এটি কেবলই ভিন্নমত, ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর মধ্যে ‘অনৈক্য’ নিয়ে নাহিদ
Published: 20th, April 2025 GMT
‘বাংলাদেশে এখন গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে এবং যে যার মত প্রকাশ করতে পারছে। এটা কেবলই ভিন্নমত।’—ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দলগুলোর মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতাদের সঙ্গে এনসিপির নেতাদের বৈঠক শেষে আজ রোববার বিকেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন তিনি। রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে খেলাফত মজলিসের কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়।
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, জুলাইয়ের আন্দোলনে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে দলগুলো ছিল, তাদের মধ্যে ফাটল দেখা দিচ্ছে। একে অপরকে বিষোদ্গার করছে। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের কারণে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে আপনারা কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না।
জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এখন যে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো বাংলাদেশে রাজনীতি করছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবশ্যই বিভিন্ন মত থাকবে। আমরা মনে করছি, এখন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে এবং যে যার মত প্রকাশ করতে পারছে। এটি কেবলই ভিন্নমত। আমরা মনে করি না, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন কোনো অনৈক্য তৈরি হয়েছে, যার সুযোগ আসলে ফ্যাসিবাদী শক্তি নিতে পারে।’
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ আছেন, দাবি করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, তারই অংশ হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁদের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজনে যদি মাঠের কর্মসূচিও প্রয়োজন হয়, আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যৌথ বা যুগপৎ মাঠের কর্মসূচি নেওয়ার উদ্যোগ নেব। কোনোভাবেই আমরা বাংলাদেশকে, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে প্রবেশের সুযোগ দেব না, এ বিষয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ব্যক্তিদের বিচার চাইছেন নাকি দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরও বিচার চাইছেন এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ব্যক্তিদের বিচার তো অবশ্যই হবে। সরকার এখনো দলগতভাবে বিচারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমরা মনে করি, দলগতভাবে বিচার হওয়া উচিত। জুলাই গণহত্যা আসলে রাজনৈতিক একটি হত্যাযজ্ঞ। দলগতভাবেই আওয়ামী লীগ এই হত্যাযজ্ঞের নেতৃত্ব দিয়েছে এবং অংশগ্রহণ করেছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা এখন জুলাই সনদের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। এই সনদ হবে মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা। রাষ্ট্রকাঠামোর মৌলিক সংস্কারের জন্য এই সনদের কথা বলা হচ্ছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে দ্রুত এই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে।
বৈঠকে ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারসহ আট বিষয়ে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
সংলাপে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দিন মাহদি উপস্থিত ছিলেন। খেলাফত মজলিসের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফরিদ, যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম ব এনস প ই সনদ
এছাড়াও পড়ুন:
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে দলগতভাবে জড়িত আওয়ামী লীগ, মূল সমন্বয়কারী তাপস: তদন্ত কমিশন
বিডিআর বিদ্রোহে সংঘটিত বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ তদন্তের জন্য গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত কমিশন বলেছে, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে দলগতভাবে জড়িত আওয়ামী লীগ। আর মূল সমন্বয়কারী ছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস।
কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান ও অন্য সদস্যরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছে।
কমিশন প্রধান ফজলুর রহমান বলেন, তদন্তকাজ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ত্রুটিমুক্ত করার স্বার্থে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব বজায় রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন কাজ শুরু করি তখন ১৬ বছর আগের এই ঘটনার বহু আলামত ধ্বংস হয়ে গেছে। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকে বিদেশে চলে গেছেন। আমরা দুটো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছি। সাক্ষীদের ডাকলাম, কারও কারও ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বক্তব্য শুনেছি। যতক্ষণ তিনি বলতে চেয়েছেন। যারা তদন্তে জড়িত ছিলেন তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের তদন্তের রিপোর্ট সংগ্রহ করেছি, অন্যান্য উপাদান সংগ্রহ করেছি।’
কমিশন প্রধান বলেন, এই তদন্তের মাধ্যমে বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে জনমনে থাকা প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে, উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে কার কী ভূমিকা ছিল। কেন সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে থাকল, অ্যাকশন নিল না?
কমিশন প্রধান বলেন, তদন্তে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে বহিঃশক্তির সরাসরি সম্পৃক্ততা ও তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সরাসরি জড়িত থাকার শক্তিশালী প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ সময় তদন্তে কী পাওয়া গেছে, তা নিয়ে কমিশন সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেন, এই ঘটনার কিছু বাহ্যিক ও প্রকৃত কারণ বের করেছে কমিশন। এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত এবং এর পেছনে প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছিল তৎকালীন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের রক্ষা করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সরাসরি ভূমিকা রেখেছে। তারা ২০-২৫ জনের একটি মিছিল নিয়ে পিলখানায় ঢুকেছে এবং বের হওয়ার সময় সেই মিছিলে দুই শতাধিক মানুষ ছিল।
জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেন, পুরো ঘটনাটি সংঘটিত করার ক্ষেত্রে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছিল। তিনি এই ঘটনার দায় নিরূপণের ক্ষেত্রে বলেন, দায় তৎকালীন সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সেনাপ্রধানেরও। এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও র্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরও রয়েছে চরম ব্যর্থতা।
জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেন, ওই ঘটনার সময় কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং কয়েকজন সাংবাদিকের ভূমিকা ছিল অপেশাদার। ওই হত্যাকাণ্ডের সময় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন) যেসব বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে শেখ হাসিনা বৈঠক করেন, তাঁদের সঠিক নাম পরিচয় ও তথ্য সংরক্ষণ করা হয়নি।
কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করে, যাতে করে ভবিষ্যতে বাহিনীগুলোতে এই ধরনের ঘটনা এড়ানো যায় এবং এই ঘটনার ভুক্তভোগীরা ন্যায় বিচার পায়।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতি দীর্ঘদিন ধরে অন্ধকারে ছিল। আপনারা সত্য উদ্ঘাটনে যে ভূমিকা রেখেছেন জাতি তা স্মরণে রাখবে। জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ইতিহাসের এই ভয়াবহতম ঘটনা নিয়ে জাতির অনেক প্রশ্ন ছিল, এই কাজের মধ্য দিয়ে সেসব প্রশ্নের অবসান ঘটবে। এই প্রতিবেদনে শিক্ষণীয় বহু বিষয় এসেছে। জাতির জন্য মূল্যবান সম্পদ হয়ে থাকবে এটি।
মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান নেতৃত্বাধীন এ কমিশনের সদস্যরা হলেন মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার (অব.), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. সাইদুর রহমান বীর প্রতীক (অব.), মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, এম. আকবর আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শরীফুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজ ও স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি।