নড়াইলের একমাত্র মৎস্য প্রজনন ও উৎপাদন কেন্দ্রটি কার্প জাতীয় পোনা উৎপাদনে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৫-৮৬ সালে রাষ্ট্রীয় স্বর্ণপদক লাভ করে। ১৯৯৬ সালে কেন্দ্রটিতে রেণু উৎপাদন চলে। এরপর আর কার্প জাতীয় পোনার উৎপাদনে যেতে পারেনি। ২০০৪ সালে একটি প্রকল্পের অধীনে গলদা চিংড়ির রেণু পোনা উৎপাদন শুরু হয়। পরপর দুই বছর উৎপাদনও হয়েছিল। তাও বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে সম্ভাবনা সত্ত্বেও নদী-বিল-খাল ও ঘের সমৃদ্ধ জেলার মাছ চাষিদের কাজে আসছে না কেন্দ্রটি।
শহরের ভাদুলিডাঙ্গা এলাকায় ১৯৬৪ সালে ৯ একর ৭৫ শতাংশ জায়গায় আটটি বড় পুকুর নিয়ে নড়াইল মৎস্য খামারের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৮২ সালে একমাত্র মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছিল। বর্তমানে ছয়টি পদের মধ্যে রেণু উৎপাদন সহকারী, গলদা উৎপাদন বিশেষজ্ঞ, পাম্পচালক ও নৈশপ্রহরী নেই। খামার ব্যবস্থাপক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থাকলেও বসে বসে বেতন নেন।
কেন্দ্রের খামার ব্যবস্থাপক মো.

সেকেন্দার আলী বলেন, ‘আমরা এসেছি কাজ করতে। আমাদের বদলির চাকরি। সরকার আমাদের যেখানে পাঠাবে, সেখানেই আমরা কাজ করব।’ খামারে বখাটেদের আড্ডার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অফিস চলাকালে বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।’
২০০৪ সালে ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পোনা উৎপাদন ব্যবস্থাকে উন্নত করতে খামারের আটটি পুকুর সংস্কার ও যন্ত্রপাতি কেনা হয়। একটি প্রকল্পের আওতায় একই বছর গলদা চিংড়ি রেণু পোনা উৎপাদন শুরু হয়েছিল। সেবার ৪০ হাজার এবং পরের বছর ২ লাখ রেণু উৎপাদন হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় পরের বছর থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কালিয়ার চাঁচুড়ী এলাকার মৎস্যচাষি আশরাফুল ইসলামের ভাষ্য, ‘আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে পোনা সংগ্রহ করি। সব সময় ভালো হয় না এবং আনতেও প্রচুর ব্যয় হয়। সরকারি হ্যাচারির পোনা পাওয়া গেলে নির্ভেজাল ও দামে কম হতো।’
সরেজমিন কেন্দ্রটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। জানা গেছে, যন্ত্রপাতি ও পাম্প মেশিন আগেই চুরি হয়ে গেছে। বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র অযত্নে মরিচা ধরেছে। পুকুর পানিশূন্য। শুষ্ক মৌসুমে (নভেম্বর-জুন) পানি থাকে না। 
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, কেন্দ্রটি বখাটেদের আড্ডার স্থলে পরিণত হয়েছে। কুড়িগ্রাম এলাকার মিথুন ঘোষের ভাষ্য, তিন পাশের প্রাচীরের নিচ দিয়ে বখাটেরা ভেতরে প্রবেশ করে আড্ডা দেয়। অনৈতিক কাজ হয় বলেও শুনেছেন তারা।
মৎস্য অফিস থেকে জানা গেছে, জেলায় প্রায় পাঁচ কোটি সাদা ও গলদার রেণু পোনার চাহিদা রয়েছে। নড়াইলে ১০ হাজার ৪২৫টি পুকুর এবং ৫ হাজার ৩৯১টি চিংড়ি ঘেরসহ ১৫ হাজার ৮১৬টি ঘের-পুকুর আছে। চিংড়ি ২ হাজার ৩০০ হেক্টর এবং পুকুর ও ধানক্ষেত মিলিয়ে ১ হাজার ৮৪৪ হেক্টরে মাছ চাষ হয়। প্রাকৃতিকভাবে সাতটি নদী, ২৩৮টি খাল, বিল, প্লাবন ভূমি, জলাশয় ও বরোপিটেও চাষ হচ্ছে। এসব উৎস থেকে সাদা, দেশি এবং চিংড়ি মাছের উৎপাদন হয় ২১ হাজার ৮০৮ টন। জেলায় মাছের চাহিদা রয়েছে ১৬ হাজার ৬৬০ টন। এ চাহিদা মিটিয়ে ৫ হাজার ১৪৮ টন মাছ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। 
জেলায় রেণু সংগ্রহের ব্যবস্থা না থাকায় মৎস্য সমিতির প্রায় ১৩ হাজার সদস্যকে বাইরে থেকে চড়া মূল্যে পোনা কিনতে হয় বলে জানান জেলা ফিশ কালচার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম আকরাম শাহীদ চুন্নু। তিনি বলেন, সরকারি হ্যাচারিটি চালু হলে মৎস্যচাষিরা উপকৃত হবেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম বদরুজ্জামান বলেন, কেন্দ্রে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। পদগুলোয় নিয়োগ দিতে বারবার কর্তৃপক্ষকে জানালেও সুরাহা হয়নি। বরাদ্দ পাওয়া গেলে পুকুর সংস্কার করা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

নেতানিয়াহু অঞ্চলজুড়ে আগুন লাগাতে চাইছেন: ইরানের প্রেসিডেন্টকে এরদোয়ান

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আগুন লাগাতে চাইছেন বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, নেতানিয়াহু ইরানে হামলা চালিয়ে পারমাণবিক আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন। গতকাল শনিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে এক ফোনালাপে এরদোয়ান এ কথাগুলো বলেছেন।

এরদোয়ানের দপ্তরের দেওয়া এক বিবৃতি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইরানি প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনালাপে এরদোয়ান বলেছেন, গাজায় হওয়া জাতিগত হত্যার ঘটনা থেকে বিশ্বের দৃষ্টি সরাতে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

ইরানি প্রেসিডেন্ট ছাড়াও সৌদি আরব, পাকিস্তান, জর্ডান ও মিসরের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও কথা বলেছেন এরদোয়ান। ইসরায়েল-ইরান সংঘাত এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি।

শনিবার সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ফোনালাপে এরদোয়ান সতর্ক করে বলেন, নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলই এখন এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। তুরস্ক সরকারের যোগাযোগবিষয়ক দপ্তরের বিবৃতি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

দপ্তরের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, এরদোয়ান মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন। সিসিকে এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েলের হামলা গভীরভাবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করেছে। আইনের তোয়াক্কা না করার যে মনোভাব নেতানিয়াহুর মধ্যে দেখা গেছে তা বিশ্বের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকির।

এরদোয়ান আরও সতর্ক করেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ