পোনা কিনতে যাওয়ার পথে মৎস্যচাষি খুন
Published: 25th, April 2025 GMT
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ডুবাইল নামক স্থানে খুন হয়েছেন এক মৎস্যচাষি। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল নামক স্থানে অটোরিকশার গতিরোধ করে তাঁকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়।
নিহত সাইফুল আলম টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সাকরাইল পশ্চিমপাড়ার সাব্বির আহমেদের ছেলে। পুলিশ বলছে, ছিনতাইকারীরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। পরিবারের লোকজনের দাবি, শত্রুতার জেরে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শী অটোরিকশাচালক শফিকুল ইসলামের ভাষ্য, সাইফুল আলম সাকরাইল বাজারে স্টেশনারি দোকান করেন এবং পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে (শফিকুল) বলেন, রাত ৩টার দিকে তাঁর অটোরিকশা নিয়ে হ্যাচারি থেকে পোনা আনার জন্য মির্জাপুরে যাবেন। পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে স্থানীয় জেলে মদন রাজবংশীকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হন তারা। রাত সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ডুবাইল নামক স্থানে পৌঁছালে তিনটি মোটরসাইকেল তাদের অটোরিকশার গতিরোধ করে। অস্ত্র ধরে টাকা-পয়সা দিতে বলে। সাইফুল আলম টাকা বের করছেন এমন সময় একজন তাঁর পেটে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় তাঁর কাছে থাকা ৩০ হাজার টাকা ও তাদের তিনজনের মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায়। এদিকে সাইফুলের পেট থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না তারা। পরে তাঁর (শফিকুল) কাছে থাকা গামছা দিয়ে পেট বেঁধে দেন। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে দ্রুত টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৫টার সময় তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত সাইফুল আলমের বড় ভাই সহকারী অধ্যাপক শফিউল আজম উৎপল বলেন, ‘আমার ভাই পুকুর লিজ নিয়ে ব্যবসা করত। তার কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল কিনা– আমাদের জানা নেই। ছিনতাই করার সময় সে তো টাকা দিয়েই দিছে। তাহলে কেন তাকে ছুরিকাঘাত করা হবে? বিষয়টা আমাদের কাছে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে।’ তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
দেলদুয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেব খান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ছুরিকাঘাতের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, হত্যাকারীদের ধরতে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন হত ছ র ক ঘ ত কর
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫