দীর্ঘদিন ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতি আর সরকারের প্রস্তাবিত নতুন বিধিনিষেধে রাজধানীসহ দেশের লক্ষাধিক ভ্রাম্যমাণ ও ফুটপাতের খুচরা বিক্রেতারা চরম সংকটে পড়েছেন। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তারা এখন কার্যত দিশেহারা।

গুলশান এলাকার ফুটপাত বিক্রেতা আয়েশা আকতার প্রতিদিন বিক্রি করেন চা, বিস্কুট, কেক, কলা ও সিগারেট। তিনি বলেন, ‘‘ফুটপাতে বেচাকিনি করি, কাস্টমারও কম। জিনিসের দাম বাড়ায় এখন লাভ তো দূরের কথা, সংসার চালানোই দায় হইয়া গেছে।’’

এ রকমই এক সংগ্রামী মানুষ মো.

লিপন মিয়া। বাড্ডা এলাকায় স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি। রাতে নিরাপত্তাকর্মী, দিনে ছোট্ট দোকান নিয়ে চা-পান বিক্রি করেন। নতুন করে লাইসেন্স ও জরিমানার শর্ত নিয়ে তিনিও আতঙ্কিত। বলেন, ‘‘হুনতাছি লাইসেন্স লাগবো, না থাকলে জরিমানা। আমরা কয়টা টেকার মাল বেচি, তাও যদি করতে না পারি, কেমনে চলবো?’’

বনশ্রী এলাকার ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা রফিক মিয়া হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘‘হেঁটে হেঁটে চা বিক্রি করি। এইটাও বন্ধ কইরা দিলে ভিক্ষা করতেও হয়তো পারবো না।’’

বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রব্যমূল্য ও উৎপাদন ব্যয়ের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। পরিবহন খরচ ও কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে তাদের মুনাফা অনেকটাই কমে গেছে। এর ওপর নতুন করে আসছে তামাকজাত পণ্যের বিক্রয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, ভ্রাম্যমাণ দোকানে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা হবে। কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করলে প্রথমবার ৫ হাজার টাকা জরিমানা, পরবর্তীতে দ্বিগুণ, আর বারবার করলে বাড়তে থাকবে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার থেকে লাইসেন্স ছাড়া বিক্রি করলেও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২১ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশে ১৫ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি স্থায়ী খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও, ফুটপাত ও ফেরি করে বিক্রির সাথে যুক্ত রয়েছেন আরো ২০ থেকে ২৫ লাখ ক্ষুদ্র বিক্রেতা। ঢাকাতেই এই সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ।

এদের অনেকেই জানাচ্ছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দিন শেষে যা আয় হয় তা দিয়ে জীবনধারণই কঠিন হয়ে পড়েছে। এদিকে সরকার থেকে তাদের জন্য কোনো সহায়তা কর্মসূচিও নেই।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আতাউল গনি ওসমানী বলেন, ‘‘অর্থনৈতিক সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক খুচরা ব্যবসায়ীরা। সরকারের উচিত তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা এবং ন্যায্য দামে কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা। বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায়, অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি। তাদের বাঁচানো না গেলে শহরের প্রাণচাঞ্চল্য ও অর্থনীতির মজবুত ভিত্তিটিই চরম ঝুঁকিতে পড়বে।’’

ঢাকা/ইভা/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টপ ত ব যবস সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঝিনাইদহে ছেলের হাতে বাবা খুন

ঝিনাইদহে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের কোদালের কোপে শাহাদত হোসেন (৬৩) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ফয়সাল হোসেনকে (২২) আটক করেছে পুলিশ।

সোমবার (১৬ জুন) সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহাদত হোসেন ওই গ্রামের তাইজেল হোসেনের ছেলে।

নিহতের স্বজনেরা অভিযোগ করেন, সকাল ১০টার দিকে শাহাদত হোসেন ছেলে ফয়সাল হোসেনকে সাথে নিয়ে মাঠে কাজ করতে যান। কাজ করার ফাঁকে ফয়সাল কোদাল দিয়ে তার বাবার মাথায় আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে মৃত বাবাকে মাঠে রেখে বাড়িতে গিয়ে মাকে পুরো ঘটনা জানান ফয়সাল। স্বজনেরা দ্রুত মাঠে গিয়ে শাহাদতের লাশ পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেন।

আরো পড়ুন:

কারাগারে ‘ফাঁস নিলেন’ জুলাই-আগস্ট হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সুজন

মহাসড়কের পাশ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ফয়সাল হোসেন দুই বছর ধরে মানসিক বিকারগ্রস্ত। পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কিছুদিন আগে বাড়িতে ফিরেছেন।

ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘‘অভিযুক্ত ফয়সালকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’’

ঢাকা/শাহরিয়ার/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ