ইমরান খানকে মুক্তি দিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান পিটিআইয়ের
Published: 29th, April 2025 GMT
ইমরান খানকে মুক্তি দিয়ে সরকারের প্রতি সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
সম্প্রতি ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনা ও নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এ আহ্বান জানিয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল।
গতকাল সোমবার সিনেট অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান পিটিআইয়ের সিনেটর সৈয়দ আলী জাফর।
আরও পড়ুনসিমলা চুক্তি স্থগিত করার পাকিস্তানের হুমকি কি যুদ্ধ ঘোষণার শামিল৪ ঘণ্টা আগেসৈয়দ আলী জাফর সিনেট অধিবেশনে বলেন, মানুষ মোদির নাটকের চিত্রনাট্য খুব ভালো করেই জানে। তিনি বলেন, ভারত সরকার একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করতে পারে না।
পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহতের ঘটনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেন পিটিআইয়ের এই নেতা সৈয়দ আলী জাফর। তিনি বলেন, মোদি ভারতকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুনপাকিস্তান যেকোনো কিছুর জন্য তৈরি, ভারত চেষ্টা করে দেখতে পারে: খাজা আসিফ৯ ঘণ্টা আগেঅপরদিকে সিনেটে বিরোধীদলীয় নেতা সিনেটর শিবলী ফারাজ বলেন, ‘পাকিস্তানের সুরক্ষার ক্ষেত্রে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’ সিনেটে বক্তব্য দিতে গিয়ে জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ফারাজ। তিনি বলেন, পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক—দুই ধরনের সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে।
নয়াদিল্লির সমালোচনা করে পিটিআইয়ের নেতা বলেন, পাকিস্তানকে ভাঙার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেছে ভারত। এখনো পাকিস্তানবিরোধী বয়ান তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছে।
আরও পড়ুনপাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত১৮ ঘণ্টা আগে২২ এপ্রিলের ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন নেপালি নাগরিকও ছিলেন। এই হামলার জন্য ভারত সরকার পাকিস্তানকে দায়ী করছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
পিটিআইয়ের এই নেতা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি মোদি সরকার পাকিস্তানের এক ফোঁটা পানিও অন্যত্র সরায়, তবে তা শত্রুর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫