‘বাংলাদেশে এখন গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে এবং যে যার মত প্রকাশ করতে পারছে। এটা কেবলই ভিন্নমত।’—ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দলগুলোর মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতাদের সঙ্গে এনসিপির নেতাদের বৈঠক শেষে আজ রোববার বিকেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন তিনি। রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে খেলাফত মজলিসের কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়।

এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, জুলাইয়ের আন্দোলনে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে দলগুলো ছিল, তাদের মধ্যে ফাটল দেখা দিচ্ছে। একে অপরকে বিষোদ্‌গার করছে। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের কারণে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে আপনারা কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না।

জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এখন যে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো বাংলাদেশে রাজনীতি করছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবশ্যই বিভিন্ন মত থাকবে। আমরা মনে করছি, এখন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে এবং যে যার মত প্রকাশ করতে পারছে। এটি কেবলই ভিন্নমত। আমরা মনে করি না, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন কোনো অনৈক্য তৈরি হয়েছে, যার সুযোগ আসলে ফ্যাসিবাদী শক্তি নিতে পারে।’

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ আছেন, দাবি করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, তারই অংশ হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁদের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজনে যদি মাঠের কর্মসূচিও প্রয়োজন হয়, আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যৌথ বা যুগপৎ মাঠের কর্মসূচি নেওয়ার উদ্যোগ নেব। কোনোভাবেই আমরা বাংলাদেশকে, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে প্রবেশের সুযোগ দেব না, এ বিষয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

ব্যক্তিদের বিচার চাইছেন নাকি দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরও বিচার চাইছেন এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ব্যক্তিদের বিচার তো অবশ্যই হবে। সরকার এখনো দলগতভাবে বিচারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমরা মনে করি, দলগতভাবে বিচার হওয়া উচিত। জুলাই গণহত্যা আসলে রাজনৈতিক একটি হত্যাযজ্ঞ। দলগতভাবেই আওয়ামী লীগ এই হত্যাযজ্ঞের নেতৃত্ব দিয়েছে এবং অংশগ্রহণ করেছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা এখন জুলাই সনদের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। এই সনদ হবে মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা। রাষ্ট্রকাঠামোর মৌলিক সংস্কারের জন্য এই সনদের কথা বলা হচ্ছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে দ্রুত এই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে।

বৈঠকে ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারসহ আট বিষয়ে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

সংলাপে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দিন মাহদি উপস্থিত ছিলেন। খেলাফত মজলিসের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফরিদ, যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক মো.

আবদুল জলিল, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম ব এনস প ই সনদ

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি

জুলাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের দলগতভাবে বিচার, দলটির নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিল করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সমাবেশ থেকে জাতীয় নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন এনসিপির নেতারা।

সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলগাঁও, সবুজবাগ, মুগদা ও শাহজাহানপুরে এলাকায় এ মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মশাল মিছিলটি খিলগাঁও জোড়পুকুর পাড় হতে শুরু হয়ে এলাকার বিভিন্ন সড়কে প্রদক্ষিণ করে শাজাহানপুর গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।

এ সময় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুণ। দলগতভাবে আওয়ামী লীগের বিচার করুন। দলটির নিবন্ধন বাতিল করুণ। এ গণহত্যাকারী দলকে আমরা আর সহ্য করব না।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে দিল্লির কুসুম কুসুম প্রেম আর চলবে না। দিল্লির দাসত্ব আর মেনে নেওয়া হবে না।’

‘আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে আসবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত তাদের আগে নিতে দিন’— সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টার এমন মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ করার কোনো অধিকার নেই। তারা পতিত গণহত্যাকারী দল, পলাতক দল। আপনি আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করুন।’

এনসিপির এই নেতা আরও বলেন, ‘প্রথমে নির্বাহী আদেশ, তারপর আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন। সর্বশেষ রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগকে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ করুন। এই তিনভাবে না পারলে গণভোটের আয়োজন করুন। দেশের জনগণ গণভোটের মাধ্যমে রায় দেবে। এরপরও আওয়ামী লীগকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি