গাজাবাসীর অনাহার যখন ইসরায়েলের হাতিয়ার
Published: 19th, April 2025 GMT
গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পরও গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে তারা পঞ্চাশ হাজারের বেশি লোক হত্যা করেছে। হত্যাযজ্ঞের শুরু থেকে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন থেকে মানবিক সহায়তাকে তারা প্রধান হাতিয়ারে পরিণত করেছে। ইসরায়েলি সরকার খাবার সরবরাহের সব ধরনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর তৎকালীন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপের নির্দেশ দেন। তিনি ঘোষণায় বলেছিলেন, ‘বিদ্যুৎ থাকবে না, খাবার থাকবে না, জ্বালানি থাকবে না। সবকিছু বন্ধ থাকবে।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মানুষরূপী পশুদের সঙ্গে লড়াই করছি এবং সেটি ভেবেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।’ ইয়োভ গ্যালান্টের এমন মন্তব্য থেকে ইসরায়েলিদের হত্যাযজ্ঞের মাত্রা সহজে বোঝা যায়।
অবশ্য ‘মানুষরূপী প্রাণী’ শুধু ইহুদিপন্থিদের মন এবং তাদের ভুয়া নিরাপত্তাসংক্রান্ত ভাষ্যেই খুঁজে পাওয়া যায়। বাস্তবতা হলো, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের জীবনসংশ্লিষ্ট সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গাজায় আকাশপথে তাদের বোমা বর্ষণের পরিপূরক হিসেবে ফিলিস্তিনবাসীকে অনাহারে রাখার চেয়ে ভয়াবহ আর কোনো উপায় ছিল না। গাজায় সব দিক থেকে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গতকাল ঘোষণা করেছেন, ‘বেসামরিক কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো মানবিক সাহায্য গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। গাজায় অবশিষ্ট ফিলিস্তিনিরা কোনো এক পর্যায়ে মানবিক সহায়তা পেতে পারে– এই ঘোষণার পর অতি ডানপন্থি জোট সরকারের অন্যান্য ইসরায়েলি কর্মকর্তা এর বিরোধিতা করেছেন।
‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের জিম্মিরা সুড়ঙ্গের ভেতরে মারা যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত গাজায় এক গ্রাম খাবার বা সাহায্য প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই।’ মন্তব্যটি করেছেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাভির। তাঁর বক্তব্যে এ সত্য স্বীকার করা হয়নি যে, গণহত্যাকারী রাষ্ট্রের নিরবচ্ছিন্ন বোমা বর্ষণে ইসরায়েলি জিম্মিদের নিহত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। সংস্কৃতিমন্ত্রী মিকি জোহরও কোনো রকম মানবিক সহায়তা প্রদানের বিরোধিতা করেছেন। তিনি এও বলেছেন, ‘আমাদের অবশিষ্ট জিম্মি ভাইবোন নিরাপদে বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের জন্য কেবল নরক।’ গণহত্যা কাউকে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে দেয় না, তাই জোহর যে বার্তা দিয়েছেন তা হবে অন্তহীন। এতে এটি স্পষ্ট, ইসরায়েল সরকার যে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, তা অচিরে সমাপ্তি ঘটছে না।
জোহরের বক্তব্য স্পষ্ট করে কাটজ বলেন, ‘ইসরায়েলের নীতি স্পষ্ট এবং গাজায় কোনো মানবিক সাহায্য প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বর্তমান বাস্তবতায় কেউ গাজায় কোনো মানবিক সাহায্য আনবে না এবং কেউই এ ধরনের কোনো সাহায্য আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে না।’ তারা দুর্ভিক্ষ মাথায় রেখে এসব কথা বলছেন না। অন্যদিকে বেসামরিক কোম্পানি ও মানবিক সহায়তার ব্যাপারে কাটজের বক্তব্য শুধু ইঙ্গিত দেয় যে, আমলাতন্ত্র মানবিক সাহায্য না দিয়ে নিপীড়ন ও বঞ্চনা আরও বাড়িয়ে দেবে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, ফিলিস্তিনিরা হয় ক্ষুধার্ত থাকবে, অথবা ক্ষুধার্ত আমলাতন্ত্রের হাতে মারা যাবে, যদি তারা ইতোমধ্যে বোমা হামলায় নিহত না হয়। সুতরাং এটাই স্পষ্ট, পুরো ইসরায়েলি প্রশাসন গাজায় ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করতে মানবিক সহায়তাকে অনাহারে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
কাটজ হয়তো অনাহারে রাখাকে ইসরায়েলি নীতি হিসেবে তুলে ধরতে পারেন। কিন্তু এটি এই সত্যকেও নির্দেশ করে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে অনাহারকে ব্যবহার করাটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। মানবিক সহায়তার জন্য লাখ লাখ প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ইসরায়েল মানবিক সহায়তাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা বেশ কিছুদিন ধরে মানবিক সহয়তার এই মৌলিক সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এমনিতে মানবিক সহায়তা দেয় না, বরং অনাহারের মাধ্যমে গণহত্যা বন্ধ করার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার চেয়েও তারা বেশি ভঙ্গি ও নিয়মিত বিবৃতি দিয়ে ভান করে। অবশ্য রাজনীতিবিদরা আমাদের মানবিক সহায়তা প্রদানের ব্যাপারটি রাজনীতিকীকরণ করে থাকেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, বর্তমান মানবিকতার ধারণাগুলো আসলে ইসরায়েলের অনাহার নীতি সমর্থন করে যাচ্ছে।
রামোনা ওয়াদি: স্বাধীন গবেষক ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক; মিডল ইস্ট মনিটর থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল গণহত য অন হ র কর ছ ন মন ত র ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
২ মে ঢাকায় এনসিপির বিক্ষোভ, প্রচারপত্রে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ৭ অপরাধ
‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে’ আগামী ২ মে (শুক্রবার) রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করবে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রাজধানীর গুলিস্তানে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এই সমাবেশ হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগে গঠিত দল এনসিপি।
সমাবেশ উপলক্ষে তৈরি করা প্রচারপত্রে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলের সাতটি অপরাধের কথা উল্লেখ করেছে এনসিপি। এগুলো হলো ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহ দমনের নামে ৫৭ সেনা কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ড; গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহরণ; ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তিনটি অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণ; ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে চালানো হত্যাযজ্ঞ; লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি, লুটপাট ও পাচার; ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদিবিরোধী আন্দোলনে চালানো হত্যাকাণ্ড এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় চালানো নজিরবিহীন গণহত্যা।
এরপর চারটি দাবিও উল্লেখ করা হয়েছে প্রচারপত্রে। এগুলো হলো প্রতিটি অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ট্রাইব্যুনাল বা কমিশন গঠন করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচারের ব্যবস্থা; আগামী নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ প্রশ্নের মীমাংসা তথা আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল; বিচার চলাকালে আওয়ামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখা এবং ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও তাঁদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা।
দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, সমাবেশে প্রায় ২০ হাজার মানুষের জমায়েত হতে পারে। এই সমাবেশে এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
দলগতভাবে আওয়ামী লীগের বিচার, দলটির নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে গত ২১ এপ্রিল থেকে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মশালমিছিল করছে এনসিপি। এর ধারাবাহিকতায় এবার কিছুটা বড় পরিসরে ঢাকা মহানগর শাখার ব্যানারে সমাবেশ হতে যাচ্ছে।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা মহানগরের থানা পর্যায়ে কিছুদিন ধরে এনসিপির যে কর্মসূচিগুলো হচ্ছে, এগুলোরই চূড়ান্ত সমাবেশটা হবে আগামী ২ মে।