ঢাকাবাসী গত ৯ বছরে মাত্র ৩১ দিন নির্মল বাতাসে নিশ্বাস নিয়েছেন
Published: 22nd, April 2025 GMT
রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী মানুষ গত ৯ বছরে (৩ হাজার ১১৪ দিনের হিসাব) মাত্র ৩১ দিন নির্মল বাতাসে নিশ্বাস নিতে পেরেছেন। এই সময়ে ৮৫৩ দিনের বাতাস ছিল অস্বাস্থ্যকর। আর খুব অস্বাস্থ্যকর ও দুর্যোগপূর্ণ বাতাস ছিল যথাক্রমে ৬৩৫ দিন ও ৯৩ দিন।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাওয়া ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ, গত ৯ বছরে ঢাকার বায়ুমানের সূচক বা একিউআইয়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এসব তথ্য জানিয়েছে। ক্যাপস বলছে, দেশে প্রতি বছরই বায়ুদূষণ আগের চেয়ে বেড়েছে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘বিশ্ব ধরিত্রী দিবস এবং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপসের পক্ষ থেকে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ক্যাপসের উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
লিখিত বক্তব্যে ক্যাপসের চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান বলেন, ঢাকায় গত ৯ বছরে, অর্থাৎ, ১০৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত বাতাস ছিল ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। ওই মাসে সূচকে গড় বায়ুমান ছিল ৩০০। আর সবচেয়ে ভালো অবস্থান ছিল ২০২১ সালের জুলাইয়ে। ওই মাসে গড় বায়ুমান ছিল ৯৭।
সম্প্রতি প্রকাশিত আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ একাধিক বছর বিশ্বের শীর্ষ দূষিত বাতাসের দেশের তালিকায় রয়েছে। ২০২১ ও ২০২৩ সালে বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। সেই সঙ্গে গত বছর দূষিত বাতাসের শহরগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় রাজধানী ঢাকা ছিল তিন নম্বরে।
জেলাভিত্তিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের জেলা গাজীপুর। এ জেলার বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে ১৮ গুণ বেশি। অন্যদিকে সবচেয়ে কম দূষিত বাতাসের জেলা সিলেট। যদিও সিলেট শহরের বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা ডব্লিউএইচওর মানমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৭ গুণ বেশি। এমনকি এটা বাংলাদেশের নির্ধারিত জাতীয় আদর্শ (বার্ষিক) মানের চেয়ে ৩ দশমিক ২৩ গুণ বেশি।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বাপা ও ক্যাপসের বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এগুলো হলো—মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের ব্যবহার বাড়ানো। ব্লক ইটের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা। বিদ্যমান জ্বালানি নীতিগুলোতে সংশোধন আনা। নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন করা। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প কারখানায় বিশ্বমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিঃসরণ মান নির্ধারণ এবং এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বলেন, বায়ুদূষণ প্রতিরোধে সরকারকে এখনই কঠোর হতে হবে। শুধু মানুষের সচেতনতার কথা বলা যাবে না, মানুষ প্রস্তুত রয়েছে। সরকারকে নীতি বাস্তবায়নে যেতে হবে।
আরও পড়ুনঢাকা আজ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগর, ৩ স্থানে বাতাস খুব অস্বাস্থ্যকর২০ এপ্রিল ২০২৫বাপার সহসভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, কোন উৎস থেকে এবং কীভাবে বায়ুদূষণ হচ্ছে, তা জানতে হবে।
বাপার সভাপতি নূর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বাপার যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।
আরও পড়ুনঢাকায় এত বৃষ্টি, তবু বায়ুদূষণে বিশ্বে শীর্ষে১৭ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।