বিল গেটস যে কারণে নিজের মেয়ের ব্যবসায়িক উদ্যোগে বিনিয়োগ করেননি
Published: 27th, April 2025 GMT
মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস কাজ থেকে অবসর নিলেও নিজের প্রতিষ্ঠা করা ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে উদ্ভাবন ও গবেষণার কাজে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু নিজের মেয়ে ফোবি গেটসের নতুন চালু করা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিনির্ভর শপিং অ্যাপ ‘ফিয়া’তে কোনো অর্থ বিনিয়োগ করেননি বিল গেটস। অর্থ বিনিয়োগের পরিবর্তে মেয়েকে ব্যবসাবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। ফিয়া শপিং অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের খুচরা দাম তুলনা করতে সাহায্য করে। এর ফলে ক্রেতারা সহজেই কম দামে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারেন।
নিজের মেয়ের নতুন শপিং অ্যাপে ইচ্ছা করেই বিনিয়োগ না করার কথা জানিয়েছেন বিল গেটস। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, বিনিয়োগ করলে ব্যবসাটি নিবিড়ভাবে তদারকি করতেন তিনি। একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে কাজ করার পরিবর্তে তিনি ফোবিকে কর্মীদের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন এবং তহবিল গঠনের বিষয়টি অন্যদের ওপর ছেড়ে দেন।
আরও পড়ুনবিল গেটসের যেসব ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়নি০৫ মার্চ ২০২৫বিল গেটস সব সময়ই তাঁর সন্তানদের নিজেদের পথ খুঁজো বের করতে উৎসাহ দেন। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, ‘ফিয়ার ওয়েব ব্রাউজার ও অ্যাপ লাইভ হওয়ার পরপরই আমি ভেবেছিলাম, সে নিশ্চয়ই এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করবে। ভাগ্যক্রমে তা হয়নি। আসলে কেনাকাটার বিষয়ে আমি ঠিক টার্গেট ব্যক্তি নই। ফোবি আমার চেয়ে বেশ আলাদা। সে মানুষের সঙ্গে খুব ভালো আচরণ করে। আমরা যখন পারিবারিক ছুটিতে বেড়াতে যাই, তখন আমরা সৈকতে মানুষের থেকে দূরে থাকি। অন্যদিকে ফোবি সমুদ্রসৈকতে গিয়ে মানুষের সঙ্গে দেখা করবে। আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে তাদের আমাদের সঙ্গে নিয়ে আসবে।’
আরও পড়ুননিজের যে সিদ্ধান্তের জন্য অনুতপ্ত বিল গেটস২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ফোবি তাঁর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমমেট এবং জলবায়ুকর্মী সোফিয়া কিয়ান্নির সঙ্গে মিলে বিনা মূল্যের এআই-চালিত শপিং অ্যাপ ফিয়া চালু করেছেন। ৪০ হাজারের বেশি খুচরা বিক্রেতা ও প্ল্যাটফর্মের দাম তুলনা করে বিভিন্ন পণ্য কেনার সুযোগ মিলে থাকে ফিয়ার মাধ্যমে।
গত মাসে এক পডকাস্টে বিল গেটস তাঁর সম্পদের ১ শতাংশের কম অংশ তাঁর সন্তানদের দেওয়ার পরিকল্পনা কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার চেয়ে সন্তানদের নিজের প্রচেষ্টায় সফল হওয়া উচিত।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
আরও পড়ুনবিল গেটস, স্টিভ জবসদের সন্তানেরা কে কোথায়, কী করেন তাঁরা?১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন য় গ কর ব ল গ টস
এছাড়াও পড়ুন:
ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ
আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।
নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।
আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরিমিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।
এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।
বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?
মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবনমহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।
এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।
দানের সংস্কৃতিআজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।
ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।
যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।
আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।
ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।
আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।
আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫