ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের উচাখিলায় ২০০ বছরের পুরাতন মহাশ্মশান অপসারণের চেষ্টা ও মন্দির ভাঙচুরের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তাদের অভিযোগ, ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও মো. এরশাদুল আহমেদ মহাশ্মশান ও মন্দির উচ্ছেদ করে গরুর হাট নির্মাণ করতে চাচ্ছেন। 

রোববার দুপুর ১২টায় ইশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের চৌরাস্তা এলাকায় মহাসড়কে ৪ শতাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বীর উপস্থিতিতে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে শনিবার বিকেলে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ঈশ্বরগঞ্জ থানায় হাজির হয়ে মহাশ্মশান উচ্ছেদের চেষ্টা ও মন্দির ভাঙচুরের প্রতিবাদে মানববন্ধন করার জন্য ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর একটি আবেদন করেন।

ঈশ্বরগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবাশীষ কর্মকার বলেন, ‘গতকাল থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে ইউএনওর ভুল বোঝাবুঝির কারণে আজকে তারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়ন রয়েছে।’

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক পিন্টু চৌধুরী বলেন, ‘উচাখিলা মহাশ্মশানটি আমাদের ২০০ বছরের ঐতিহ্য। এখানে আমাদের মন্দির নির্মাণের কাজ চলছে। ইউএনও এরশাদুল আহমেদ আমাদেরকে বিগত কয়েকদিন যাবত বলছেন, মহাশ্মশানের জায়গাটিতে গরুর হাট নির্মাণ করা হবে। আর মহাশ্মশানটি অন্য একটি জায়গায় স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু মহাশ্মশান এবং মন্দির স্থানান্তরযোগ্য নয়। গতকাল ইউএনওর নির্দেশে একটি মহল বালু ভরাটের নামে আমাদের মন্দিরটি ভেঙে দেয়। এতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আজকে রাস্তায় নেমে আসে।’

উচাখিলা মহাশ্মশান কমিটির সভাপতি পরেশ সাহা সমকালকে বলেন, ‘মহাশ্মশানটি সিএস ২২১ দাগে অবস্থিত। এটি ২০০ বছর যাবত মন্দির এবং মহাশ্মশান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমাদেরকে এ জায়গা থেকে উচ্ছেদ করে দেওয়ার জন্য একটি পক্ষ কয়েক মাস যাবত হুমকি ধামকি দিচ্ছে। অবশেষে গরুর হাট তৈরির নাম করে আমাদের মহাশ্মশানের জায়গায় বালি ভরাট করে উচ্ছাদের চেষ্টা করছে তারা। গতকাল আমাদের মন্দিরের সবগুলো পিলার ভেঙে দেয়। এর প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর আঘাতের বিচার সরকারকে অবশ্যই করতে হবে।’ 

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্য সচিব বিজয় মিত্র শুভ বলেন, ‘মহাশ্মশানটি দখল এবং অপসারণ করার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি ধামকি আসছিল। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি আগে থেকে অবগত করেছিলাম। কিন্তু তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ঐতিহ্যবাহী মহাশ্মশানটি যেখানে আছে সেখানেই এটি রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি। আর এর পেছনে যদি কেউ কলকাঠি নেড়ে থাকেন তাহলে তার বিচার দাবি করছি।’

এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ইউএনও মো.

এরশাদুল আহমেদ সমকালকে বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমনটা হয়েছে। মন্দির বা মহাশ্মশান সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের কোনো পদক্ষেপ নেই। গরুর হাটে কাজ করার সময় ভেকু মেশিনের ড্রাইভার অসাবধানতাবশত মন্দিরের পিলার ভেঙে থাকতে পারে। তবে আমি শ্মশান কমিটির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি শ্মশানের সংস্কার কাজ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। একটি পক্ষ আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মন্দির এবং শ্মশান ভাঙচুর করে আমার ওপর দায় চাপাতে চাচ্ছে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ মন দ র ২০০ বছর আম দ র মন দ র

এছাড়াও পড়ুন:

শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে ‍শিবচর থানায় মামলাটি করেন।

এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।

মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চান না সাত কলেজের শিক্ষকেরা
  • পাবনায় পুলিশ দেখে পালালেন শিকারিরা, উদ্ধার ৪৫টি ঘুঘু অবমুক্ত
  • দুর্গাপূজায় অরাজকতা রোধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান মহিলা পরিষদের
  • বন কর্মকর্তার ১৭ বিয়ে: আদালতে মামলা, তদন্তে পিবিআই
  • শেরপুরে বেশি দামে সার বিক্রি: ২ ব্যবসায়ীকে সোয়া লাখ টাকা জরিমানা
  • শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
  • সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তনের দাবিতে ৫টি পরিবেশবাদী সংগঠনের মানববন্ধন
  • ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে মানববন্ধন
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁর মাকে হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
  • কুড়িগ্রামে সারের দাবিতে সড়কে কৃষকদের বিক্ষোভ