সম্প্রতি নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দাবিতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে দেশের নাগরিক সমাজের ‘মূলধারা’ নির্বাচনের পক্ষে ভাষ্য তৈরি করছে। যুক্তি– গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে নির্বাচনের বিকল্প নেই। সুতরাং অচিরেই নির্বাচন লাগবে। মজার বিষয়, সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন জরিপে দেশের ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ লোক সংস্কারের পর নির্বাচনের পক্ষে। জরিপগুলো পরিচালনা করেছে দৈনিক যুগান্তর, কালবেলা, খালেদ মুহিউদ্দীনের জানতে চাইসহ একাধিক সংবাদমাধ্যম।
নির্বাচন
কালবেলা পত্রিকার একটি অনলাইন জরিপে প্রশ্ন ছিল: ‘নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে গেলে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, সতর্ক করল বিএনপি। আপনিও কি তাই মনে করেন?’ ৮০ হাজার লোক এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। ৮২ শতাংশ ‘না’ এবং ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ। ২ শতাংশের মন্তব্য নেই।
খালেদ মুহিউদ্দীনের আরেকটি অনলাইন জরিপের প্রশ্ন ছিল: ‘ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন, এমন দাবি সামনে রেখে বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। প্রিয় দর্শক, এই উদ্যোগ সমর্থন করেন কি?’ এই প্রশ্নের জবাবে ৭৭ শতাংশ ‘না’ ভোট দিয়েছে। ‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে ২৩ শতাংশ। দৈনিক যুগান্তরের একটি অনলাইন জরিপের প্রশ্ন ছিল: ‘নববর্ষে জাতির আকাঙ্ক্ষা দ্রুত ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। রুহুল রিজভীর এই বক্তব্যকে কি সমর্থন করেন?’ ৮৫ শতাংশ ভোটার এই প্রশ্নের জবাবে ‘না’ ভোট দিয়েছে। ১৩ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ এবং ২ শতাংশ ‘মন্তব্য নেই’ জানিয়েছে।
শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শরিকদের প্রধান দাবি– শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা এবং আওয়ামী লীগের বিচার করা। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করছে। কালবেলা পত্রিকার এ সংক্রান্ত একটি অনলাইন জরিপের প্রশ্ন ছিল: ‘মোদির কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছেন ড.
সরকারের মেয়াদ
বর্তমানে রাজনীতিতে নির্বাচন ও সংস্কার বিতর্কে নতুনভাবে যোগ হয়েছে ড. ইউনূসের সরকার প্রসঙ্গ। গত সপ্তাহে ‘মার্চ ফর ড. ইউনূস’ লেখা ব্যানারযোগে এক ঝাঁক তরুণ ও কয়েকজন প্রবীণকে মাঠে তৎপর দেখা গেছে। এ-সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন দিয়ে জনমত যাচাই করেছে দৈনিক যুগান্তর। জরিপের প্রশ্ন ছিল: ‘সাধারণ মানুষ চাচ্ছে এই সরকার আরো পাঁচ বছর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাক। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের এই মন্তব্যের সাথে কি আপনি একমত?’ ৯০ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’ ভোট দিয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ। গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যাপারে এ ধরনের ফলাফল মূলত বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে জনঅসন্তোষের প্রতিফলন।
ভোটারের মনোভাব
অনলাইন জরিপের ভোটারদের মনোভাব বোঝার জন্য যুগান্তর পত্রিকার একটি জরিপ গুরুত্বপূর্ণ। এতে ভোটাররা কোনোভাবে পক্ষপাতদুষ্ট কিংবা হুজুগে কিনা, তার ইঙ্গিতও পাওয়া যায়। যেমন, ‘বিক্ষোভে গিয়ে যারা জুতার দোকানে লুটপাট করেছে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন?’ ৯৪ হাজার লোক এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। মুসলিমবিশ্বে ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে তীব্র মনোভাব গড়ে উঠেছে। দেশে সম্প্রতি একটি অংশ এই সুযোগে ইসরায়েলি পণ্যের কথা বলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে দোকান লুটপাট করেছে। সাধারণ মানুষ এ ধরনের হুজুগেপনার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে, যা জরিপেও উঠে এসেছে। ৯৪ শতাংশ ভোটার জড়িতদের শাস্তি দিতে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছে। মাত্র ৪ শতাংশ ভোটারের অবস্থান ‘উচিত না’। ২ শতাংশের মন্তব্য নেই।
সমাপনী বিশ্লেষণ প্রতিটা জরিপের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তেমনি অনলাইন জরিপেরও কিছু ঘাটতি থাকে। এখানে উপস্থাপিত জরিপগুলোর ফলাফল শেষ পর্যায়ে কমবেশি হতে পারে। তবে সম্ভাব্য ফলাফল স্পষ্ট। এ ধরনের জরিপের সঙ্গে সরাসরি স্মার্টফোন ব্যবহার ও ইন্টারনেটের সম্পর্ক রয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত থাকে ওই জনগোষ্ঠীর মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা, বয়স এবং সাম্প্রতিক আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ।
২০২৫ সালের ৫ জানুয়ারি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত জরিপমতে, দেশের ৭০ শতাংশ বা দুই-তৃতীয়াংশের বেশি পরিবার একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করে। তবে অর্ধেক পরিবার এখনও ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে না। দেশের ২ হাজার ৫৬৮টি এলাকার ৬১ হাজার ৬৩২টি পরিবার থেকে এসব তথ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে এই ফলাফল জানা গেছে। দেশের একটি সাংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল ফোন ও ব্রডব্যান্ড মিলিয়ে দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটি, যা গত জুনে ছিল ১৪ কোটি ২২ লাখ।
সর্বোপরি, এখানে উপস্থাপিত জরিপের ভিত্তিতে বলা যায়, দেশের একটি বড় অংশ রাজনৈতিক অবস্থার মৌলিক পরিবর্তনের পক্ষে। একই সঙ্গে জরিপে পুরোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে।
ইফতেখারুল ইসলাম: সহসম্পাদক, সমকাল
iftekarulbd@gmail.com
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত র জন ত ক ব যবহ র সরক র র একট ফল ফল
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের আলোচনা ও ঐকমত্যের সূচনাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। দলটি বলেছে, আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জনগণ শুধু কথায় নয়, বাস্তবে সংস্কার ও বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতির পদক্ষেপ দেখতে চায়।
শুক্রবার জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
তারা বলেন, এই উচ্চপর্যায়ের সংলাপ দেশে রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত অভিপ্রায় অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, অধ্যাপক ইউনূস এবং তারেক রহমানের বৈঠক ও বিবৃতিতে আগামী বছরের পবিত্র রমজানের আগেই একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ এবং তার পূর্বশর্ত হিসেবে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচারের প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জনের ঘোষিত প্রত্যয়ে রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গণমানুষের রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দাবি- গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাঠামোগত মৌলিক সংস্কার এবং গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচারের ব্যবস্থা। এই বিষয় দুটির দৃশ্যমান অগ্রগতিই কেবল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ভিত্তি রচনা করতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সমাজের শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও পেশাজীবীদের মতামত, আকাঙ্ক্ষা ও অংশগ্রহণে রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মৌলিক সংস্কারের লক্ষ্যে দ্রুত ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়নের আহ্বান জানায় জেএসডি।