অভিনয়শিল্পী সংঘের নির্বাচন, শিল্পকলায় তারকাদের মিলনমেলা
Published: 19th, April 2025 GMT
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শনিবার দিনভর বসেছিল তারার মেলা। অভিনয়শিল্পীদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল পরিবেশ। উপলক্ষ– টেলিভিশন নাটকের অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘের নির্বাচন। নির্বাচনের জন্য বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। মাঝে কিছুটা সময় ছিল বিরতি।
ত্রিবার্ষিক এই নির্বাচনে ২১টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন ৪০ জন প্রার্থী। ভোটারসংখ্যা ৬৯৯। নবীন ও খ্যাতিমান অভিনয়শিল্পীদের পাশাপাশি সংবাদকর্মী ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই এসেছিলেন নির্বাচন দেখতে।
সবার মাঝেই কৌতূহল; কে জিতবেন কে হারবেন– তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার যেন শেষ ছিল না। ভোট দিয়ে দায়িত্ব শেষ, এমন মানসিকতা ছিল না কারও মধ্যে। বরং ভোট দেওয়ার পর দল বেঁধে শিল্পীদের আড্ডা দেওয়া ও গল্পের আসর বসাতে দেখা গেছে। এবারের নির্বাচনে ফল যা-ই হোক, ভোটার আর প্রার্থীর মিলনমেলা স্মরণীয় হয়ে থাকবে– এমন কথাও শোনা গেছে অনেকের মুখে।
দুপুরের পরই ভোটারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ভোট দিতে আসা তারকা অভিনেতা মোশাররফ করিম বলেন, ‘এবারেরর নির্বাচনের পরিবেশটা একটু অন্যরকম। প্রতিবারের চেয়ে আলাদা। আমরা যারা অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত, তাদের একটি বিশেষ দিন আজ। এখানে অনেকেই আমার খুব প্রিয়। কাকে রেখে কাকে ভোট দেব– ভাবনায় পড়ে যাই।’
অভিনয়শিল্পী সংঘ একটি জায়গায় পৌঁছেছে। আগামীতে আরও উন্নত জায়গায় পৌঁছুক– এটিই তিনি চাইছিলেন। এই নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন অভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রয়েছেন নরেশ ভূঁইয়া ও ফারুক আহমেদ।
নরেশ ভূঁইয়া বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ অনেক সুন্দর ছিল, প্রার্থীরা সবাই বলছেন নির্বাচন একটি প্রক্রিয়া, এটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়। সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে আনন্দ নিয়ে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন।’
এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়েছেন অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম ও আবদুল্লাহ রানা। সহসভাপতি প্রার্থী ছয়জন। সাধারণ সম্পাদক পদে লড়েছেন অভিনেতা শাহেদ শরীফ খান ও অভিনেতা রাশেদ মামুন অপু।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন পাঁচজন। অর্থ সম্পাদক ও দপ্তর সম্পাদক পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন যথাক্রমে নূর এ আলম নয়ন ও তানভীর মাসুদ।
অনুষ্ঠান সম্পাদক পদে লড়েছেন তিনজন। আইন ও কল্যাণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন দু’জন। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে দু’জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন তিনজন।
কার্যনির্বাহী পরিষদের সাতটি সদস্য পদের জন্য প্রার্থী হয়েছেন ১১ জন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত [সন্ধ্যা ৭টা] ভোট গণনা চলছিল।
অভিনয়শিল্পী সংঘের বর্তমান সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম ও সম্পাদক রওনক হাসান এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম লনম ল হয় ছ ন পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।