এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনার প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিএনপি। এতে যুগপৎ কর্মসূচির শরিকেরা ছাড়াও বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিল, এমন রাজনৈতিক দল, জোট ও সংগঠনগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা থাকবে বলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র থেকে জানা গেছে।

এই উদ্যোগের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। তারই অংশ হিসেবে আজ শনিবার বিকেলে ১২–দলীয় জোট ও সন্ধ্যায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে বসছে বিএনপি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মতবিনিময় শেষে দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনতে বিএনপির এই উদ্যোগে জামায়াতে ইসলামী ও গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থাকছে কি না, তা পরিষ্কার নয়। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে দলটির কেউ কিছু বলছেন না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে এখনই বসার সিদ্ধান্ত নেই।

এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির চারজন নেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেছেন, বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছে, এমন রাজনৈতিক সব দলের সঙ্গেই তাঁরা পর্যায়ক্রমে আলোচনা করবেন।

সুনির্দিষ্ট করে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে আলোচনা হবে কি না, জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে এখনই বসার সিদ্ধান্ত নেই।

তবে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনতে বিএনপির এই উদ্যোগে জামায়াতে ইসলামী ও গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থাকছে কি না, তা পরিষ্কার নয়।

আরেকজন বলেছেন, আলোচনা থেকে কাউকে বাদ দেওয়ার কথা আসেনি। এ ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের চিন্তা রয়েছে।

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, ‘এনসিপির সঙ্গে আমরা কথা বলব কি না, দেখতে হবে। কারণ, তাদের দুজন সরকারে আছে। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে কথা বলা ঠিক হবে কি না, ভাবতে হবে।’ স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আরও পড়ুনআমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই: মির্জা ফখরুল১৬ এপ্রিল ২০২৫

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, তারা ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায়। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি করে সরকারের ওপর জোরালো চাপ তৈরি করতে চাইছে বিএনপি। সে জন্য বিভিন্ন দলের সঙ্গে মতবিনিময় শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও এর আগে থেকেই বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে মতবিনিময় করে আসছেন। এখন নতুন করে দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, ১৬ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন, যা বিএনপি মেনে নেয়নি। যে কারণে বৈঠকের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে একেবারেই সন্তুষ্ট নন। তাঁদের ‘কাটঅফ টাইম’ ডিসেম্বর।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাসচিব তো বলেই দিয়েছেন, আমরা সন্তুষ্ট নই। এখন আমরা কী করব, শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করব।’

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন, যা বিএনপি মেনে নেয়নি। যে কারণে বৈঠকের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে একেবারেই সন্তুষ্ট নন। তাঁদের ‘কাটঅফ টাইম’ ডিসেম্বর।

স্থায়ী কমিটির বৈঠক–সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের দিক থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা দু-এক মাস পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ আসে। কারণ, এখনই সরকারের বিরুদ্ধে মাঠের কর্মসূচি শুরু বা বড় আন্দোলনে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারণী নেতাদের কেউ কেউ। ফলে সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সরকারকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথাও এসেছে।

আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের বাইরেও যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিল, তাদের সঙ্গেও কথা বলব।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

ওই একই সূত্র জানিয়েছে, স্থায়ী কমিটির আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর প্রসঙ্গও এসেছে। জামায়াতের আমির আগামী বছরের রোজার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকে নেতিবাচকভাবে নিচ্ছেন না বিএনপির নেতারা। তাঁদের যুক্তি, জামায়াত যদি এ জায়গায় স্থির থাকে, তাতে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে এক-দেড় মাস পেছালে খুব একটা আপত্তি থাকবে না। তবে সেটা অবশ্যই জুনে নয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের কী আলোচনা হয়েছে, বিষয়গুলো আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে শেয়ার করব। এরপর সবার মতামত নিয়ে আমরা করণীয় ঠিক করব। আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের বাইরেও যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিল, তাদের সঙ্গেও কথা বলব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স থ য় সরক র র বল ছ ন কম ট র সদস য ইসল ম বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ ১১ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ও এবি পার্টির ঐকমত্য

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনপদ্ধতি চালুসহ ১১টি বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে এবি পার্টি। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে দল দুটি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও এবি পার্টির মধ্যে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। আজ বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলে সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করার পরিবেশ তৈরি হবে। সম্প্রতি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা ধর্মবিরোধী, ইসলামবিরোধী ও দেশবিরোধী। কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাতিল করতে হবে। এ বিষয়ে এবি পার্টিও একমত।

বৈঠক সম্পর্কে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, তাঁরা এই বৈঠকের মাধ্যমে দেশবাসীকে বার্তা দিতে চান, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। বাংলাদেশকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বানানো পর্যন্ত এই ঐক্য টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।

দুই দলের বৈঠকে আরও যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত স্বাধীন–সার্বভৌম টেকসই কল্যাণকর বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা; দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা; ভোটাধিকারসহ সব নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করে নিয়ে আসা; আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে দেশ পুনর্গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা; আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে আঘাত করে কথা না বলা এবং প্রশাসনে এখনো বিদ্যমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত অপসারণ করা; আগামীতে যাতে আওয়ামী লীগের মতো আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা; দেশের স্থায়ী শান্তি ও মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে সংবিধানে বিদ্যমান শরিয়াহবিরোধী আইন বাতিল এবং ইসলামসহ সব ধর্মের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য পরিহার করা, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কোনো কথা বা বক্তব্য না দেওয়া।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতেয়াজ আলম, মাওলানা সৈয়দ এসহাক মু. আবুল খায়ের ও মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ুম।

অপর দিকে এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম ও বি এস নাজমুল হক, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যোবায়ের আহমেদ ভূইয়া, আবদুল্লাহ আল মামুন, আনোয়ার সাদাত, এ বি এম খালিদ হাসান, শ্যাডো অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি আব্বাস ইসলাম খান, সংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) গাজী নাসির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ ১১ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ও এবি পার্টির ঐকমত্য
  • চলছে বৈঠকের রাজনীতি
  • বৈঠকে আওয়ামী লীগের বিচার ও মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে একমত এনসিপি ও গণসংহতি আন্দোলন
  • কানাডার প্রধানমন্ত্রী কার্নিকে অভিনন্দন জানালেন ট্রাম্প
  • জাতীয় স্বার্থে আমরা কি একমত হতে পারি না
  • গণভোটে সংস্কার চায় নুরের গণঅধিকার
  • সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ২৩ করার প্রস্তাব গণ অধিকার পরিষদের