মূলনীতিতে বহুত্ববাদ নয় বহুমত চায় খেলাফত
Published: 21st, April 2025 GMT
সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ সংযোজনে রাজি নয় মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দলটির বক্তব্য ‘বহুত্ববাদ’ শব্দটি আল্লাহর একাত্ববাদের বিপরীত শব্দ। তাই বহুত্ববাদের পরিবর্তে বহুমত বা বহুপথের সহাবস্থানকে মূলনীতি করার প্রস্তাব করেছে খেলাফত।
সোমবার জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন দলটির নেতারা। সকাল ১০টায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে শুরু হওয়া বৈঠক, বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত চলে।
জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশারাফের নেতৃত্বে খেলাফতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমেদ ও যুগ্ম মহাসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে ছিলেন কমিশন সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড.
খেলাফত ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬ সুপারিশের ১৪৭টিতে একমত জানিয়েছে। ১৫টিতে একমত নয়। চারটিতে আংশিক একমত বলে লিখিত মতামতে জানিয়েছে। সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যুক্তের সুপারিশে রাজি নয় দলটি। আজকের বৈঠকেও অবস্থান বদল করেনি।
ইউসুফ আশরাফ বলেন, কমিশন বলেছে, ‘বাংলাদেশে বহু সংস্কৃতি, বহুমত ও পথের লোক বাস করেন। বহুত্ববাদ বলতে বুঝিয়েছেন সবার অন্তর্ভুক্তি’। তখন আমরা বলেছি ‘বহুত্ববাদ যেহেতু একত্ববাদের বিপরীত শব্দ, এই শব্দ বাদ দিন। বহু সংস্কৃতি, বহুমত, বহুপথের সহাবস্থানের সঙ্গে আমরাও একমত। আমরাও চাই এটা আসুক। এজন্য অন্য শব্দ ব্যবহার করা যায়। প্রয়োজনে বহুমত, বহুপথ এই শব্দটাও ব্যবহার করতে পারেন।’
জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মূলনীতি হিসেবে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে খেলাফত।
দেশকে চার প্রদেশে বিভক্তের সুপারিশে খেলাফত একমত নয় জানিয়ে দলের মহাসচিব বলেছেন, এতে রাষ্ট্রের পরিচালন ব্যয় বাড়বে।
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচনের সুপারিশে একমত জানিয়ে জালাল আহমেদ বলেন, এতে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটবে না। ইউনিয়ন এবং উপজেলায় সরাসরি ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে টাকার ছড়াছড়ি হবে।
নির্বাচন নিয়ে খেলাফতের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে জালাল উদ্দিন বলেন, স্পষ্ট কথা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোষীদের বিচার করতে হবে। দ্রুত নির্বাচন করতে গেলে তা সুষ্ঠু হবে না।
সূচনা বক্তব্যে আলী রীয়াজ সংস্কারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, আর যেন কোনো অবস্থাতেই ফ্যাসিবাদী শাসন ফিরে না আসে। আর যেন কেউ গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন দেশের ১৮ কোটি মানুষের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘এই সনদ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জারি করা হোক এবং প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করা হোক। তবে এই গণভোট অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে হবে, নির্বাচনের পরে নয়।’
আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তৃতীয় ধাপে তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রফিকুল ইসলাম খান। এ সময় উপস্থিত ছিলে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।
জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই আবারও রাস্তায় নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেন রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর সে সময়কার দলগুলোর ঐকমত্য থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতায় থাকা দলগুলো সেটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) যথাসময়ে বাস্তবায়ন করেনি। পরে আন্দোলনের মাধ্যমেই তা সংবিধানে যুক্ত হয়।
জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়েছিল বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের মাধ্যমে। আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এ রায় দেওয়ানো হয়েছিল। তাই বিচার বিভাগকে আবার বিতর্কের মুখে না ফেলে সংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে জামায়াত।
জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ঐকমত্য কমিশন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে চারটি বিকল্প নিয়ে কাজ করেছে, যার মধ্যে কমিশন সংবিধানিক আদেশের প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। এই আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের ২২টি আর্টিকেল বাস্তবায়িত হতে পারে। এটি আইনিভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি।
এক প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করার এখতিয়ার সংসদের নেই, এবং এ ধরনের পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই গণভোটের প্রয়োজন হয়।
জামায়াতে ইসলামী জনগণের অভিপ্রায়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে জামায়াতের এ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন।
জুলাই সনদের যে আদর্শ ও চেতনা, তা বাস্তবায়ন হওয়া উচিত এবং যারা এই আদর্শের পথে হাঁটবে না, জনগণ তাদের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করেন হামিদুর রহমান আযাদ। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ এটি প্রমাণ করে যে এ দেশের তরুণসমাজ ও জনগণ নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা চায় এবং জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধাদের পক্ষেই রয়েছে।