অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালান ৩ চেয়ারম্যান
Published: 25th, April 2025 GMT
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় কয়েকমাস ধরে অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালাচ্ছেন নৌকা প্রতিকের তিন ইউপি চেয়ারম্যান। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে ঐ তিন ইউনিয়নের জনগণ।
চেয়ারম্যানরা কোথায় আছেন তার হদিস কেউ জানে না। তারা আত্মগোপনে থাকায় নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যথাসময়ে পাচ্ছেন না জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য সনদ ও প্রত্যয়নপত্র।
অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালানো চেয়ারম্যানরা হলেন- ডুমুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলী আহম্মেদ শেখ, গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লাল বাহাদুর বিশ্বাস এবং বর্নি ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিলিয়া আমিনুল।
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচ ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যান। তারা পাঁচ জনই আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা।
সেসময় টুঙ্গিপাড়ার মতো দেশের অধিকাংশ চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ শাখা থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার জন্য আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে সরকার।
তারপর থেকে উপজেলার ডুমুরিয়া, গোপালপুর, কুশলী ও বর্নির ইউপি চেয়ারম্যানরা অফিস করলেও পাটগাতী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ শুকুর আহম্মেদ আত্মগোপনে থেকে যান। তখন তার স্থলে প্যানেল চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস দায়িত্ব পান।
এছাড়া গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা মামলায় গ্রেপ্তার হন কুশলী ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন সর্দার। তিনি কারাগারে যাওয়ার পর তার স্থলে দায়িত্ব পান প্যানেল চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ। তারপর থেকে বাকি তিন ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদ পরিচালনা করতে থাকেন।
২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের উপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হওয়ার পর থেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালাচ্ছেন ঐ তিন ইউপি চেয়ারম্যান। আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যানরা নিজ এলাকার জনগণের ফোনও রিসিভ করছে না। কখনো কখনো রিসিভ করলেও বিভিন্ন আবেদন সচিবদের কাছে রেখে যেতে বলছেন।
বর্নি ইউনিয়নের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন মুন্সী, হাফেজ মোহাম্মদ মোস্তাইনসহ অনেকে বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল ঠিকমতো পরিষদে থাকেন না। নিজেদের কাজ ফেলে রেখে কয়েকমাস ধরে জন্মনিবন্ধনের জন্য ঘুরছি, কিন্তু চেয়ারম্যানের দেখা পাচ্ছি না। আর অন্যান্য সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ।”
তারা আরো বলেন, “চেয়ারম্যানের মোবাইল নম্বরও বন্ধ। চেয়ারম্যানের একটা স্বাক্ষরের জন্য জনগণের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। বর্নি ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন তারা।
বর্নি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, “চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল মাস খানেক হলো পরিষদে আসেন না। প্রতিদিন জনগণের আবেদন বা কাগজপত্র একটা ফাইলে রেখে দেই। আর চেয়ারম্যানের স্বামী আমিনুল ইসলাম দুই একদিন পর পর ফাইলটি নিয়ে যান। আর চেয়ারম্যান কাগজপত্র সই করে পরে আবার পাঠিয়ে দেন। এভাবেই চলছে বর্নি ইউনিয়ন পরিষদ।”
ডুমুরিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম, সাহেদ তালুকদারসহ গোপালপুর ইউনিয়নের অনেকে বলেন, “চেয়ারম্যানরা আত্মগোপানে থাকায় ওয়ারিশান, নাগরিক, চারিত্রিক ও মৃত্যু সনদ নিতে দিনের পর দিন পরিষদে ঘুরেও জনগণ কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না। এতে একদিকে যেমন জনগণের ভোগান্তি, অপরদিকে ব্যাপক সময় আপচয় হচ্ছে। শুনেছি চেয়ারম্যানরা বিভিন্ন মামলার আসামি হওয়ায় আত্মগোপনে রয়েছেন তারা। তাই জনজীবনের দুর্ভোগ কমাতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।”
এ বিষয়ে জানতে গোপালপুর ও ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েও দুই চেয়ারম্যান লাল বাহাদুর বিশ্বাস এবং আলী আহম্মেদ শেখকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে তাদের মোবাইলে একাধিকবার কল ও ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।
তবে বর্নি ইউপি চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুলের হোয়াটসঅ্যাপে কল করলে তিনি রিসিভ করেন। তখন বেশ কিছুদিন পরিষদ কার্যালয়ে আসেন না জানিয়ে মিলিয়া আমিনুল বলেন, “পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের মিথ্যা মামলায় আমাকে ১০৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে। তাই গ্রেপ্তার আতঙ্কে পরিষদে যেতে পারছি না।”
এতে জনপ্রতিনিধিদের অফিস চলাকালীন কার্যালয়ে থাকার সরকারি নির্দেশ অমান্য হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “যেখানে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেখানে দাঁড়ানো যায় না। তাই আমি ঘর পরিবর্তন করেছি, তবে এলাকাতেই আছি।”
তিনি দাবি করেন, তার এলাকার জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে না। কারণ, তার স্বামী ও সচিবের মাধ্যমে অজ্ঞাত স্থানে বসে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি। কোনো কাজহই বাকি থাকে না।
এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জনগণ র পর থ ক আম ন ল আওয় ম উপজ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
রবিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।
প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাকে মেনে নেবেন।”
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, “দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।”
বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।”
শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।”
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান জানান, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তার দল।
তারেক রহমান বলেন, “দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।”
দেশে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সামাজিক উদাসীনতা প্রকট হয়ে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।”
সেজন্য তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজকে তাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইনে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ এবং তার ফি পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে বলা হয়, এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে অনলাইনে বিএনপির দলীয় ওয়েবসাইটে গিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করা যাবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জে ড এম জাহিদ হাসান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ