চট্টগ্রাম নগরের সড়কে অবৈধভাবে চলছে লক্ষাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসব রিকশার নেই অনুমোদন। চালকদেরও নেই লাইসেন্স। কোন সড়কে চলতে পারবে– তার নেই রুট পারমিট। কিন্তু দেড় লক্ষাধিক মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এ দ্রুতগতির যানবাহনটি। সম্প্রতি ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় প্রাণহানির জেরে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশসহ (সিএমপি) সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। জব্দ করা হয়েছে তিন হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা। এই অভিযান নিয়ে নাগরিক সমাজের সাধুবাদ কুড়িয়েছে পুলিশ। কিন্তু দ্রুতগতির এ যানবাহনের আমদানি বন্ধ করা না হলে এর ক্ষতিকর প্রভাব ঠেকানো যাবে না। বিক্রয় কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে বিকিকিনি বন্ধ করতে হবে। কারখানায় তৈরির কাজ ঠেকানো গেলেই রাস্তায় এ যানবাহনটি নামা বন্ধ করা সম্ভব হবে। আর এতেই দ্রুতগতির ব্যাটারিচালিত রিকশার দুর্ঘটনা রোধ, প্রাণহানি বন্ধ এবং অঙ্গহানির ঘটনা হ্রাস পাবে বলে মনে করছেন সড়ক বিশেষজ্ঞরা। 
পুলিশ সড়ক থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করে। নির্দিষ্ট দিন হেফাজতে রাখার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই রিকশা নিয়ে আবার রাস্তায় নামে চালক। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন দোকানে রিকশাগুলো বিক্রিও হচ্ছে নির্বিঘ্নে। পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন, লাইসেন্স, নীতিমালা, রুট পারমিট– এসব সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়। পুলিশ তার এখতিয়ার অনুযায়ী কাজ করছে। পুলিশের এই অভিযানকে হয়রানি ও নিপীড়নমূলক বলছে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক-মালিকরা।
গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নগরের সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করে সিএমপি। এর পর বিভিন্ন সময় ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করে পুলিশ। গত ১৮ এপ্রিল রাতে নগরের কাপাসগোলা এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা উল্টে হিজরা খালে পড়ে সেহেরীশ নামে ছয় মাস বয়সী এক শিশু নিহত হয়। এ ঘটনার পর নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা.

শাহাদাত হোসেন। ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করে সিএমপি। নগরের বিভিন্ন সড়ক ও গ্যারেজে অভিযান চালিয়ে তিন হাজারের বেশি রিকশা জব্দ করা হয়। রিকশাগুলোর ব্যাটারি চার্জিংয়ের পয়েন্টের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। গত বুধবার চালকরা ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের প্রতিবাদে নগরের বাহির সিগন্যাল এলাকায় সড়ক অবরোধ করে। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। পুলিশের দাবি, চালকদের হামলায় তাদের পাঁচজন সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৩৮ জন চালককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। 
এদিকে তিন দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মসূচি পালন করে আসছে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ। তাদের দাবি, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের ক্ষেত্রে ৩ হাজার ২৫০ টাকা জরিমানা দেওয়ার যে বিধান আছে, তা কমিয়ে আনা, জব্দ করা রিকশা, ইজিবাইক ১০ থেকে ২১ দিন হেফাজতে রাখার বিধান প্রত্যাহার করা এবং বিআরটিএ অনুমোদিত লাইসেন্স, নীতিমালা, রুট পারমিট ও সার্ভিস লেন চালু করা।
চালক ও মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রিকশা জব্দ করার ১০ থেকে ২১ দিন ডাম্পিং করে রাখে পুলিশ। এর পর ৩ হাজার ২৫০ টাকা জরিমানা দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হয়। এর বাইরে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন পরিমাণ ঘুষ দিতে হয় বলেও অভিযোগ চালকদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালক বলেন, ‘রিকশাটা একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কিনেছি। প্রতি সপ্তাহে ১১০০ টাকা কিস্তি শোধ করতে হয়। অভিযানে গাড়ি জব্দ করায় এক সপ্তাহ ধরে বেকার। একদিকে সংসার খরচ, অন্যদিকে কিস্তি। এখন গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’ আরেক চালক বলেন, ‘গরিব চালকদের পেটে লাথি না মেরে যেখানে রিকশাগুলো তৈরি হচ্ছে, বিক্রি হচ্ছে, সেখানে অভিযান চালায় না কেন। তাহলেই তো ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ হয়ে যায়। এগুলো কোনো বড় লোক কেনে না। আমাদের মতো গরিব মানুষ কেনে। আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়ে তার পর বন্ধ করে দিক। নয়তো আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কই যাব।’
জানতে চাইলে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রাম শাখার আহ্বায়ক আল কাদেরী জয় সমকালকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক বন্ধে পুলিশের এই অভিযান হয়রানি ও নিপীড়নমূলক। সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষার দায় কেবল শ্রমিকের একার নয়, প্রশাসনেরও রয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করে সরকার এই গরিব মানুষগুলোর পেটে লাথি মারছে, ফলে জীবিকা ও সংসার বাঁচাতে মরিয়া 
এই মানুষগুলো যে কোনো ধরনের বিক্ষোভ করলে দরকার তা যৌক্তিক সমাধানের। অথচ প্রশাসন গায়ের জোরে তা দমন করতে গিয়ে সংঘর্ষ পরিস্থিতি তৈরি করল এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করা হলো। উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে তাদের জেলে পাঠানো হলো। এই সংঘাত ও সংঘর্ষের দায়িত্ব প্রশাসনকেই নিতে হবে। অবিলম্বে জব্দ করা গাড়ি ছেড়ে দিয়ে এই রকম জুলুমি অভিযান বন্ধ করে সড়কের শৃঙ্খলা তৈরি করতে চালক, মালিক, প্রশাসন সকলের মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।’
জানতে চাইলে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মাহমুদা বেগম বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশার বিক্রয় কেন্দ্রে অভিযান চালানো আমাদের এখতিয়ারে নেই। তাছাড়া নিবন্ধন, লাইসেন্স ও রুট পারমিট এসবও পুলিশের কাজ নয়। এগুলো নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ব্যবস্থা নেবে। নগরের মূল সড়কগুলোতে যাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল না করে, এ জন্য জব্দ করে জরিমানা করছে। এগুলো একেবারে জব্দ করে রাখার মতো জায়গাও সিএমপির নেই। তাই নির্দিষ্ট দিন পর ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ তার এখতিয়ার অনুযায়ী কাজ করছে।’ 
সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) আশফিকুজ্জামান আক্তার বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো যান্ত্রিক না, আবার অযান্ত্রিকও না। এগুলোর কোনো লাইসেন্স নেই; অবৈধ। নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। যানজটও তৈরি করছে। এগুলো চট্টগ্রামের মতো একটি বাণিজ্যিক রাজধানীতে চলাচল করতে পারে না। এই ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলবে।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা উল্টে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। এই রিকশাগুলো চট্টগ্রাম নগরকে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় পরিণত করেছে। শিশু নিহতের ঘটনা ওরাই ঘটিয়েছে। পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলেছি, তাদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। শহরে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না।’

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ লকদ র দ র ঘটন আম দ র সরক র নগর র স এমপ

এছাড়াও পড়ুন:

শুধু পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস নয়, উদ্দেশ্য আরও বেশি কিছু

নব্বয়ের দশক থেকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর কৌশলগত লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন। আর তা হলো, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করা। যখন ওয়াশিংটন ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে অসলো শান্তিচুক্তি করেছিল, তখনও তিনি লক্ষ্য থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি। 

তিনি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তিচুক্তির সমালোচনা করলেও ধারাবাহিকভাবে ‘ইরানি হুমকি’ তুলে ধরেছিলেন। এমনকি যখন বিষয়টি বিশ্বব্যাপী বা আঞ্চলিক অগ্রাধিকার ছিল না, তখনও নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে কথা বলতে একাই দাঁড়িয়েছিলেন। 
নেতানিয়াহু সর্বদা চেয়েছেন ইহুদি ইতিহাসে তাঁর ছাপ রেখে যেতে। ইরানি পারমাণবিক হুমকি ধ্বংস করা নেতা হিসেবে নিজেকে তিনি স্মরণীয় করতে চেয়েছেন। 

পরিকল্পনা ব্যর্থ, উচ্চাকাঙ্ক্ষা পুনরুজ্জীবিত 
২০১০ সালের মধ্যে নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এহুদ বারাক সেনাবাহিনীকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় হামলার প্রস্তুতি নিতে বলেন। পাশাপাশি তারা ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যা করার নির্দেশ দেন। তবে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পিছু হটার কারণে সেই অভিযান স্থগিত হয়ে যায়। তৎকালীন চিফ অব স্টাফ গাবি আশকেনাজি, শিন বেট প্রধান ইউভাল ডিস্কিন ও মোসাদপ্রধান মেইর দাগান সবাই সতর্ক করে দিয়েছিলেন, মার্কিন সমর্থন ছাড়া ইরানে আঘাত করার সামরিক ক্ষমতা ইসরায়েলের নেই। 

এহুদ বারাকের সতর্কবার্তায় মার্কিন প্রশাসন কূটনীতির দিকে ঝুঁকে তেহরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে। তবে এতে ক্ষুব্ধ হন নেতানিয়াহু। কিন্তু তাঁর ইরানে বোমা হামলার স্বপ্ন কখনও ম্লান হয়নি। তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। এমনকি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদকে বোমার একটি কার্টুন দেখিয়ে তিনি সতর্ক করেছিলেন, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সীমারেখা অতিক্রম করছে। 

সর্বশেষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নেতানিয়াহু কিছুটা সফলতার দেখা পান। তিনি ট্রাম্পকে পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে যেতে রাজি করাতে সফল হন। রাজনৈতিক ও সামরিক গতি বজায় রাখতে তিনি সামরিক বাহিনীকে বহিরাগত সাহায্য ছাড়াই ইরানের ওপর হামলার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। এই নীতি বাক্যটি তিনি প্রায়ই পুনরাবৃত্তি করেন, ‘বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্রের ভাগ্য অপরিচিতদের ওপর ছেড়ে দেওয়া যাবে না, এমনকি তারা আমাদের মিত্র হলেও।’ 

এর পর তেল আবিব গুপ্তহত্যা এবং সাইবার আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। ২০২০ সালে ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহের হত্যাকাণ্ডে একটি বার্তা ছিল, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। 

প্রকৃতপক্ষে ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ কখনও থামেনি। নেতানিয়াহু এই সংঘাতের স্থপতি হিসেবেই রয়েছেন। নাফতালি বেনেট-ইয়ার ল্যাপিড সরকারের অধীনে নেসেটে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার পরও তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনেট নেতানিয়াহুর অবস্থানকে সমর্থন করে গেছেন। এভাবে নেতানিয়াহু ইসরায়েলের দৈনন্দিন রাজনৈতিক জীবনে ইরানবিষয়ক ফাইলটি গেঁথে দিয়েছেন। কোনো প্রধানমন্ত্রী এটি উপেক্ষা করতে পারবেন না। 

গুপ্ত হামলা থেকে প্রকাশ্য যুদ্ধ 
হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণ তেল আবিবের ভয়কে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। নেতানিয়াহু সরকার একাধিক ফ্রন্টে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। গাজা, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং গোপনে ইরানে হামলা চালায় তারা। 

তেল আবিব বিশ্বাস করে, ২০১০ সালে ইরানে আঘাত না করে তারা একটি কৌশলগত ভুল করেছিল। এখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরও বেশি সুরক্ষিত এবং এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী। কিছু ইসরায়েলি বিশ্লেষক যুক্তি দেন, যদি তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তাহলে তারা এবং তার মিত্ররা আরও সাহসী হয়ে উঠবে। 

বর্তমান যুদ্ধ নেতানিয়াহুর কয়েক দশক ধরে চলা উন্মাদনার চূড়ান্ত পরিণতি। ইসরায়েলি মিডিয়া এখন স্বীকার করছে, অপারেশন ‘লায়নস কারেজ’ ইরানি বিজ্ঞানী, পারমাণবিক স্থাপনা, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) অবকাঠামো এবং সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করে চলছে। কিন্তু উচ্চাকাঙ্ক্ষা আরও গভীর।

শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের নীলনকশা 
ইসরায়েলি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও কৌশলগত পরিকল্পনাকারীদের নথিভুক্ত তথ্য বলছে, ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো ইরানের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন। দেশটির ইসলামী প্রজাতন্ত্র ভেঙে ফেলা, একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রতিরোধ অক্ষের অস্তিত্ব মুছে ফেলা। এ ছাড়া ইরানের নেতৃত্বের ওপর হামলা এবং জ্বালানি তেল অবকাঠামোর ওপর আক্রমণের মাধ্যমে দেশটির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা উস্কে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিগুলো বিশাল, তবে তেল আবিব এটিকে একটি ঐতিহাসিক সূচনা হিসেবে দেখছে। 

এটি আর ছায়াযুদ্ধ নয়। প্রথমবারের মতো, ইসরায়েল প্রকাশ্যে ইরানি ভূখণ্ডের গভীরে আক্রমণ করেছে। তেহরানও সরাসরি হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে। পশ্চিমা শক্তিগুলো দেশটিকে রক্ষা করার জন্য ছুটে এসেছে। 

ইসরায়েল বাজি ধরছে, তারা ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে ভেঙে ফেলতে পারে এবং আগামী কয়েক দশক ধরে পশ্চিম এশিয়ার শক্তির সমীকরণ নতুন করে লিখতে পারে।

তবে হিসাবটি এত সরল নয়। কারণ, ইরান এখনও বিচ্ছিন্ন নয়। নেতানিয়াহু হয়তো অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে ভুগছেন। প্রতিরোধ অক্ষ হিজবুল্লাহ থেকে হুতি এবং ইরাকি ছোট ভোট উপদল পর্যন্ত তেহরানের সঙ্গে একত্রিত হয়েছে। এই অঞ্চলটি আরও বিস্তৃত সংঘাতের জন্য প্রস্তুত। 

নেতানিয়াহু একটি জানালা দেখতে পাচ্ছেন। তেহরান কেবল একটি নয়, বরং অনেকগুলো সীমারেখা অতিক্রম করতে দেখছে। পশ্চিম এশিয়ার বাকি অংশ এমন একটি যুদ্ধ দেখতে পাচ্ছে, যা মানচিত্রটি নতুন করে আঁকতে পারে। 

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ