সম্প্রতি ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে দেশের সব মসজিদে একই সময় (দুপুর ১টা ৩০ মিনিট) জুমার সালাত আদায়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদিও একই সময়ে জামাত করার ব্যাপারে শরিয়তের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সরকার চাইলে জুমা কেন; সব সালাতের জামাতের জন্য একটি যৌক্তিক সময় নির্ধারণ করে দিতে পারে। একই সময় জামাত করার বিশেষ উপকারিতা হচ্ছে, যাঁর যেখানে ইচ্ছা জামাতে শামিল হতে পারেন। যানবাহনে চলাকালে অনেক সময় পথের মসজিদগুলোর জামাতের সময় জানা না থাকায় জামাত ছুটে যায়। তাই সারাদেশের মসজিদে একই সময়ে নামাজ পড়লে জামাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। তা ছাড়া অধিকাংশ মসজিদে দেখা যায়, মসজিদের কালেকশন অথবা কমিটির লোকজন কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যের কারণে দেড়টারও অনেক পরে জুমার সালাতের জামাত করা হয়, যা নির্ধারিত সময়ে জামাত করার প্রতি সুস্পষ্ট অবহেলা। সুতরাং এমন প্রবণতা রোধে ইসলামী ফাউন্ডেশনের এ প্রস্তাব সঠিক হয়েছে বলে মনে করি। সেই সঙ্গে অন্যান্য সালাতের জামাতের সময়ও নির্ধারণ করে দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, নির্দিষ্ট সময়টি যেন সালাতের আউয়াল ওয়াক্তের মধ্যে থাকে। আউয়াল তথা প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায়ের প্রতি হাদিসে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায় করা (বুখারি মুসলিম)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার সালাত ছাড়া অন্য সব সালাতই প্রথম ওয়াক্তে পড়তেন। তাই আমাদেরও উচিত শুরু ওয়াক্তে সালাত আদায়ের চেষ্টা করা। একটানা সবসময় আউয়াল ওয়াক্তের পর সালাত আদায় করা সালাতের প্রতি অবহেলা প্রমাণ করে। কোনো ইবাদাতের প্রতি অবহেলা থাকলে আল্লাহ তা কবুল করেন না। হাদিসে এসেছে, ‘জেনে রেখো, আল্লাহ অমনোযোগী ও উদাসীন অন্তরের প্রার্থনা কবুল করেন না।’ (তিরমিজি)

কখনও কখনও হয়তো ওজরের কারণে আউয়াল ওয়াক্ত ছুটে যেতে পারে। কিন্তু সবসময়ের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়ে বিলম্বে সালাত আদায় করা মোটেই উচিত নয়। অথচ আমাদের দেশের মসজিদগুলোয় মাগরিব ও এশার সালাত ছাড়া অন্য সব সালাতই বিলম্বে আদায় করা হয়। বর্তমানে জোহরের সালাতের সময় ১২টার আগেই হয়ে যায়। অথচ আমরা ১টা ৩০ মিনিটের জন্য এ সালাতের সময় নির্ধারণ করে নিয়েছি। শীত, গ্রীষ্ম– সব ঋতুতেই আমরা এই একই সময়ে জোহরের সালাত আদায় করি। ফলে কেউ প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায়ের ইচ্ছা থাকলেও জামাতে শামিল হওয়ার স্বার্থে তা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয় না। আসরের সালাতের অবস্থা একই। হাদিস অনুযায়ী এ সময়ে আসরের সালাত শুরু হয় বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে, আর শেষ হয় বলা চলে, যখন আমরা শুরু করি। তাই সারাদেশের মসজিদে একই সঙ্গে সালাত আদায়ের সময় নির্ধারণ করে দিতে হলে প্রথম ওয়াক্তে পড়ার বিষয়টি বিবেচনা জরুরি। অন্যথা এ সিদ্ধান্তের কারণে অনেকে প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায়ের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আদায় করতে পারবেন না। সে জন্য জুমার সালাত সব মসজিদে একই সময়ে আদায়ের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ১টার মধ্যে হলে আউয়াল ওয়াক্তে পড়া যাবে। সে জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন চাইলে সময় নির্ধারণে এ ক্ষেত্রে দেশের বিজ্ঞ আলিমদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই সালাত মুমিনদের ওপর নির্ধারিত সময়ে আদায়ের জন্য ফরজ করা হয়েছে।’ (নিসা: আয়াত ১০৩)। সে জন্য নির্ধারিত সময়েই আদায় করা জরুরি। বিশেষ সওয়াব লাভের সুযোগ যেহেতু আউয়াল ওয়াক্তে রয়েছে, তাও মাথায় রাখা দরকার।

আবু রুফাইদাহ রফিক: সহকারী অধ্যাপক, আরবি, জয়নারায়ণপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: একই সময় জ ম ত কর ত র সময় র মসজ দ র জন য আল ল হ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ 

রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।

জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ 

এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ