সীমাহীন অভিযোগ, তবুও স্বপদে বহাল তিনি
Published: 24th, April 2025 GMT
মৌলভীবাজারে হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নিরীক্ষা (অডিট)-কেন্দ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক কমিটিকে আয়-ব্যয়ের হিসাব নেওয়ার সুযোগ না দিয়ে আদালতে মামলা করেছেন। অন্যদিকে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধেও রয়েছে অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতার বিস্তর অভিযোগ।
বিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৫ সালে হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন রাশেদা বেগম। অভিযোগ রয়েছে, বিগত সরকারের সময় ক্ষমতাসীন দলের পৌর মেয়রের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। দুর্নীতি ও অনিয়মে অনেকাংশেই ভেঙে পড়ে প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক কার্যক্রম। ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়টির কোনো ধরনের নিরীক্ষণ হয় না।
ধারণা করা হয়, ক্ষমতাসীনদের প্রভাবেই সেখানে অডিট কার্যক্রম স্থগিত ছিল। যার কারণে অনিয়মে কোনো পরোয়া ছিল না প্রধান শিক্ষক রাশেদা বেগমের।
লভীবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার পর অডিটের বিষয়ে শিক্ষক প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কেউ কথা বলতে পারেননি। বিদ্যালয়ের স্থায়ী আমানত (এফডিআর হিসাবে) ৩৭ লাখ ৭২ হাজার ২৬৬ টাকা থাকলেও এখন স্থিতি রয়েছে ১২ লাখ টাকা। বাকি টাকা কোন খাতে কীভাবে খরচ করা হয়েছে, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। একাধিক শিক্ষক জানান, স্থায়ী আমানতের মোটা অঙ্ক আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক নিজেই।
২০১৭ সালের অডিট প্রতিবেদনে তাঁর বিরুদ্ধে ৬৫ লাখ ১ হাজার টাকার হিসাবে গরমিলের কথা উল্লেখ রয়েছে। তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের প্রতিনিধি মুহিবুল হাসানের প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ রয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতার প্রভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তাঁর বিরুদ্ধে নিজস্ব লোকজনকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের অভিযোগও রয়েছে। এ ছাড়া বিধি ভঙ্গ করে শিক্ষকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির নতুন শিক্ষকরা বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হলেও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না প্রধান শিক্ষক। অনলাইনে বেতন ও ভর্তি ফি নেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। রসিদ-ভাউচার ছাড়া এসব টাকা আদায় করা হচ্ছে।
চলতি বছরের শুরুতে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করে আয়-ব্যয়ের হিসাবে অসংগতি ও সুষ্ঠু নিয়মে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না জানিয়েছেন। এতে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন করতে জটিলতা দেখা দেয়। পরে তিনি প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব ঠিক করতে এক মাস সময় বেঁধে দেন।
এ ঘটনায় জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের অডিট কমিটি গঠন করে এক নোটিশে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি নিরীক্ষার দিন ধার্য করে দেন। জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক প্রায় আট বছরের আয়-ব্যয় নিরীক্ষার সুযোগ দেননি কমিটিকে। এ বিষয়টি জেনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের সভাপতি জেলা প্রশাসক, তাঁর প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইটিসি)-সহ অডিট কমিটির পাঁচ সদস্যকে বিবাদী করে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সিনিয়র সহকারী জজ সদর আদালতে মামলা করেছেন। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিফতাহুজ্জামান সাজু, শ্যামলী রানী চন্দসহ অনেকে।
অভিযোগ সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক রাশেদা বেগম বলেন, শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের সংকট নিরসনে বিদ্যালয়ের উত্তরপাশে দ্বিতল ভবনের তিনতলায় টিনশেড একটি বিল্ডিং নির্মাণ করার জন্য ২২ লাখ টাকা এফডিআর ভাঙা হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির তৎকালীন সভাপতি, সাবেক পৌর মেয়র ফজলুর রহমানের অনুমতি নিয়ে তা করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়ের আয় কম হওয়ায় শিক্ষকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে পরিপত্র অনুযায়ী টাকা দেওয়া সম্ভব হয় না। মামলা দায়ের ও অডিট করতে বাধা সৃষ্টি সম্পর্কে তিনি বলেন, তাঁকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়ার কৌশল প্রতিহত করার জন্য আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মেহনাজ ফেরদৌস সমকালকে বলেন, হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন করতে গিয়ে আয়-ব্যয়ের হিসাবে অসংগতি ধরা পড়ে। এতে প্রধান শিক্ষককে হিসাব ঠিক করে নিরীক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি অডিট কমিটিকে নিরীক্ষণের সুযোগ না দেওয়ায় তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এরপর তিনি আদালতে গিয়েছেন। আইনিভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করা হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত: বিবিসি
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ফলে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ২০ জনে পৌঁছেছে। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা বিবিসি।
অন্যদিকে আল জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।