মন্দির ভাঙচুর ও ২০০ বছরের পুরাতন মহাশ্মশান উচ্ছেদের চেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ
Published: 27th, April 2025 GMT
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের উচাখিলায় ২০০ বছরের পুরাতন মহাশ্মশান অপসারণের চেষ্টা ও মন্দির ভাঙচুরের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তাদের অভিযোগ, ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও মো. এরশাদুল আহমেদ মহাশ্মশান ও মন্দির উচ্ছেদ করে গরুর হাট নির্মাণ করতে চাচ্ছেন।
রোববার দুপুর ১২টায় ইশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের চৌরাস্তা এলাকায় মহাসড়কে ৪ শতাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বীর উপস্থিতিতে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে শনিবার বিকেলে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ঈশ্বরগঞ্জ থানায় হাজির হয়ে মহাশ্মশান উচ্ছেদের চেষ্টা ও মন্দির ভাঙচুরের প্রতিবাদে মানববন্ধন করার জন্য ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর একটি আবেদন করেন।
ঈশ্বরগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবাশীষ কর্মকার বলেন, ‘গতকাল থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে ইউএনওর ভুল বোঝাবুঝির কারণে আজকে তারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়ন রয়েছে।’
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক পিন্টু চৌধুরী বলেন, ‘উচাখিলা মহাশ্মশানটি আমাদের ২০০ বছরের ঐতিহ্য। এখানে আমাদের মন্দির নির্মাণের কাজ চলছে। ইউএনও এরশাদুল আহমেদ আমাদেরকে বিগত কয়েকদিন যাবত বলছেন, মহাশ্মশানের জায়গাটিতে গরুর হাট নির্মাণ করা হবে। আর মহাশ্মশানটি অন্য একটি জায়গায় স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু মহাশ্মশান এবং মন্দির স্থানান্তরযোগ্য নয়। গতকাল ইউএনওর নির্দেশে একটি মহল বালু ভরাটের নামে আমাদের মন্দিরটি ভেঙে দেয়। এতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আজকে রাস্তায় নেমে আসে।’
উচাখিলা মহাশ্মশান কমিটির সভাপতি পরেশ সাহা সমকালকে বলেন, ‘মহাশ্মশানটি সিএস ২২১ দাগে অবস্থিত। এটি ২০০ বছর যাবত মন্দির এবং মহাশ্মশান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমাদেরকে এ জায়গা থেকে উচ্ছেদ করে দেওয়ার জন্য একটি পক্ষ কয়েক মাস যাবত হুমকি ধামকি দিচ্ছে। অবশেষে গরুর হাট তৈরির নাম করে আমাদের মহাশ্মশানের জায়গায় বালি ভরাট করে উচ্ছাদের চেষ্টা করছে তারা। গতকাল আমাদের মন্দিরের সবগুলো পিলার ভেঙে দেয়। এর প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর আঘাতের বিচার সরকারকে অবশ্যই করতে হবে।’
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্য সচিব বিজয় মিত্র শুভ বলেন, ‘মহাশ্মশানটি দখল এবং অপসারণ করার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি ধামকি আসছিল। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি আগে থেকে অবগত করেছিলাম। কিন্তু তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ঐতিহ্যবাহী মহাশ্মশানটি যেখানে আছে সেখানেই এটি রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি। আর এর পেছনে যদি কেউ কলকাঠি নেড়ে থাকেন তাহলে তার বিচার দাবি করছি।’
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ইউএনও মো.
তিনি বলেন, ‘আমি শ্মশানের সংস্কার কাজ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। একটি পক্ষ আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মন্দির এবং শ্মশান ভাঙচুর করে আমার ওপর দায় চাপাতে চাচ্ছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ মন দ র ২০০ বছর আম দ র মন দ র
এছাড়াও পড়ুন:
নেত্রকোনায় বাবরকে নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর মন্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন
নেত্রকোনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা অনুষ্ঠানে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে জড়িয়ে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নেত্রকোনা শহরের বড়বাজার এলাকায় ‘সচেতন আলেম ও ছাত্র–জনতা’র ব্যানারে এ কর্মসূচি হয়।
খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব গাজী মুহাম্মাদ আবদুর রহিমের সভাপতিত্বে দুপুর ১২টার দিকে শুরু হওয়া ঘণ্টাব্যপী মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম মনিরুজ্জামান, জেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন খান, হেফাজতে ইসলামের সদস্যসচিব মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মাওলানা আতাউর রহমান, ওলামা দলের নেতা হাফেজ মিসবাহুদ্দিন তালুকদার, খেলাফত যুব আন্দোলনের সভাপতি মুফতি মুসা শেখ, খেলাফত মজলিসের নেতা মুফতি মো. আব্দুল্লাহ, পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেহরুল আলম, খেলাফত আন্দোলনের নেতা মাওলানা জাকির হোসেন, ছাত্রনেতা মাওলানা বীন ইয়ামিন, মাওলানা আবরার ফাহাদ, মাওলানা মোতালিব খান, হাফেজ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।
আরও পড়ুনযদি অস্ত্র হ্যান্ডলই করতে না পারেন, নিয়ে আসছিলেন কেন: নেত্রকোনায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী২৭ জুলাই ২০২৫মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, লুৎফুজ্জামান বাবর নেত্রকোনা–৪ (মদন–মোহনগঞ্জ–খালিয়াজুরি) আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বিএনপি সরকারের আমলে সফল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ওই সময় তিনি দলমত–নির্বিশেষে নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও জেলার বহু বেকার তরুণ–তরুণীদের চাকরি দেওয়াসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেন। তাঁকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় নেত্রকোনার জনগণ মর্মাহত হয়েছেন। এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে তাঁর এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
গত রোববার দুপুরে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় পুরাতন কালেক্টরেট মাঠে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি’র অংশ হিসেবে পথসভা করা হয়। অনুষ্ঠানে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বড় একটি ঘটনা হলো, ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান। যদি অস্ত্র হ্যান্ডলই করতে না পারেন, তবে নিয়ে আসছিলেন কেন আপনি? আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় এই অস্ত্রকাহিনির কারণে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মধ্যে পড়েছে। অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে।’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, ‘আমি বাবর ভাইকে (সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর) সম্মান করি, তিনি কারা নির্যাতিত নেতা। কিন্তু আপনার ওই কাজ আমি সমর্থন করি না, করি না, করি না। আপনার এই কাজের কারণে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারেনি। হাসিনার মতো একজন খুনি ও ফ্যাসিস্ট ক্ষমতায় এসেছিলেন।’ এ নিয়ে ২৭ জুলাই প্রথম আলোর অনলাইনে ‘যদি অস্ত্র হ্যান্ডলই করতে না পারেন, নিয়ে আসছিলেন কেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।