Risingbd:
2025-07-31@07:17:56 GMT

হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা

Published: 19th, April 2025 GMT

হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা

হবিগঞ্জ জেলার হাওর, বিল ও নদীসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ে কমেছে মাছের পরিমাণ। আগে হাওরে ১৫০ প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও এখন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির। এ কারণে কমে গেছে শুঁটকির উৎপাদন। ফলে শুঁটকি পল্লীগুলোতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এ পেশার সঙ্গে জড়িতরা।

জেলার আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই, বাহুবল, হবিগঞ্জ সদর ও নবীগঞ্জ উপজেলার ৫ শতাধিক পরিবার শুঁটকি উৎপাদনের পেশায় এখনো জড়িত। পেশা টিকিয়ে রাখতে তারা সরকারি সহায়তা চেয়েছেন। হাওর এলাকার বাঘহাতা, গাজীপুর, শান্তিপুর, ভাটিপাড়া, সুনারু, নাগুরা, নোয়াগাঁও, নোয়াগড়, বিরাট, কোদালিয়া, বদলপুর, উমেদনগরসহ বিভিন্নস্থানে রয়েছে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের অসংখ্য  মাচা।

মাচায় দেশি প্রজাতির পুঁটি, চিংড়ি, কাকিয়া, শইল, গজার, টাকি, বাইম, আইড়, মলা, টেংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতি মাছের শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত শুঁটকি প্রতি মণ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আড়তদাররা ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করছেন শুঁটকি। খুচরা বাজারে শুঁটকি প্রতিকেজি ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।    

আরো পড়ুন:

কিশোরগঞ্জের হাওরে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়

হাওরে কাঁচা মরিচ চাষে লোকসানের মুখে চাষিরা

জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, গত অর্থবছরে হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৪০ টন, বানিয়াচংয়ে ৫৭৫ টন, নবীগঞ্জে ২৭ টন, বাহুবলে ২১২ টন, লাখাইয়ে ২৩১ টন এবং আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ৩৪২ টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল। যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ মৌসুমে আরো কম উৎপাদন হয়েছে শুঁটকি। 

মাধবী রানী নামে এক শুঁটকি উৎপাদনকারী বলেন, “বাজার থেকে অনেক বেশি দাম দিয়ে শইল, বাইম, পুটি, টেংরাসহ নানা প্রজাতির মাছ কিনে এনে শুঁটকি তৈরি করা হয়। হাওর, বিল ও নদীতে পানি কমে যাওয়ায় চাহিদামতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদা সম্পন্ন মাছের দামও অনেক বেশি। আগে জেলা শহরের উমেদনগরে মাসে আটটি পাইকারি শুঁটকির হাট বসত, এখন বসছে মাত্র চারটি।”

পারুল রানী দাশ নামে অপর একজন বলেন, “ভোর ৬টা থেকে শুরু হয় শুঁটকি তৈরির কাজ। প্রতিদিন ৫ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। মাসে ১০ হাজার টাকা মজুরি পাওয়া যায়। বর্তমানে শুঁটকির উৎপাদন কমে যাওয়ায় এ পেশায় কাজ করে খাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য অন্য পেশায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

সরেজমিন উমেদনগর হাটে গিয়ে দেয়া যায়, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ক্রেতারা শুঁটকি কিনতে এসেছেন। চাহিদা অনুযায়ী শুঁটকি না পাওয়ায় হতাশ হয়েছেন তারা।

সিরাজগঞ্জ থেকে পাইকারি দামে শুঁটকি কিনতে আসা ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান জানান, আগে তিনি প্রতিমাসে ৭ থেকে ৮ বার হবিগঞ্জে আসতেন শুঁটকি কিনতে। এখন মাসে দুই থেকে তিনবার আসেন। দাম বেড়ে যাওয়া এবং চাহিদামতো শুঁটকি না পাওয়ায় হবিগঞ্জে কম আসেন বলেও জানান তিনি। 

উমেদনগর হাটে শুঁটকির আড়তদার কামরুল ইসলাম বলেন, “আগে এই হাটে নানা রকমের শুঁটকি বিক্রি হত। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা আসতেন শুঁটকি কিনতে। হবিগঞ্জে উৎপাদিত শুঁটকির কদর আলাদা। বর্তমানে হাওর, বিল ও নদীতে মাছ কমায় শুঁটকির উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।”

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, “এ জেলায় অনেক নদী, বিল, হাওরসহ বিস্তীর্ণ জলাশয় রয়েছে। নানা শিল্প প্রতিষ্ঠানের দূষিত কালো পানি প্রাকৃতিক জলাশয়ে প্রবেশ করছে। জমিতে অধিক পরিমাণে কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে বর্তমানে প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের পরিমাণ কমেছে। তার সঙ্গে কমেছে শুঁটকি উৎপাদন।” 

তিনি আরো বলেন, “এখনই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে, না হলে প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে পর্যায়ক্রমে দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাবে। বন্ধ হয়ে যাবে শুঁটকি উৎপাদনও।”  

হবিগঞ্জ জেলা মৎস কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার বলেন, “দিন দিন হবিগঞ্জে শুঁটকির উৎপাদন কমে যাচ্ছে। অনেকে এই পেশার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। আমরা মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য হাওরে নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছি, বিশেষ করে পোনা মাছ সংরক্ষণের জন্য। যদি পোনা মাছ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়, তাহলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।” 

তিনি আরো বলেন, “চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জালের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। দেশি মাছ রক্ষা পেলে শুঁটকির উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।”

ঢাকা/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ ওর

এছাড়াও পড়ুন:

উপদেষ্টা আসিফের সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

কুমিল্লার মুরাদনগর স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় আসিফ মাহমুদের পক্ষের ১০ থেকে ১৫ জন সমর্থক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ইউপি সদস্য রয়েছেন। 

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে উপজেলা সদরের আল্লাহ চত্বরে ঘটনাটি ঘটে। 

এলাকাবাসী জানান, বুধবার বিকেলে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সদরের আল্লাহ চত্বরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জড়ো হন।  সমাবেশ লক্ষ্য করে পার্শ্ববর্তী জেলা পরিষদের মার্কেট থেকে কয়েকটি ইট, পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ১০ থেকে ১৫ জন সমর্থক আহত হন, তাদের মধ্যে একজন ইউপি সদস্যও রয়েছেন।

আরো পড়ুন:

কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবে বিএনপির অভিযোগ বক্স, যা পাওয়া গেল

সরকারের একটি অংশ অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে: তারেক রহমান

মিছিল নিয়ে আসা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মিনাজুল হক বলেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপির লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। মিছিল নিয়ে আসার পর শত শত ইটপাটকেল ছুড়ে আমাদের ধাওয়া দিতে থাকে। আমাদের অনেক সমর্থক আহত হন।”

হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিএনপির মুরাদনগর উপজেলার আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন বলেন, “তারা হামলা করার পর আমাদের ছেলেরা প্রতিরোধ করেছে।”

কুমিল্লার মুরাদনগর থানার তদন্ত কর্মকর্তা আমিন কাদের খান জানান, আজ মুরাদনগর সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ চলছিল। এ সময় পাশে অবস্থান করা কিছু লোক বিনা উসকানিতে তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপরে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাজ করে। 

ঢাকা/রুবেল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উপদেষ্টা আসিফের সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
  • মুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত ৩৫
  • বন্দরে ডেভিল হান্ট অভিযানে ছাত্রলীগ নেতা আয়াত গ্রেপ্তার  
  • মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে হত্যায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার, পরিবার বলছে ষড়যন্ত্র
  • কুমিল্লায় ট্রিপল মার্ডার মামলায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার