সড়কে কীভাবে এলো দেড় লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা
Published: 26th, April 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের সড়কে অবৈধভাবে চলছে লক্ষাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসব রিকশার নেই অনুমোদন। চালকদেরও নেই লাইসেন্স। কোন সড়কে চলতে পারবে– তার নেই রুট পারমিট। কিন্তু দেড় লক্ষাধিক মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এ দ্রুতগতির যানবাহনটি। সম্প্রতি ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় প্রাণহানির জেরে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশসহ (সিএমপি) সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। জব্দ করা হয়েছে তিন হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা। এই অভিযান নিয়ে নাগরিক সমাজের সাধুবাদ কুড়িয়েছে পুলিশ। কিন্তু দ্রুতগতির এ যানবাহনের আমদানি বন্ধ করা না হলে এর ক্ষতিকর প্রভাব ঠেকানো যাবে না। বিক্রয় কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে বিকিকিনি বন্ধ করতে হবে। কারখানায় তৈরির কাজ ঠেকানো গেলেই রাস্তায় এ যানবাহনটি নামা বন্ধ করা সম্ভব হবে। আর এতেই দ্রুতগতির ব্যাটারিচালিত রিকশার দুর্ঘটনা রোধ, প্রাণহানি বন্ধ এবং অঙ্গহানির ঘটনা হ্রাস পাবে বলে মনে করছেন সড়ক বিশেষজ্ঞরা।
পুলিশ সড়ক থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করে। নির্দিষ্ট দিন হেফাজতে রাখার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই রিকশা নিয়ে আবার রাস্তায় নামে চালক। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন দোকানে রিকশাগুলো বিক্রিও হচ্ছে নির্বিঘ্নে। পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন, লাইসেন্স, নীতিমালা, রুট পারমিট– এসব সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়। পুলিশ তার এখতিয়ার অনুযায়ী কাজ করছে। পুলিশের এই অভিযানকে হয়রানি ও নিপীড়নমূলক বলছে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক-মালিকরা।
গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নগরের সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করে সিএমপি। এর পর বিভিন্ন সময় ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করে পুলিশ। গত ১৮ এপ্রিল রাতে নগরের কাপাসগোলা এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা উল্টে হিজরা খালে পড়ে সেহেরীশ নামে ছয় মাস বয়সী এক শিশু নিহত হয়। এ ঘটনার পর নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা.
এদিকে তিন দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মসূচি পালন করে আসছে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ। তাদের দাবি, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের ক্ষেত্রে ৩ হাজার ২৫০ টাকা জরিমানা দেওয়ার যে বিধান আছে, তা কমিয়ে আনা, জব্দ করা রিকশা, ইজিবাইক ১০ থেকে ২১ দিন হেফাজতে রাখার বিধান প্রত্যাহার করা এবং বিআরটিএ অনুমোদিত লাইসেন্স, নীতিমালা, রুট পারমিট ও সার্ভিস লেন চালু করা।
চালক ও মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রিকশা জব্দ করার ১০ থেকে ২১ দিন ডাম্পিং করে রাখে পুলিশ। এর পর ৩ হাজার ২৫০ টাকা জরিমানা দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হয়। এর বাইরে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন পরিমাণ ঘুষ দিতে হয় বলেও অভিযোগ চালকদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালক বলেন, ‘রিকশাটা একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কিনেছি। প্রতি সপ্তাহে ১১০০ টাকা কিস্তি শোধ করতে হয়। অভিযানে গাড়ি জব্দ করায় এক সপ্তাহ ধরে বেকার। একদিকে সংসার খরচ, অন্যদিকে কিস্তি। এখন গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’ আরেক চালক বলেন, ‘গরিব চালকদের পেটে লাথি না মেরে যেখানে রিকশাগুলো তৈরি হচ্ছে, বিক্রি হচ্ছে, সেখানে অভিযান চালায় না কেন। তাহলেই তো ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ হয়ে যায়। এগুলো কোনো বড় লোক কেনে না। আমাদের মতো গরিব মানুষ কেনে। আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়ে তার পর বন্ধ করে দিক। নয়তো আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কই যাব।’
জানতে চাইলে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রাম শাখার আহ্বায়ক আল কাদেরী জয় সমকালকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক বন্ধে পুলিশের এই অভিযান হয়রানি ও নিপীড়নমূলক। সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষার দায় কেবল শ্রমিকের একার নয়, প্রশাসনেরও রয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করে সরকার এই গরিব মানুষগুলোর পেটে লাথি মারছে, ফলে জীবিকা ও সংসার বাঁচাতে মরিয়া
এই মানুষগুলো যে কোনো ধরনের বিক্ষোভ করলে দরকার তা যৌক্তিক সমাধানের। অথচ প্রশাসন গায়ের জোরে তা দমন করতে গিয়ে সংঘর্ষ পরিস্থিতি তৈরি করল এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করা হলো। উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে তাদের জেলে পাঠানো হলো। এই সংঘাত ও সংঘর্ষের দায়িত্ব প্রশাসনকেই নিতে হবে। অবিলম্বে জব্দ করা গাড়ি ছেড়ে দিয়ে এই রকম জুলুমি অভিযান বন্ধ করে সড়কের শৃঙ্খলা তৈরি করতে চালক, মালিক, প্রশাসন সকলের মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।’
জানতে চাইলে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মাহমুদা বেগম বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশার বিক্রয় কেন্দ্রে অভিযান চালানো আমাদের এখতিয়ারে নেই। তাছাড়া নিবন্ধন, লাইসেন্স ও রুট পারমিট এসবও পুলিশের কাজ নয়। এগুলো নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ব্যবস্থা নেবে। নগরের মূল সড়কগুলোতে যাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল না করে, এ জন্য জব্দ করে জরিমানা করছে। এগুলো একেবারে জব্দ করে রাখার মতো জায়গাও সিএমপির নেই। তাই নির্দিষ্ট দিন পর ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ তার এখতিয়ার অনুযায়ী কাজ করছে।’
সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) আশফিকুজ্জামান আক্তার বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো যান্ত্রিক না, আবার অযান্ত্রিকও না। এগুলোর কোনো লাইসেন্স নেই; অবৈধ। নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। যানজটও তৈরি করছে। এগুলো চট্টগ্রামের মতো একটি বাণিজ্যিক রাজধানীতে চলাচল করতে পারে না। এই ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলবে।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা উল্টে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। এই রিকশাগুলো চট্টগ্রাম নগরকে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় পরিণত করেছে। শিশু নিহতের ঘটনা ওরাই ঘটিয়েছে। পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলেছি, তাদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। শহরে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ লকদ র দ র ঘটন আম দ র সরক র নগর র স এমপ
এছাড়াও পড়ুন:
আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
এশিয়া কাপে আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। চ্যাম্পিয়নস লিগে মাঠে নামবে ম্যানচেস্টার সিটি, নাপোলি, বার্সেলোনা।
সিপিএল: কোয়ালিফায়ার-১ গায়ানা-সেন্ট লুসিয়া
সকাল ৬টা, স্টার স্পোর্টস ২
আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা
রাত ৮-৩০ মি., টি স্পোর্টস ও নাগরিক
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ
বেলা ৩টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১
কোপেনহেগেন-লেভারকুসেন
রাত ১০-৪৫ মি., সনি স্পোর্টস ২
ম্যানচেস্টার সিটি-নাপোলি
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ১
নিউক্যাসল-বার্সেলোনা
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ২
ফ্রাঙ্কফুর্ট-গালাতাসারাই
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ৫