এক নারীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) ছানাউল্ল্যাহ গতকাল বুধবার এ আদেশ দেন। আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে গত ১২ মার্চ মেহের আফরোজ শাওন, তাঁর বাবা, ভাইসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিশি ইসলাম নামের এক নারী। তিনি মামলায় বলেছেন, অভিনেত্রী শাওনের বাবা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী তাঁর স্বামী। তিনি আদালতে তাঁদের কাবিননামা জমা দিয়েছেন।

নিশি ইসলামের মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত মেহের আফরোজ শাওনসহ ১২ জনকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারির আদেশ দেন। গতকাল ছিল মামলার হাজিরার দিন। এদিন শাওনসহ ১০ জন আদালতে হাজির না থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

মেহের আফরোজ শাওন ছাড়া তাঁর বাবা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী, ভাই মাহিন আফরোজ, বোন সেঁজুতি ও তাঁর স্বামী সাব্বির, শাওনের বাবার বোনের ছেলে মোখলেছুর রহমান, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, সিটিটিসি ইউনিটের সাবেক এডিসি নাজমুল ইসলাম, সিটিজেন কেবলসের মহাব্যবস্থাপক সুব্রত দাস এবং হিসাব বিভাগের প্রধান মাইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন আদালত।

এ ছাড়া দুজন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। তাঁরা হলেন পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া ও উপপরিদর্শক শাহ আলম। আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন।

মামলায় নিশি ইসলাম দাবি করেছেন, আগের স্ত্রীর কথা গোপন রেখে ও প্রতারণা করে ২০২৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ৫০ লাখ টাকা দেনমোহরে তাঁকে বিয়ে করেন শাওনের বাবা মোহাম্মদ আলী। তিনি পরে জানতে পারেন যে মোহাম্মদ আলী আগে থেকেই বিবাহিত। পরে বিয়ের কথা গোপন করার জন্য আসামিরা তাঁকে চাপ দেন। ৪ মার্চ মোহাম্মদ আলীর গুলশানের বাসায় বাদীকে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। অভিনেত্রী শাওনের বিরুদ্ধেও মামলায় নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন বাদী। পরে বাদীকে বাসা থেকে তুলে এনে মামলায় গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করার অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি সংস্থার এজেন্ট দাবি করা এনায়েত করিমের ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ড মঞ্জুর

রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় নিজেকে বিদেশে সংস্থার এজেন্ট দাবি করা এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমকে ৪৮ ঘণ্টা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার সিএমএম আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা।

পুলিশ ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা আদালতে বলেন, আসামি এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি ‘র’-এর এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে।

অতিরিক্ত পিপি শামসুদ্দোহা আদালতে আরও বলেন, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

অপর দিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, এনায়েত করিম ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন। তিনি কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত নন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত এনায়েত করিম চৌধুরীর ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোড থেকে তাঁকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।

সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।

আরও পড়ুনবিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট দাবি করা সেই এনায়েত করিমকে মিন্টো রোড থেকে গ্রেপ্তার২১ ঘণ্টা আগে

আদালতে জমা দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ৬ সেপ্টেম্বর সকালে নিউইয়র্ক থেকে কাতার এয়ারওয়েজে করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। প্রথম দুই দিন তিনি সোনারগাঁও হোটেলে ছিলেন। পরের কয়েক দিন গুলশানে ছিলেন। তিনি ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ২০০৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট পান।

এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার আমলেও (২০০১-০৬ সাল) একবার এনায়েত করিমকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তখনো তাঁর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নতুন হত্যা মামলায় আমু, আনিসুল, রাজ্জাকসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো
  • বিদেশি সংস্থার এজেন্ট দাবি করা এনায়েত করিমের ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ড মঞ্জুর