শ্রমিক ও তাঁর পরিবারের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন উপযোগী মজুরির অধিকার নিশ্চিতে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কাঠামো নির্ধারণের সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে মজুরি নির্ধারণ পদ্ধতি উন্নয়ন, বোর্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কাঠামোগত সংস্কারে স্থায়ী মজুরি কমিশন গঠন এবং জাতীয় ও খাতভিত্তিক মজুরি তিন বছর পরপর মূল্যায়নের মাধ্যমে বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কোনো পেশায় জাতীয় মজুরি নেই। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের ৫৮টি পেশায় ন্যূনতম মজুরি কাঠামো রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া এবং সম্মিলিত দরকষাকষির ক্ষেত্রে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন চর্চা সহজ করার সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কোনো প্রতিষ্ঠানের ২০ শতাংশ শ্রমিক কিংবা কর্মীর স্বাক্ষরের ভিত্তিতে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হয়। কমিশন বলছে, এ পদ্ধতির পরিবর্তে ইউনিয়ন করতে ইচ্ছুক শ্রমিকের মোট সংখ্যার ভিত্তিতে ট্রেড নিবন্ধন দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কত শ্রমিকের সই প্রয়োজন হতে পারে, তা নির্ধারণে দ্রুত একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে কমিশন। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সব খাতের শ্রমিকের জন্য সমানভাবে শ্রম আইনের আওতায় ট্রেড ইউনিয়নের সুযোগ রাখার কথা বলা হয়েছে।

গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ৪৬০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশন। এতে শ্রম খাতের উন্নয়নে মোট ২৫টি সুপারিশ করা হয়। শ্রম খাতের সব অংশীজন, বিশেষ করে বিভিন্ন শ্রমিক-কৃষক, পেশাজীবী সংগঠন, উদ্যোক্তা, মানবাধিকার সংগঠন এবং দেশি, আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ পঞ্চাশের মতো অংশীজনের মতামত গ্রহণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন-নীতি, গবেষণা, অনলাইন মাধ্যম থেকে জনগণের মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৭ নভেম্বর শ্রম খাত সংস্কারে করণীয় নির্ধারণের সুপারিশ চেয়ে ১০ সদস্যের এ কমিশন গঠন করে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমদ কমিশনের নেতৃত্ব দেন। 

জানতে চাইলে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমদ সমকালকে বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম সহজ করার সুপারিশ করা হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সরকারি নিবন্ধন পেতে বর্তমান আইনে কোনো কারখানার অন্তত ২০ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষর থাকার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তার পরিবর্তে ট্রেড ইউনিয়নে ইচ্ছুক মোট শ্রমিকের সংখ্যাকে ভিত্তি হিসেবে বিবেচনার সুপারিশ করা হয়। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মডেল অনুসরণ করা যায়। 
তিনি আরও বলেন, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোকেও (ইপিজেড) অভিন্ন শ্রম আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। একান্ত যদি একই আইনের আওতায় আনা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত যেন ট্রেড ইউনিয়ন, কারখানা পরিদর্শন ও শ্রম আদালত– এ তিনটি বিষয়কে অভিন্ন শ্রম আইনের অধীনে রাখা হয়।
কমিশনপ্রধান জানান, তাদের এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন বিষয়ে সরকার খুব আগ্রহী। প্রধান উপদেষ্টা বাস্তবায়নযোগ্য একটি অগ্রাধিকার তালিকা দেওয়ার জন্য কমিশনকে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে খুব শিগগির নিজেরা বৈঠকে বসবেন।

শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রম আইন সংশোধনের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আইনে ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ শ্রমিকের সই থাকলেই নিবন্ধনের জন্য যোগ্য বিবেচনা করার কথা প্রস্তাব করা হচ্ছে। বর্তমান আইনে ২০ শতাংশ শ্রমিকের সই না থাকলে ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধনের আবেদন করা যায় না। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকেও ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন সহজ করার জন্য সরকারের ওপর চাপ রয়েছে। এ দুই সংস্থা শ্রমিকের ন্যূনতম অনুপাতের বিলুপ্তি চায়। ইপিজেডেও অভিন্ন আইন চায় সংস্থাগুলো। এ বিষয়ে সরকার আইএলওকে একটি পথনকশা জমা দিয়েছে। এ বছরের মধ্যে আইন সংশোধনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। একইভাবে ইইউর সঙ্গে একটি কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। শ্রমিক সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ১৫ শতাংশের সই-স্বাক্ষরের ভিত্তিতে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন অনুমোদনের দাবি জানিয়ে আসছে।

ট্রেড ইউনিয়নের গুরুত্ব তুলে ধরে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বজনীন সংগঠন ও অন্তর্ভুক্তির অধিকার নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা অপ্রাতিষ্ঠানিক সব খাতের শ্রমিকদের জন্য সমানভাবে শ্রম আইনের আওতায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, ট্রেড ইউনিয়নে যোগদান, প্রতিনিধিত্ব এবং যৌথ দরকষাকষির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এ রকম একটি পরিবেশ উন্নয়নে শ্রম আইনের সংশোধন ও সব বাধা দূর করতে হবে। কর্মসংস্থানের বাস্তবতা ভিন্ন হওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি সমন্বিত অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রেড ইউনিয়ন কাঠামো গঠন যে জরুরি, সে কথাও বলেছে কমিশন। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও কাঠামোগত কোনো সমস্যা নেই। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন কিছুটা জটিল। এ বিষয়ে একটি আইনি কাঠামো গঠনের কথা বলেছে কমিশন। এ আইনি কাঠামোতে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে এমন শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন, মজুরিসহ অন্যান্য অধিকার চর্চার অনুমতি থাকতে হবে। এর মধ্যে বিশেষভাবে গৃহকর্মী, মালী, নিজস্ব গাড়িচালক, দৈনিকভিত্তিক মজুর, পরিবহন শ্রমিক ও কৃষি শ্রমিকের কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ট্রেড ইউনিয়ন কীভাবে হবে
প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সব খাতের শ্রমিকদের জন্য সমানভাবে শ্রম আইনের আওতায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, ট্রেড ইউনিয়নে যোগদান, প্রতিনিধিত্ব এবং যৌথ দরকষাকষির অধিকার নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয় কমিশনের প্রতিবেদনে।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন চর্চা কেমন হবে– জানতে চাইলে কমিশনের সদস্য এবং বিলসের নির্বাহী সদস্য শাকিল আখতার বলেন, সব শ্রমিককে পরিচিতি কার্ড দেওয়া হলে তাদের সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে শনাক্ত করা যাবে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতাও বিবেচনা করা সহজ হবে। অন্যান্য ছোট শিল্প কিংবা দোকানপাটের ক্ষেত্রে ৫০ জন শ্রমিকের সই-স্বাক্ষরের ভিত্তিতেই ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন করা যাবে। 

ন্যায়বিচার ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা
প্রতিবেদনে শ্রমিকের ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য শ্রম আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও অযথা হয়রানি বন্ধে সরকারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া আইনের অধিকার লঙ্ঘন প্রতিকারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও কাঠামো নিশ্চিত করা, বিরোধ নিষ্পত্তি ও আইনানুগ প্রাপ্য অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত কোনো কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বলপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন সময় শ্রমিক আন্দোলনে অংশগ্রহণের অভিযোগে যেসব ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী ও শ্রমিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে, তা দ্রুত পর্যালোচনা সাপেক্ষে বাতিল করার সুপারিশ রাখা হয়েছে।
শ্রমিক সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় একটি ন্যূনতম মজুরি কাঠামো দাবি করে আসছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোশাক খাতের শ্রমিক নেতা তৌহিদুর রহমান গতকাল বলেন, জাতীয় একটি কাঠামো থাকলে শ্রমিকরা ন্যূনতম মানসম্পন্ন মজুরি পাবেন। কোনো প্রতিষ্ঠান এর চেয়ে বেশি দিতে পারবে; কিন্তু কম দিতে পারবে না। এতে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। 

কমিশনের অন্যান্য সুপারিশ
কমিশনের অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে সুসমন্বিত শিল্প সম্পর্ক ও সামাজিক সংলাপ চর্চা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও পেশাগত স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। এ ছাড়া শ্রমসংক্রান্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা, সরকারি শ্রম তথ্যভান্ডার তৈরি, সমঅধিকার নিশ্চিত ও বৈষম্য দূরীকরণে উদ্যোগ, মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা, যৌন হয়রানিমুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করাসহ ২৫টি পরামর্শ।
এ নিয়ে গতকাল বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরের শ্রম ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে সংস্কার কমিশন। এতে কমিশনপ্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমদ বলেন, শ্রম সংস্কার কমিশন সুপারিশগুলোর মধ্যে সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে উপযুক্ত ২৫টি মূল সুপারিশে গুরুত্ব আরোপ করেছে। কমিশন আশা করছে, সুপারিশগুলো শুধু কাগজে বন্দি না হয়ে শ্রমিক-কৃষকের জীবনযাত্রায় বাস্তবায়িত হবে। এই সুপারিশগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হবে। 
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য কামরান তানভিরুর রহমান, এ এন এম সাইফ উদ্দিন, তপন দত্ত, সাকিল আখতার চৌধুরী, আরিফুল ইসলাম আদীব, এ কে এম নাসিম, ফারুক আহাম্মাদ, ফজলে শামীম এহসান, ড.

মাহফুজুল হক, তাসলিমা আখতার প্রমুখ। 

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ সম্মেলন
কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়ার পর গতকাল সাংবাদিকদের অবহিত করেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, শ্রমিকদের নিবন্ধন থেকে শুরু করে পরিচয়পত্র দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক শ্রমিক আন্দোলনে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে, সেসব মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করার কথাও বলেছে কমিশন। সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। দেশে আট কোটি শ্রমজীবী মানুষ আছেন। তার মধ্যে ৮৫ শতাংশ বা সা কোটি শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা নেই। 
তিনি বলেন, শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিটি এই শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং কর্মক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশেষ সুপারিশ করেছে। 
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। 

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর র স প র শ কর স প র শ কর ছ ন য নতম ম অন য ন য সরক র র পর ব শ র জন য কর র ক স গঠন গতক ল সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

দোয়ার ফজিলত ও আদব

দোয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ আহ্বান করা বা প্রার্থনা করা। পরিভাষায় দোয়া হলো কল্যাণ ও উপকার লাভের উদ্দেশ্যে এবং ক্ষতি ও অপকার রোধে মহান আল্লাহকে ডাকা এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।

প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (বুখারি ও মুসলিম) ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’ (তিরমিজি: ৩৩৭৩)

আল–কোরআনের বর্ণনা, ‘আর তোমাদের রব বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)

মুমিনের পরিচয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। কেউ জানে না তার কৃতকর্মের জন্য তাদের কী কী চোখজুড়ানো প্রতিদান লুকায়িত আছে।’ (সুরা-৩২ সাজদা, আয়াত: ১৬-১৭)

‘আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ইমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৬)

দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎকাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১)

দোয়া ও আমল কবুল হওয়ার মূল শর্ত হলো ইখলাস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। অতএব, তাঁকে ডাকো খাঁটি ইবাদতের মাধ্যমে।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬৬)

দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎ কাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১) ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পাক পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দান করেছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৭৩)

নবীজি (সা.) বলেন, ‘উষ্কখুষ্ক ধুলায় ধূসরিত অবস্থায় দীর্ঘ সফরকারী একজন যে স্বীয় দুই হাত আকাশের দিকে প্রসারিত করে বলে, “হে প্রভু! হে প্রভু!” অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে হারাম দ্বারা লালিত, তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে?’ (মুসলিম: ১৬৮৬)

নির্জনে নীরবে বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করা উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাকো কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫)। পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না। তাকে আহ্বান করো ভয় ও আশাসহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫-৫৬)

দোয়ার আদব হলো দৃঢ়সংকল্প ও আকুতির সঙ্গে দোয়া করা, দোয়া কবুলে প্রবল আশাবাদী হওয়া।

হজরত জাকারিয়া (আ.) তাঁর দোয়ায় বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনার কাছে দোয়া করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪) হজরত ইব্রাহিম (আ.) বলেন, ‘আশা করি, আমার প্রতিপালকের নিকট দোয়া করে আমি বিফল হব না।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪৮)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ