ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি ১৮ মে
Published: 27th, April 2025 GMT
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে। এরপর আবেদনকারীপক্ষের সময় চেয়ে আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১৮ মে পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন আপিল বিভাগ।
আজ রোববার প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে থাকা আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো.
এর আগে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।
আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণের কারণে যেসব মুক্তিযোদ্ধা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। আগের ধারাবাহিকতায় আজ রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়।
আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রী পরিষদ সচিবের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন। শুরুতে তিনি দুই সপ্তাহের সময়ের আরজি জানান। পরে আপিল বিভাগের রায়ের অংশবিশেষ তুলে ধরে শুনানিতে অংশ নেন তিনি। এ সময় রিট আবেদনকারীপক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী নিহাদ কবির।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।
সর্বশেষ সংশোধন হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে— এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।
এই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এই আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায়। এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর আজ শুনানি শুরু হলো।
আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। তাই রাষ্ট্রীয় পদক্রমের শুরুতেই সাংবিধানিক পদধারীদের গুরুত্ব অনুসারে রাখতে হবে। জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগীয় সদস্যরা রাষ্ট্রীয় পদক্রমের ২৪ নম্বর থেকে ১৬ নম্বরে সরকারের সচিবদের সমপদে উন্নীত হবেন। অতিরিক্ত জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের অবস্থান হবে পদক্রমের ১৭ নম্বরে।
এর আগে অতিরিক্ত জেলা জজদের অবস্থান রাষ্ট্রীয় পদক্রমে উল্লেখ ছিল না। ১৯৮৬ সালের পদক্রমে জেলা ও দায়রা জজদের ২৪ নম্বরে রাখা হয়। কিন্তু সমমর্যাদাসম্পন্ন বিবেচনায় কমান্ড্যান্ট মেরিন একাডেমি, জেলা প্রশাসক, ডিআইজি, এমনকি বিএসটিআইয়ের পরিচালকের পরে ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ।
আপিল বিভাগের রায়ে হাইকোর্টের আট দফা নির্দেশনা কিছুটা সংশোধন করে তিন দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। বলা হয়, যেহেতু সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন, তাই বিরোধপূর্ণ প্রিসিডেন্সে সাংবিধানিক পদধারীরা অগ্রাধিকার পাবেন। জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে জেলা জজ ও সমপদমর্যাদাসম্পন্নরা সরকারের সচিবদের সঙ্গে ১৬ নম্বরে অবস্থান করবেন। জেলা জজদের পরেই অতিরিক্ত সচিবেরা ১৭ নম্বর ক্রমিকে থাকবেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ১৯৭৫ সালে পদক্রমে প্রধান বিচারপতির অবস্থান স্পিকারের সঙ্গে ৪ নম্বরে ছিল। সে সময় উপরাষ্ট্রপতি ২ নম্বরে ছিলেন। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি পদটি বিলুপ্ত হওয়ার পর ৩ নম্বর পদক্রম থেকে প্রধানমন্ত্রী পদটি ২ নম্বর পদক্রমে উন্নীত হয়। রাষ্ট্রপতি ১ নম্বর পদক্রমেই আছেন। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই স্পিকার ও প্রধান বিচারপতি একই পদক্রমে থাকা সত্ত্বেও পরে স্পিকারকে ৩ নম্বর পদক্রমে রেখে প্রধান বিচারপতিকে ৪ নম্বরে নামিয়ে দেওয়া হয়। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। তাই প্রধান বিচারপতিকে স্পিকারের সঙ্গে ৩ নম্বরে রাখতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ন ট অব প র স ড ন স আপ ল ব ভ গ র র য় র ষ ট রপত অবস থ ন ম বর প য় র পর রপত র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
উয়েফার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করবে রিয়াল মাদ্রিদ
ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থা উয়েফার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করতে যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ। দাবিকৃত ক্ষতিপূরণের অঙ্ক হতে পারে ৪৫০ কোটি ইউরো, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। ইউরোপিয়ান সুপার লিগ নিয়ে স্পেনের একটি আদালতের সর্বশেষ রায়ের পর এমন অবস্থান নিয়েছে রিয়াল।
সুপার লিগের পরিকল্পনা আটকে দিয়ে উয়েফা ইউরোপীয় প্রতিযোগিতা আইন ভঙ্গ করেছে বলে এর আগে যে রায় দেওয়া হয়েছিল, সেই রায়ের বিরুদ্ধে করা উয়েফার আপিল বুধবার মাদ্রিদের প্রাদেশিক আদালত খারিজ করে দেন। একই আদালত স্প্যানিশ লিগ লা লিগা এবং স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের আপিলও খারিজ করেন।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদালত সিজেইউ রায় দিয়েছিল, ২০২১ সালে উয়েফা ও ফিফা যে নিয়মগুলো প্রস্তাবিত সুপার লিগ ঠেকাতে ব্যবহার করেছিল, তা ইউরোপীয় আইনের পরিপন্থী। সেই রায় আপিলের পরও বহাল থাকায় রিয়াল মাদ্রিদ এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা এই রায়ে ‘আনন্দিত’, কারণ এটি ‘ক্লাবের উল্লেখযোগ্য ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দাবি করার পথ খুলে দিয়েছে।’
আপিল খারিজের পর বিবৃতি দিয়েছে উয়েফাও। ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থাটি বলেছে, সর্বশেষ এই রায় ‘২০২১ সালে ঘোষিত এবং ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত ‘সুপার লিগ’ প্রকল্পকে বৈধতা দেয় না। একই সঙ্গে এটি উয়েফার ২০২২ সালে গৃহীত ও ২০২৪ সালে হালনাগাদ করা বর্তমান অনুমোদন-নিয়মকেও খর্ব করে না, যেগুলো এখনো কার্যকর রয়েছে।’
আদালতের রায় বিস্তারিত পর্যালোচনার পর পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানিয়েছে উয়েফা। আর লা লিগা জানিয়েছে, তারা আদালতের নতুন রায়কে সম্মান জানালেও এর গুরুত্বকে খাটো করে দেখছে। লিগ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ‘এই সিদ্ধান্ত কোনো নির্দিষ্ট প্রতিযোগিতা কাঠামো অনুমোদন বা সমর্থন করে না, আর ২০২১ সালে ঘোষিত প্রাথমিক প্রকল্প সম্পর্কেও কিছু বলে না, যা পরবর্তীতে আয়োজকেরা পরিবর্তন করেছে।’
২০২১ সালের এপ্রিলে স্পেন, ইতালি ও ইংল্যান্ডের ১২টি ক্লাবের অংশগ্রহণে চালু হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সুপার লিগ প্রকল্প ভেস্তে যায়। প্রথমে ইংলিশ ক্লাবগুলো, পরে ধীরে ধীরে ইতালি ও স্পেনের ক্লাবগুলো সুপার লিগ থেকে সরে আসে। তবে রিয়াল মাদ্রিদ এবং আয়োজক কর্তৃপক্ষ এ২২ স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট এ নিয়ে উয়েফার সঙ্গে আলোচনা ও আইনি লড়াই চালিয়ে যায়।
মাদ্রিদভিত্তিক দৈনিক এএস জানিয়েছে, রিয়াল মাদ্রিদ ও সুপার লিগের আয়োজক সংস্থা এ২২-এর আইনজীবীরা ইতিমধ্যেই উয়েফার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের দাবি প্রস্তুত করছেন। এই পত্রিকার সূত্রমতে, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ৪,৫০০ মিলিয়ন ইউরো, যা আর্থিক ক্ষতি, সম্ভাব্য লাভ হারানো এবং ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে যোগ করা হচ্ছে।