দীর্ঘ ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও দ্বিপক্ষীয় সিরিজে মুখোমুখি হয়নি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। সাম্প্রতিক কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর সম্পর্কের সেই বরফ গলার কোনো আশাও দেখা যাচ্ছে না। বরং বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আবারও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিকট ভবিষ্যতেও পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলবে না ভারত।

এই বিষয়ে সোজাসাপটা বার্তা দিয়েছেন বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) সহ-সভাপতি রাজিব শুক্লা। মঙ্গলবারের ওই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই আমাদের অবস্থান। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলি না, কারণ এটা সরকারের নীতিগত অবস্থান।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘ভবিষ্যতেও দ্বিপক্ষীয় সিরিজে পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অবশ্যই আইসিসির ইভেন্টে আমরা খেলি, কারণ এটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার নিয়মের অন্তর্ভুক্ত।’

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয়েছিল ২০১২-১৩ মৌসুমে। সীমিত ওভারের ওই সিরিজেই শেষবার ভারতের মাটিতে খেলেছিল পাকিস্তান। এরপর থেকে দুই দলের দেখা শুধুই আইসিসি ও এশিয়া কাপের মতো টুর্নামেন্টে।

২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তান ভারতের মাটিতে খেললেও, ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ক্ষেত্রে হাইব্রিড মডেল গ্রহণ করে ভারত। পাকিস্তানে না গিয়ে নিজেদের ম্যাচগুলো খেলেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, আর সেই আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রোহিত শর্মার দল।

মঙ্গলবার কাশ্মীরের পাহাড়ঘেরা উপত্যকা পহেলগামে মর্মান্তিক হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হন। অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা পর্যটকদের ওপর গুলি চালায় বলে জানা যায়। ২০১৯ সালের পর কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা এটি।

এই হামলার দায় স্বীকার করে ‘রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামে একটি গোষ্ঠী। তারা দাবি করেছে, অঞ্চলটিতে ৮৫ হাজার বহিরাগত বসতির প্রতিবাদে এই হামলা চালানো হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব স স আই

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ