গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পরও গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে তারা পঞ্চাশ হাজারের বেশি লোক হত্যা করেছে। হত্যাযজ্ঞের শুরু থেকে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন থেকে মানবিক সহায়তাকে তারা প্রধান হাতিয়ারে পরিণত করেছে। ইসরায়েলি সরকার খাবার সরবরাহের সব ধরনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর তৎকালীন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপের নির্দেশ দেন। তিনি ঘোষণায় বলেছিলেন, ‘বিদ্যুৎ থাকবে না, খাবার থাকবে না, জ্বালানি থাকবে না। সবকিছু বন্ধ থাকবে।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মানুষরূপী পশুদের সঙ্গে লড়াই করছি এবং সেটি ভেবেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।’ ইয়োভ গ্যালান্টের এমন মন্তব্য থেকে ইসরায়েলিদের হত্যাযজ্ঞের মাত্রা সহজে বোঝা যায়। 
অবশ্য ‘মানুষরূপী প্রাণী’ শুধু ইহুদিপন্থিদের মন এবং তাদের ভুয়া নিরাপত্তাসংক্রান্ত ভাষ্যেই খুঁজে পাওয়া যায়। বাস্তবতা হলো, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের জীবনসংশ্লিষ্ট সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গাজায় আকাশপথে তাদের বোমা বর্ষণের পরিপূরক হিসেবে ফিলিস্তিনবাসীকে অনাহারে রাখার চেয়ে ভয়াবহ আর কোনো উপায় ছিল না। গাজায় সব দিক থেকে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গতকাল ঘোষণা করেছেন, ‘বেসামরিক কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো মানবিক সাহায্য গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। গাজায় অবশিষ্ট ফিলিস্তিনিরা কোনো এক পর্যায়ে মানবিক সহায়তা পেতে পারে– এই ঘোষণার পর অতি ডানপন্থি জোট সরকারের অন্যান্য ইসরায়েলি কর্মকর্তা এর বিরোধিতা করেছেন।
‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের জিম্মিরা সুড়ঙ্গের ভেতরে মারা যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত গাজায় এক গ্রাম খাবার বা সাহায্য প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই।’ মন্তব্যটি করেছেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাভির। তাঁর বক্তব্যে এ সত্য স্বীকার করা হয়নি যে, গণহত্যাকারী রাষ্ট্রের নিরবচ্ছিন্ন বোমা বর্ষণে ইসরায়েলি জিম্মিদের নিহত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। সংস্কৃতিমন্ত্রী মিকি জোহরও কোনো রকম মানবিক সহায়তা প্রদানের বিরোধিতা করেছেন। তিনি এও বলেছেন, ‘আমাদের অবশিষ্ট জিম্মি ভাইবোন নিরাপদে বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের জন্য কেবল নরক।’ গণহত্যা কাউকে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে দেয় না, তাই জোহর যে বার্তা দিয়েছেন তা হবে অন্তহীন। এতে এটি স্পষ্ট, ইসরায়েল সরকার যে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, তা অচিরে সমাপ্তি ঘটছে না। 

জোহরের বক্তব্য স্পষ্ট করে কাটজ বলেন, ‘ইসরায়েলের নীতি স্পষ্ট এবং গাজায় কোনো মানবিক সাহায্য প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বর্তমান বাস্তবতায় কেউ গাজায় কোনো মানবিক সাহায্য আনবে না এবং কেউই এ ধরনের কোনো সাহায্য আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে না।’ তারা দুর্ভিক্ষ মাথায় রেখে এসব কথা বলছেন না। অন্যদিকে বেসামরিক কোম্পানি ও মানবিক সহায়তার ব্যাপারে কাটজের বক্তব্য শুধু ইঙ্গিত দেয় যে, আমলাতন্ত্র মানবিক সাহায্য না দিয়ে নিপীড়ন ও বঞ্চনা আরও বাড়িয়ে দেবে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, ফিলিস্তিনিরা হয় ক্ষুধার্ত থাকবে, অথবা ক্ষুধার্ত আমলাতন্ত্রের হাতে মারা যাবে, যদি তারা ইতোমধ্যে বোমা হামলায় নিহত না হয়। সুতরাং এটাই স্পষ্ট, পুরো ইসরায়েলি প্রশাসন গাজায় ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করতে মানবিক সহায়তাকে অনাহারে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। 

কাটজ হয়তো অনাহারে রাখাকে ইসরায়েলি নীতি হিসেবে তুলে ধরতে পারেন। কিন্তু এটি এই সত্যকেও নির্দেশ করে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে অনাহারকে ব্যবহার করাটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। মানবিক সহায়তার জন্য লাখ লাখ প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ইসরায়েল মানবিক সহায়তাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা বেশ কিছুদিন ধরে মানবিক সহয়তার এই মৌলিক সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এমনিতে মানবিক সহায়তা দেয় না, বরং অনাহারের মাধ্যমে গণহত্যা বন্ধ করার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার চেয়েও তারা বেশি ভঙ্গি ও নিয়মিত বিবৃতি দিয়ে ভান করে। অবশ্য রাজনীতিবিদরা আমাদের মানবিক সহায়তা প্রদানের ব্যাপারটি রাজনীতিকীকরণ করে থাকেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, বর্তমান মানবিকতার ধারণাগুলো আসলে ইসরায়েলের অনাহার নীতি সমর্থন করে যাচ্ছে। 

রামোনা ওয়াদি: স্বাধীন গবেষক ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক; মিডল ইস্ট মনিটর থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল গণহত য অন হ র কর ছ ন মন ত র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

কমেছে সবজির দাম

বাজারে সবজির দাম কমলেও সাধারণ সময়ের মতো ক্রেতাদের সমাগম দেখা যায়নি। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের ছুটি কাটিয়ে এখনো রাজধানীতে সব মানুষ ফিরেনি।

শুক্রবার (১৩ জুন) রাজধানীর নিউমার্কেট, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে অধিকাংশ সবজির দাম কমেছে। তবে মাছের দাম সামান্য বেড়েছে। এখন বাজারে বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, গাজর (দেশি) ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, প্রতিটি পিস লাউ ৫০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০, দেশি শশা ৫০ টাকা, বরবটি ৬০, ঢেড়শ ৪০, জালি কুমড়া ৫০ টাকা পিস, মিষ্টি কুমড়া কেজি ২৫ টাকা, পটল ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় সামান্য বেড়েছে মাছের দাম। এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়।চাষের পাঙাস কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ টাকা, কৈ ২২০ টাকা, শিং ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৫০০ থেকে ৬০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

ঈদুল আজহায় দেশে ৯১ লাখ পশু কোরবানি

ঢাকা দক্ষিণে বর্জ্য সরানোর কাজ শেষ, ৩১ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ

ব্রয়লার মুরগির দাম স্বাভাবিক রয়েছে।এখন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১১৫০টাকা কেজি দরে। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়।

এদিকে, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, রসুন ১৮০ ও দেশি আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর সালেক গার্ডেন কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী ফরিদা আক্তার রাইজিংবিডিকে বলেন, “বাজারে এখন সবজির দাম কম। চাহিদামতো নিতে পারছি।”

রাজধানীর নিউমার্কেটর সবজি বিক্রেতা আশরাফুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “বাজারে সবজির সরবরাহ ভালো। দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। তবে আজ বাজারে ক্রেতাদের সমাগম কম। কারণ এখন অনেক মানুষ ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় আসেনি।এই সময় আমাদের অনেক বিক্রি হতো কিন্তু আজকে এখন পর্যন্ত বেশি বিক্রি করতে পারিনি।”

ঢাকা/রায়হান/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
  • ইরান–ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা রূপ নিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • ইরানে হামলার আগে গোপনে ইসরায়েলে হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
  • তেহরানে ইসরায়েলের বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
  • ভারত থেকে আইফোন রপ্তানি কেন বাড়ছে
  • সুনামগঞ্জে তাজা গ্রেনেড উদ্ধারের পর নিষ্ক্রিয় করল সেনাবাহিনী
  • কমেছে সবজির দাম
  • চার শতাধিক লেখক গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৫ হাজার ছাড়াল