রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী মানুষ গত ৯ বছরে (৩ হাজার ১১৪ দিনের হিসাব) মাত্র ৩১ দিন নির্মল বাতাসে নিশ্বাস নিতে পেরেছেন। এই সময়ে ৮৫৩ দিনের বাতাস ছিল অস্বাস্থ্যকর। আর খুব অস্বাস্থ্যকর ও দুর্যোগপূর্ণ বাতাস ছিল যথাক্রমে ৬৩৫ দিন ও ৯৩ দিন।

ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাওয়া ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ, গত ৯ বছরে ঢাকার বায়ুমানের সূচক বা একিউআইয়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এসব তথ্য জানিয়েছে। ক্যাপস বলছে, দেশে প্রতি বছরই বায়ুদূষণ আগের চেয়ে বেড়েছে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘বিশ্ব ধরিত্রী দিবস এবং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপসের পক্ষ থেকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ক্যাপসের উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

লিখিত বক্তব্যে ক্যাপসের চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান বলেন, ঢাকায় গত ৯ বছরে, অর্থাৎ, ১০৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত বাতাস ছিল ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। ওই মাসে সূচকে গড় বায়ুমান ছিল ৩০০। আর সবচেয়ে ভালো অবস্থান ছিল ২০২১ সালের জুলাইয়ে। ওই মাসে গড় বায়ুমান ছিল ৯৭।

সম্প্রতি প্রকাশিত আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ একাধিক বছর বিশ্বের শীর্ষ দূষিত বাতাসের দেশের তালিকায় রয়েছে। ২০২১ ও ২০২৩ সালে বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। সেই সঙ্গে গত বছর দূষিত বাতাসের শহরগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় রাজধানী ঢাকা ছিল তিন নম্বরে।

জেলাভিত্তিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের জেলা গাজীপুর। এ জেলার বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে ১৮ গুণ বেশি। অন্যদিকে সবচেয়ে কম দূষিত বাতাসের জেলা সিলেট। যদিও সিলেট শহরের বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা ডব্লিউএইচওর মানমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৭ গুণ বেশি। এমনকি এটা বাংলাদেশের নির্ধারিত জাতীয় আদর্শ (বার্ষিক) মানের চেয়ে ৩ দশমিক ২৩ গুণ বেশি।

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বাপা ও ক্যাপসের বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এগুলো হলো—মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের ব্যবহার বাড়ানো। ব্লক ইটের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা। বিদ্যমান জ্বালানি নীতিগুলোতে সংশোধন আনা। নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন করা। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প কারখানায় বিশ্বমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিঃসরণ মান নির্ধারণ এবং এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বলেন, বায়ুদূষণ প্রতিরোধে সরকারকে এখনই কঠোর হতে হবে। শুধু মানুষের সচেতনতার কথা বলা যাবে না, মানুষ প্রস্তুত রয়েছে। সরকারকে নীতি বাস্তবায়নে যেতে হবে।

আরও পড়ুনঢাকা আজ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগর, ৩ স্থানে বাতাস খুব অস্বাস্থ্যকর২০ এপ্রিল ২০২৫

বাপার সহসভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, কোন উৎস থেকে এবং কীভাবে বায়ুদূষণ হচ্ছে, তা জানতে হবে।

বাপার সভাপতি নূর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বাপার যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

আরও পড়ুনঢাকায় এত বৃষ্টি, তবু বায়ুদূষণে বিশ্বে শীর্ষে১৭ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গত ৯ বছর সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

রাবিপ্রবির ১০ শিক্ষার্থীর সনদ-ছাত্রত্ব বাতিল

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে কোটাবিরোধী আন্দোলনকালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, র‌্যাগিংসহ নানা অভিযোগ এনে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল এমন ১০ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, ছাত্রত্ব ও সনদপত্র বাতিল করেছে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বহিষ্কৃতরা হলেন, বিশ্বজিৎ শীল, সাইদুজ্জামান পাপ্পু, জাহাঙ্গীর আলম অপু, মহিউদ্দিন মুন্না, হাসু দেওয়ান, আকিব মাহমুদ, আবির, অন্তু কান্তি দে, জাকির হোসেন ও রিয়াদ।  

বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি ড. আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, ১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে যাদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়েছে, তাদের সনদপত্র বাতিল করা হয়েছে। যারা এখনো অধ্যয়নরত তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।  

আরো পড়ুন:

ছাত্রলীগের বিচারসহ ৯ দাবি জবি ছাত্রদলের

রাবিতে প্রভাষক হলেন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা, ক্ষোভ

ভিসি আরো জানান, ২০২৪ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ নানান অভিযোগে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়, যা সর্বশেষ রিজেন্ট বোর্ডের সভায় অনুমোদিত হয়েছে। গত পরশু তাদের ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। 

বহিষ্কৃত ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আকিব মাহমুদ বলেন, ‘‘জুলাই-আগস্ট মাসে এমন কোনো ঘটনা ক্যাম্পাসে ঘটেনি, যে কারণে আমাদের বহিষ্কার করা হতে পারে। ক্যাম্পাসে কোটা প্রত্যাহার দাবিতে একদিন বৈষম্যবিরোধী ব্যানারে প্রোগ্রাম হয়েছে, সেদিনও কিছু হয়নি। আমরা সম্পূর্ণভাবে ভিসি ও ছাত্রদল-শিবিরের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। একদিন নিশ্চয়ই এই অবিচারের বিচারও হবে।’’  

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘‘কিছু শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে রিজেন্ট বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের কিছু বলার নেই। শুধু জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ঘটনাই নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক ঘটনাও আছে অভিযোগে। তারই প্রেক্ষিতে তদন্ত শেষে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’’ 

২০১৫ সালে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত কমিটি দেয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের ব্যানারে নানান কর্মসূচি পালন করতে দেখা যেত। বহিষ্কৃত ও সনদ বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকজন ৫ আগস্টের আগে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। গ্রেপ্তার হয়ে বেশ কিছু দিন কারাবরণ শেষে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে দেশ ছেড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করা বহিষ্কৃত ১০ জনের একজন বিশ্বজিৎ শীল।

ঢাকা/শংকর/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনের রোডম্যাপে কবে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ
  • ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
  • এ দেশে খুচরা ব্যাংকিং বন্ধ করে দিচ্ছে এইচএসবিসি
  • রাবিপ্রবির ১০ শিক্ষার্থীর সনদ-ছাত্রত্ব বাতিল
  • জন্মহার বাড়াতে চীনের নতুন উদ্যোগ, শিশুদের জন্য মা-বাবা পাবেন ভাতা
  • সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • ‘রাষ্ট্রীয় শোক’ প্রত্যাখ্যান
  • ঢাবিতে জুলাই স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা
  • নগদ লভ্যাংশ পাঠিয়েছে শাহজালাল ব্যাংক
  • সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্‌সহ চারজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা