রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় প্রাণ বাঁচাতে যমুনা নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার প্রায় ২০ ঘণ্টা পর প্রবাসী তরুণ আল আমিন মণ্ডলের (২৫) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার দুপুরে উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের দুর্গম রাখালগাছি খেয়াঘাটের কাছে বড়শিতে আটকে গেলে লাশটি টেনে তোলা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আজ বেলা একটার দিকে লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশের বাঁ পাশে চোখের নিচে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন আছে। এ ঘটনায় গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

নিহত তরুণের নাম আল আমিন মণ্ডল। তিনি পাবনার আমিনপুর থানার সিদ্দিকনগর রামনারায়ণপুর গ্রামের আবু বক্কর মণ্ডলের ছেলে। সাত বছর মালয়েশিয়ায় থেকে চার মাস আগে বাড়িতে আসেন তিনি। বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে গতকাল রাখালগাছি এলাকায় গিয়েছিলেন। তাঁর বাড়ি থেকে রাখালগাছির দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার।

গোয়ালন্দ উপজেলা সদর থেকে রাখালগাছির দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এলাকাটি ঘেঁষে আছে সর্বহারা-অধ্যুষিত পাবনার ঢালারচর। রাখালগাছির সঙ্গে ঢালারচরের সড়ক যোগাযোগ থাকলেও তিন দিক নদীবেষ্টিত হওয়ায় গোয়ালন্দ থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকাই একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গতকাল দুপুরে আল আমিন তাঁর মামা লিটন, বোন আকলিমাসহ কয়েকজনের সঙ্গে ঢালারচর গ্রামের খৈয়মের বাড়িতে বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে যান। সেখানে খাওয়াদাওয়া শেষে মোটরসাইকেলে করে তিনি পাশের গোয়ালন্দের রাখালগাছি বাজারে যান। কিছুক্ষণ পর পাবনার আমিনপুর থানার কোমরপুর গ্রামের শাহ আলী (৩০), রবিউল ইসলামসহ (৩৫) সাত থেকে আটজন চারটি মোটরসাইকেলে করে রাখালগাছি বাজারে আসেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁরা আল আমিনকে মারধর ও ছুরিকাঘাত করতে থাকেন। প্রাণ বাঁচাতে পাশের যমুনা নদীতে ঝাঁপ দেন আল আমিন। এর পর থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত তাঁর কোনো সন্ধান পায়নি পরিবার।

পরিবারের ভাষ্য, ১৫ থেকে ১৬ দিন আগে শাহ আলী চা-নাশতা খাওয়ার কথা বলে আল আমিনের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় মুঠোফোনে আল আমিনকে গালাগাল করেন। এ নিয়ে দুজনের কথা-কাটাকাটি হয়।

দেবগ্রাম ইউনিয়নের রাখালগাছি ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আবু বক্কার বলেন, প্রাণ বাঁচাতে বাজারের পাশের যমুনা নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন আল আমিন। খবর পেয়ে আমিনপুর ও গোয়ালন্দ ঘাট থানার পুলিশ তাঁর খোঁজ করেন। আজ সকাল থেকে লোকজন সন্ধান করতে থাকলে দুপুরের দিকে বড়শিতে লাশ আটকে যায়। এ সময় তাঁর কপালের বাঁ পাশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

আরও পড়ুনচাঁদা না দেওয়ায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত, নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ প্রবাসী তরুণ৩ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ