সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ সংযোজনে রাজি নয় মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দলটির বক্তব্য ‘বহুত্ববাদ’ শব্দটি আল্লাহর একাত্ববাদের বিপরীত শব্দ। তাই বহুত্ববাদের পরিবর্তে বহুমত বা বহুপথের সহাবস্থানকে মূলনীতি করার প্রস্তাব করেছে খেলাফত।

সোমবার জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন দলটির নেতারা। সকাল ১০টায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে শুরু হওয়া বৈঠক, বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত চলে।

জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশারাফের নেতৃত্বে খেলাফতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমেদ ও যুগ্ম মহাসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে ছিলেন কমিশন সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড.

বদিউল আলম মজুমদার ও ড. ইফতেখারুজ্জামান।

খেলাফত ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬ সুপারিশের ১৪৭টিতে একমত জানিয়েছে। ১৫টিতে একমত নয়। চারটিতে আংশিক একমত বলে লিখিত মতামতে জানিয়েছে। সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যুক্তের সুপারিশে রাজি নয় দলটি। আজকের বৈঠকেও অবস্থান বদল করেনি।  

ইউসুফ আশরাফ বলেন, কমিশন বলেছে, ‘বাংলাদেশে বহু সংস্কৃতি, বহুমত ও পথের লোক বাস করেন। বহুত্ববাদ বলতে বুঝিয়েছেন সবার অন্তর্ভুক্তি’। তখন আমরা বলেছি ‘বহুত্ববাদ যেহেতু একত্ববাদের বিপরীত শব্দ, এই শব্দ বাদ দিন। বহু সংস্কৃতি, বহুমত, বহুপথের সহাবস্থানের সঙ্গে আমরাও একমত। আমরাও চাই এটা আসুক। এজন্য অন্য শব্দ ব্যবহার করা যায়। প্রয়োজনে বহুমত, বহুপথ এই শব্দটাও ব্যবহার করতে পারেন।’

জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মূলনীতি হিসেবে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে খেলাফত। 

দেশকে চার প্রদেশে বিভক্তের সুপারিশে খেলাফত একমত নয় জানিয়ে দলের মহাসচিব বলেছেন, এতে রাষ্ট্রের পরিচালন ব্যয় বাড়বে। 

ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচনের সুপারিশে একমত জানিয়ে জালাল আহমেদ বলেন, এতে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটবে না। ইউনিয়ন এবং উপজেলায় সরাসরি ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে টাকার ছড়াছড়ি হবে। 

নির্বাচন নিয়ে খেলাফতের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে জালাল উদ্দিন বলেন, স্পষ্ট কথা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোষীদের বিচার করতে হবে। দ্রুত নির্বাচন করতে গেলে তা সুষ্ঠু হবে না। 

সূচনা বক্তব্যে আলী রীয়াজ সংস্কারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, আর যেন কোনো অবস্থাতেই ফ্যাসিবাদী শাসন ফিরে না আসে। আর যেন কেউ গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়। 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদের খসড়া অসম্পূর্ণ, কিছু অংশ বিপজ্জনক: জামায়াত

জুলাই সনদের খসড়াকে অসম্পূর্ণ বলেছে জামায়াতে ইসলামী। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকারকে দুই বছরের মধ্যে এই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাবকে বিপজ্জনক বলেছে দলটি।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনার বিরতিতে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এ কথা বলেন।

সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘এটি অসম্পূর্ণ এবং কিছু অংশ বিপজ্জনক। আজকে তারা বলছে, এটা একটা নমুনামাত্র, ভুল হয়েছে। যদি সেটাই হয়, তাহলে মন্তব্যের দরকার নেই। তবে যদি সেটাই মূল কথা হয়, তাহলে একে গ্রহণ করা যাবে না।’

জামায়াত নিজস্ব একটি খসড়া সনদ তৈরি করছে এবং কমিশনে জমা দেবে বলে জানান তাহের। তিনি বলেন, ‘সংলাপে যেসব বিষয়ে একমত হচ্ছি, সেগুলো বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে।’ তিনি প্রস্তাব করেন দুটি পথ—১. অধ্যাদেশের মাধ্যমে একটি আইনি কাঠামো গঠন করে পরে নির্বাচিত পার্লামেন্টে তা অনুমোদন। ২. গণভোটের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া।

সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা যেকোনো একটি পদ্ধতিতে এই কাঠামোকে আইনগত বৈধতা দিতে চাই।’ তিনি জানান, তাঁরা ঐকমত্যের পক্ষে কিন্তু সেটা হতে হবে কার্যকর এবং আইনি কাঠামোর মধ্যে হতে হবে। অন্যথায় দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ‘অনিশ্চয়তার দিকে’ চলে যেতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে বলে জানান জামায়াতের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা একমত হয়েছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই হতে হবে, এখানে প্রায় সবাই একমত, একমাত্র বিএনপি কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।’

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠিত হবে—প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি। এঁরা ১২ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্য থেকে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান নির্বাচন করবেন।

যদি একমত না হন, তাহলে প্রথমে সর্বসম্মতভাবে, পরবর্তী সময়ে এক চয়েস ভোট, তারপর প্রয়োজনে র‍্যাংক চয়েস ভোটিং পদ্ধতির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে। এ পদ্ধতিতে ভোটার হবেন মোট সাতজন—ওপরে উল্লিখিত পাঁচ সদস্য এবং সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের একজন করে বিচারপতি।

জামায়াতের এ নায়েবে আমির বলেন, ‘বিচারপতি দুজন যুক্ত করা হয়েছে যেন এককভাবে তৃতীয় দল বা অন্য কেউ ডিসাইডিং ফ্যাক্টর না হয়ে যায়। আমরা আশা করি, বিচারপতিরা নিরপেক্ষ থাকবেন এবং হর্স ট্রেডিংয়ের আশঙ্কা কমবে।’ তিনি জানান, বিএনপির আপত্তি মূলত এই যে—যদি ঐকমত্য না হয় তাহলে বিষয়টি সংসদে পাঠানো হোক। তবে জামায়াতসহ বেশির ভাগ দল মনে করে সংসদে পাঠালে তা আর সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে না।

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘সংসদে পাঁচ-ছয়টা দল আছে, অথচ এই বডিতে ৩০টির বেশি দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।’

আজকের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও বিএনপি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. আইয়ুব মিয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৌলিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান
  • উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর
  • রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে  জুলাই সনদের খসড়ায় সংশোধনী আনা হচ্ছে: আলী রীয়াজ  
  • মৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি
  • জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি জরুরি: জামায়াতের নায়েবে আমির
  • জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি, বিএনপি মোটামুটি একমত
  • জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে বিএনপি
  • তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে একমত হলেও প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়ায় মূল বিরোধ: আলী রীয়াজ
  • জুলাই সনদের খসড়া অসম্পূর্ণ, কিছু অংশ বিপজ্জনক: জামায়াত