির্লিপ্ত পাপ
৩. আর এইভাবেই টের পায় মানুষ/ রাত্রির ফুসফুস ভরা অন্ধকার, কী অন্ধকার
এই ভাষাভঙ্গিটা রাত্রির বিবরণে খুবই যথাযথ কিন্তু সেটা উপলব্ধি তো কবিই করে, পাঠক জিজ্ঞাসা করে, কীভাবে কবি বলে “আর তাতে জন্ম নেয় মানুষেরা একের পর এক/ বন্ধ্যা বধির স্বপ্নের চিৎকার”    

পড়তে পড়তে লিরিক্যাল কবিতাও পেলাম। বোঝা যায় কবির মন বিবিধ ফর্ম ব্যবহার করতে সক্ষম, যেটা বাংলাদেশের কবিতার ক্ষেত্রে একটি অর্জনও বটে। সাধারণত কবিরা যখন বোঝেন তার কোন দিকে সাফল্য আছে বা কিসে অধিক সফল, একটু ঐদিকে বেশি হাঁটে। সৌভিক একটু ব্যতিক্রমই সেদিক থেকে। হয়তো একটু স্বল্প প্রকাশিত কবি বলে কবিতাই তার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় কোনো বিশেষ ধরনের কবিতা নয়, কাব্যিক অর্জন।
“অভিমান” কবিতাটি সেদিক থেকে উল্লেখযোগ্য। শুরুটাই ধরা যাক:
লাবণ্য, বুড়ো চাষিরা ফসল তুলে ঘরে ফিরেছে/ ক্লান্ত বিক্রেতারাও দোকানের ঝাঁপ ফেলে দিয়েছে/ অফিসের বড় সাহেব থেকে কেরানি, সবার ছুটি হয়ে গেছে।” 
খুব কি বেশি কিছু কবি বলছেন? এমনকি বিবরণটাও নিত্যদিনের অথচ কবিতার বলার ঢং আর মেজাজ ভীষণ টানে। এমন করে সন্ধ্যার, সমাপ্তির, এক ধরনের বিদীর্ণতার বর্ণনা মন ছুঁয়ে যায়।
পড়তে পড়তে কিন্তু এটাও মনে হয় তিনি নাগরিক কবি, শহরের কবি এবং এই বিষয়টি লক্ষণীয়। আমাদের কবিতা শহর আসে একটু অস্বস্তি নিয়ে, একটু বিব্রত হয়ে যেন শহর নগর হবার কারণেই এক ধরনের খেলাপি। কিন্তু এই কবির কবিতায় শহর নগর আসে খুব স্বচ্ছন্দে, খুব স্বাভাবিকভাবে। বোঝা যায় তার সাথে এর যোগাযোগটা সরল, অকৃত্রিম। সেদিক থেকে নগরের মানুষের সাথে তার কবিতার একটা আত্মীয়তা হয়তো একটু বেশি থাকবেই। 

মাঝে মাঝে শত কবিতার মাঝে পাঠক সন্ধান করে একটি বা দুটি কবিতা। যেটি কবির মেধা মনন, কাব্যভাবনা ধারণ করে। এক ধরনের চাতুর্য আছে। v
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বই ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ