ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশি কিশোরীর বাল্যবিবাহ পণ্ড, জরিমানা
Published: 23rd, April 2025 GMT
বাজানো হচ্ছিল বিয়ের বাদ্য। ১৫ বছরের কিশোরীকে কনে সাজিয়ে বসানো হয়েছে বিয়ের পিঁড়িতে। বর ভারতীয় নাগরিক। একটু পরই মালাবদল। এর মধ্যেই পুলিশ নিয়ে হাজির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। পণ্ড করে দেন বাল্যবিবাহের আয়োজন। বিয়ের এ আয়োজন করায় বরের এক স্বজনকে জরিমানা করা হয় ৪০ হাজার টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন।
বরের নাম সুশান্ত নাথ (২৯)। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুরের বাসিন্দা। জরিমানা করা হয়েছে দীপালি রানী নাথকে। তিনি সম্পর্কে বরের খালা। নিজের বাড়িতেই বাংলাদেশি কিশোরীর সঙ্গে সুশান্তের বিয়ের আয়োজন করেন তিনি।
বর সুশান্ত নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবা মাসিকে বাংলাদেশে আমার জন্য কনের সন্ধান করতে বলেছিলেন। এরপর মাসি বিয়ের আয়োজন করেছেন। বিয়ের উদ্দেশ্যে ১৪ এপ্রিল আমি ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসেছি। যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে প্রাপ্তবয়স্ক নয়, সেটি আমি জানতাম না। বিষয়টি নিয়ে আমি অনুতপ্ত।’
ওই কিশোরীর বাবা লক্ষণ চন্দ্র নাথ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি চায়ের দোকানের কর্মচারী। তাঁর কোনো ছেলে নেই। তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েকে আগে বিয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় অর্থকষ্টে রয়েছেন। তাই বিনা খরচে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব আসায় রাজি হয়েছিলেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ওই কিশোরী একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার বিয়ের আয়োজন করায় বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭–এর ৮ ধারা অনুযায়ী দীপালি রানী নাথকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে ওই কিশোরীকে বিয়ে দিতে অভিভাবকদের নিষেধ করেছেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।