এক সপ্তাহেও উদ্ধার হয়নি চবির অপহৃত ৫ শিক্ষার্থী
Published: 23rd, April 2025 GMT
খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক সপ্তাহেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালালেও কাউকে উদ্ধার করতে পারেনি। অপহৃত কয়েকজন অভিভাবকেরও খোঁজ মিলছে না। সন্তানের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার নাম করে অপহরণকারীরা তাদের ডেকে নিয়েছিল বলে দাবি স্বজনদের। সব মিলিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন অপহৃতদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ অপহরণের ঘটনায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করেছে। তবে সংগঠনের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা অপহরণের সঙ্গে তাঁর সংগঠনের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
এদিকে অপহৃত শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে উদ্ধার এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন চবি শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেট এলাকায় খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় প্রায় আধঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। দুপুর দেড়টার দিকে তারা কর্মসূচি শেষ করে সড়ক ছেড়ে দেন।
অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের রিশন চাকমা এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংতি ম্রো।
গত ১৫ এপ্রিল পাহাড়ের বিজু উৎসব শেষে পাঁচ শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার উদ্দেশে রওনা দেন। পরদিন সকাল সাড়ে ৬টায় খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকায় গাড়ি আটকে অস্ত্রধারীরা তাদেরসহ টমটমের চালককে তুলে নিয়ে যায়। পরে চালককে ছেড়ে দিলেও শিক্ষার্থীদের এখনও খোঁজ মেলেনি।
জানা গেছে, সোমবার খাগড়াছড়ি সদরের দুর্গম এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ইউপিডিএফের আস্তানা থেকে সামরিক ইউনিফর্ম, ওয়াকিটকি, মোবাইল, ল্যাপটপ, ক্যামেরাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। তবে কাউকে আটক করা যায়নি।
এদিকে ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে এ অপহরণের অভিযোগ তুলে চবির পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে গতকাল রাঙামাটি সরকারি কলেজে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কলেজ শাখা। বিক্ষোভ-মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়।
অপহৃত দিব্যি চাকমার নানী ও বরকলের আইমাছড়ি ইউপির ওয়ার্ড মেম্বার শুভমালা চাকমা জানান, তাঁর নাতি অপহরণের ঘটনার এক দিন পর তাঁর মেয়ে ভারতী দেওয়ান দেখা করতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অন্বেষ চাকমা জানান, অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, দ্বিতীয় দফায় অপহরণকারীরা অভিভাবকদের আলাদা আলাদা করে ডেকেছে। তবে কবে, কোন স্থানে ডেকেছে, তা জানা সম্ভব হয়নি।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, অপহৃত শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। এখনো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। তবে যেখানে তথ্য পাচ্ছি, সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে কক্সবাজারে কাজের সন্ধানে এসে অপহৃত সিলেটের জকিগঞ্জের ছয় শ্রমিককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে টেকনাফের রাজারছড়া এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্য তাদের অপহরণ করে পাহাড়ে রাখা হয়েছিল। অভিযানের সময় অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ছয় শ্রমিককে উদ্ধার করে।
উদ্ধার হওয়া শ্রমিকরা হলেন জকিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ (২০), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯), মৃত সরবদির ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫) ও মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২)। ১৬ এপ্রিল কাজের উদ্দেশ্যে জকিগঞ্জ থেকে কক্সবাজারে এসে তারা নিখোঁজ হন। তাঁরা সবাই পেশায় রাজমিস্ত্রী।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার অফিস ও প্রতিনিধিরা]
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অপহরণ অপহরণ র অপহ ত
এছাড়াও পড়ুন:
বালু ব্যবসার নামে প্রতারণা কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা
নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর এক বালু ব্যবসায়ীর (ঠিকাদার) বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক অংশীদারের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, তাদের কয়েক কোটি টাকা ঠকিয়ে এখন লাপাত্তা এক সময়ের সহযোগী মতিউর রহমান নামের ওই বালু ব্যবসায়ী।
অভিযোগকারীরা জানান, মতিউর তাঁর লাইসেন্স ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করে বিক্রির কথা বলে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন, যা অন্যরা বুঝতে পারেননি। কথা ছিল সেই লাইসেন্সে বালু উত্তোলনের পর তা বিক্রি করে ভাগের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হবে অংশীদারদের। এই কথায় তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোটি টাকা আদায় করলেও তাদের টাকা বুঝিয়ে না দিয়ে এখন গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে।
জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার হিড়িক পড়েছে। নদীর বালু তোলা নিয়ে চলছে নানা রকম প্রতারণা। তেমনি একটি প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন স্থানীয় কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী। তাদের প্রায় দুই কোটি টাকা বেহাত হয়েছে মা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মতিউর রহমানের কারণে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মতিউর রহমান কুশিয়ারা নদীর বালুর অনুমতি পেয়েছেন বলে এলাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রচার করেন। পরে তিনি শেয়ার বিক্রির কথা জানান দেন। যার ভিত্তিতে ১৬টি শেয়ার তিনি বিক্রি করবেন বলে জানান। তিনি এ বিষয়ে প্রথমে যোগাযোগ করেন শেরপুর মুক্তানগর রিসোর্টের মালিক জাবেদ রনি আহমদের সঙ্গে।
আলোচনার পর জাবেদ রনি ও তাঁর বন্ধু ইমরান আহমদের কাছে থেকে ব্যাংক একাউন্ডের মাধ্যমে এক কোটি ২৯ লাখ টাকা নেন মতিউর। এর বিপরীতে কোনো লাভ বা শেয়ার না দেওয়ায় তারা সিলেট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, মামলায় আসামি মতিউর রহমান, বাদী ইমরান আহমদ ও ১ নম্বর সাক্ষী জাবেদ রনি আহমদের নাম উল্লেখ করেছেন। মতিউর রহমান কুশিয়ারা নদীর বালু উত্তোলনের জন্য জগন্নাথপুর উপজেলার অন্তর্গত খানপুর মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানে জমি লিজ নেওয়ার কথা জানান এবং সেখান থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি পেয়েছেন বলে অনুমতিপত্র দেখান। তবে বালু উত্তোলনের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। তাই ১৬টি শেয়ার (প্রতিটি শেয়ারের বাজার মূল্য ৩০ লাখ টাকা) বিক্রি করবেন। তখন বাদী ইমরান ও ১ নম্বর সাক্ষী জাবেদ রনি আহমদ আসামির কাছ থেকে চারটি শেয়ার ক্রয় করলে আলোচনা সাপেক্ষে ইমরান আহমদ ও ১ নম্বর সাক্ষী জাবেদ রনিকে প্রতিটি শেয়ারের মূল্য বাবদ পাঁচ লাখ টাকা ছাড় দেন এবং চারটি শেয়ারের দাম একত্রে এক কোটি টাকা নির্ধারণ করেন। সে মোতাবেক ২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারি ৪ নম্বর সাক্ষীর বাড়িতে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে নগদ তিন লাখ টাকা আসামিকে দেওয়া হয়। যা আসামির ব্যবসায়িক প্যাডে করা চুক্তিপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
পরবর্তী সময়ে বাকি ৯৭ লাখ টাকা বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষী পরিশোধ করার পর আসামি মতিউরের সঙ্গে ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র সম্পাদন করতে সম্মত হন এবং চুক্তির শর্তমতে ব্যবসার লভ্যাংশ প্রতি মাস শেষে হিসাব করে চারটি শেয়ারের বিপরীতে ১৬ অংশ বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষীকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আসামি নিজে ও তাঁর লোক মারফত ব্যাংকের মাধ্যমে ও নগদে সর্বমোট এক কোটি ২৯ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। যাতে বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষীর চারটি শেয়ার বাবদ এক কোটি টাকা এবং অন্যান্য শেয়ারহোল্ডারদের ২৯ লাখ টাকা। কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও ব্যবসার মাসিক হিসাব সম্পর্কে আসামি মতিউর অংশীজনের কোনো হিসাব বুঝিয়ে দেননি। একপর্যায়ে মতিউর রহমান গা-ঢাকা দেন।
ইমরান আহমদ চৌধুরী জানান, বালু ব্যবসায়ী মতিউর প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে এখন আত্মগোপনে রয়েছে। তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
রনি আহমদ বলেন, কয়েক বন্ধু মিলে এক কোটি ২৯ লাখ টাকা তাঁকে দিয়েছেন। এ ছাড়া নগদে আরও ৫০ লাখ টাকা বিভিন্নজনের কাছে থেকে তাঁকে সংগ্রহ করে দিয়েছেন। সে নারায়ণগঞ্জের একজন ব্যবসায়ীর কাছে থেকে আর ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে যার চুক্তিনামার সাক্ষীও তিনি।
অভিযোগ ও মামলার ব্যাপারে জানতে মা এন্টারপ্রাইজের মতিউর রহমানের মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করেও সাড়া মেলিনি।