সংস্কারের ১৪৭টি সুপারিশের সঙ্গে একমত খেলাফত মজলিস
Published: 21st, April 2025 GMT
বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১৪৭টির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। এ ছাড়া ১৫টি সুপারিশের সঙ্গে দ্বিমত এবং ৪টি সুপারিশের সঙ্গে আংশিক একমত পোষণ করেছে দলটি।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে খেলাফত মজলিসের এই অবস্থানের কথা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন দলটির মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ।
আজ সকাল ১০টা থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে খেলাফত মজলিসের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলে ছিলেন খেলাফত মজলিসের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মাওলানা ইউসূফ আশরাফ, মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ ও যুগ্ম মহাসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী।
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদের সুপারিশের বিরোধিতার কথা জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন জালালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, তাঁরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদের কোনো স্থান থাকতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে হবে।
জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, ঐকমত্য কমিশন তাঁদের জানিয়েছে, বহুত্ববাদ বলতে বহু সংস্কৃতি ও জনগোষ্ঠীর সংযুক্তি বোঝানো হয়েছে। তখন তাঁরা বলেন, বহুত্ববাদ শব্দটি একত্ববাদের বিপরীত। তাই বহু সংস্কৃতির প্রসঙ্গ রাখতে হলে অন্য কোনো শব্দের মাধ্যমে তার স্থান দিতে হবে।
আলোচনায় দেশকে চারটি প্রদেশে বিভক্তির সুপারিশের সঙ্গে দ্বিমতের কথা জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক আয়তন খুবই ছোট। যোগাযোগব্যবস্থাও বেশি দূরত্বের নয়। কাজেই এমন সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনৈতিক ব্যয় বাড়বে।
স্থানীয় সরকার কাঠামোয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, সুপারিশে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা এই সুপারিশের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তাতে জনগণের মতামত উপেক্ষিত হবে। বিপরীতে এমন পদ্ধতিতে অনৈতিক অর্থের কারসাজি ও প্রভাববলয়ে চেয়ারম্যানরা নির্বাচিত হবেন। কাজেই সরাসরি জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে।
বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ল দ দ ন আহমদ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে একমত হলেও প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়ায় মূল বিরোধ: আলী রীয়াজ
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও এই সরকারের রূপরেখা নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। আজকের আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন রূপরেখা নিয়ে একটি সংশোধিত প্রস্তাব দেয়। তবে সেটি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য কয়েকটি ধাপে বিকল্পের কথা আছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন ।
আলী রীয়াজ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবে অংশগ্রহণকারী তিন-চতুর্থাংশ দল একমত হয়েছে। মূল বিরোধ এখন প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়া নিয়ে।
আজকের আলোচনায়—তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও ন্যায়পাল নিয়োগের সাংবিধানিক বিধান এবং জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের কাঠামো নিয়ে আলোচনা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়ে ঐকমত্য কমিশন আজ নতুন করে প্রস্তাব উপস্থাপন করে। কমিশনের সংশোধিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নে একটি পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠিত হবে। কমিটিতে থাকবে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) ও দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি। যদি এই কমিটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারে, তবে প্রধান বিচারপতির মনোনীত দুই বিচারপতিকে যুক্ত করে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি ‘র্যাঙ্ক-চয়েস’ভোটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে।
এই র্যাঙ্ক-চয়েস প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি আপত্তি জানিয়েছে। দলটির দাবি, এর পরের ধাপ কী হবে, সেটা ঠিক করার বিষয়টি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপি বিচারপতিদের অন্তর্ভুক্তি ও ভোটিং প্রক্রিয়াকেই নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায় হিসেবে দেখছে।
নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা ছিল দিনটির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০টি করা এবং সরাসরি ভোটের বিধান করার প্রস্তাব দিয়েছিল সংস্কার কমিশন। কিন্তু তাতে ঐকমত্য না হওয়ায় কমিশন নতুন প্রস্তাব দেয়। তাতে বলা হয়, ৩০০ সাধারণ আসনের মধ্যে দলগুলো এক-চতুর্থাংশ বা এক-পঞ্চমাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। তবে আজকেও এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা প্রায় ঐকমত্যের কাছাকাছি এসেছি। আগামীকাল কমিশনের পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হবে। আশা করছি তা অধিকাংশ দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’
মহাহিসাব নিরীক্ষক ও ন্যায়পাল নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানে কমিটি গঠনের বিধান সংযুক্তির প্রস্তাবে এখনো ঐকমত্য হয়নি। তবে অধিকাংশ দল কমিশনের প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছে। ন্যায়পালের নিয়োগ কার্যকর করার বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও বিএনপি ও তার কয়েকটি মিত্র দল সংবিধানে নতুন বিধান না এনে বিদ্যমান আইনকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দিয়েছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে যেসব বিষয়ের ওপর ঐকমত্য হয়েছিল, তার একটি তালিকা আগামীকাল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। এ ছাড়া জাতীয় সনদের খসড়ার একটি কপি ইতিমধ্যে দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে। সংশোধনের পর আগামীকালই এ অংশটির নিষ্পত্তি করার আশা করা হচ্ছে।
জুলাই সনদের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা এখনো আশাবাদী যে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ দাঁড় করাতে পারব। সব দলই কোনো না কোনোভাবে সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে, এটি ইতিবাচক দিক।’
আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।