হাওরে ধানের বাম্পার ফলন, দাম নিয়ে চিন্তায় কৃষক
Published: 30th, April 2025 GMT
মাথার ওপর কড়া রোদ। হাওরজুড়ে এলোমেলো তপ্ত হাওয়া। নতুন সোনালী পাকা ধানের গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ। গনগনে এই রোদের মধ্যেই কিশোরগঞ্জের হাওরগুলোতে চলছে অন্যরকম উৎসব। সেখানে কৃষকরা ধান কাটা, শুকানো ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেছেন। শুধু কৃষকরা নন, তাদের সহযোগিতা করছে পরিবারের সদস্যরাও। সামর্থ্যবান কৃষকরা এই কাজে শ্রমিকদের ভাড়া করেছেন। ধান কাটার কাজে ব্যবহার হচ্ছে কম্বাইন্ড হারভেস্টার।
কিশোরগঞ্জে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে দাবি করেছে কৃষি বিভাগ। তাদের পরামর্শ ৮০ ভাগ পাকলেই যেন কেটে ফেলা হয় সব ধান। কৃষকরা বলছে, দীর্ঘ খরা না থাকলে ফলন আরো বেশি হতো। লাভ তো দূরে খরচের টাকা উঠবে কিনা সেটা নিয়েই শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
কৃষকরা জানান, মৌসুমের শুরুতে ধানের দাম ১১০০ টাকা মণ ছিল। বর্তমানে পাকা ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৩০ থেকে ৯৫০ টাকা মণ দরে। দীর্ঘ খরার কারণে এবার সেচে খরচ হয়েছে অন্যবারের চেয়ে দ্বিগুণ। লোকসান হলে ধান চাষে আগ্রহ হারাবেন তারা। সরকারের উচিত ফসলে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।
আরো পড়ুন:
সুনামগঞ্জের হাওরে বজ্রপাত, ধানকাটা শ্রমিকের মৃত্যু
হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা
যন্ত্রের সাহায্যে ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন কৃষকরা
জেলার নিকলী উপজেলার বড় হাওরে পুরো পরিবার নিয়ে ধান কেটেছেন কৃষক আবুল কালাম। তিনি চার কাঠা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। প্রতিকাঠা জমিতে ধান উৎপাদনে মণ হিসেবে খরচ হয়েছে তারা ১১০০ টাকার মতো। যারা ধান কিনতে আসছেন তারা ৯৩০ থেকে ৯৫০টাকা মণ দরে পাকা ধান কিনছেন।
তিনি আরো জানান, এবার খরচ কমানোর জন্য স্ত্রী, তিন ছেলে ও শিশু কন্যাকে নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে ধান কেটেন তিনি। ধানের ফলন ভালো হলেও খুশি হতে পারছেন না দামে। ধানের যে দাম উঠছে, সেই দামে পাওনা মিটিয়ে কিছু থাকবে কিনা সেটাই তার ভাবনার বিষয়।
ধানের ফলন কেমন হয়েছে এমন প্রশ্নে কৃষক মজনু মিয়া জানান, এ বছর পাঁচ কাঠা জমিতে ধান চাষ করেছেন। ফলন বেশ। রোদে পুড়ে ফলানো ফসলের যখন দাম না মেলে, তাখন এমন ফসল ফলিয়ে কি হবে?
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক ও শ্রমিক
কিছুটা চুপ থেকে তিনি আবারো বলতে শুরু করলেন, “ধানের দাম বলা হচ্ছে ৯৫০ টাকা মণ। উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ১১০০ থেকে ১২০০ টাকার মতো। স্ত্রী, সন্তান, বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে কিভাবে বছরের বাকি সময়টুকু কাটাব, কিভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করব- সেই ভাবনা এখন সারাদিন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।”
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাওর অঞ্চলের ৬৫-৭০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। এবছর কেবল হাওর অঞ্চলেই ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছে ধান কাটায়। কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ধান কাটার যন্ত্র কাজ করছে ৪১৩টি। ফলে দ্রুতবেগে চলছে ধান কাটা।
শ্রমিক হিসেবে অন্যের জমির ধান কাটছেন কামরুল মিয়া। তিনি বলেন, “আগে একাই কাজ করেছি। কিন্তু এখন দলবেধে কাজ না করলে পুষায় না। দলবেধে করলে সবাই মিলে কম বেশি কাজ করা যায়।”
তিনি আরো বলেন, “বিভিন্ন যন্ত্রপাতির কারণে দিন দিন কমছে ধানকাটার শ্রমিক। কারণ হাতের কাজে অনেক সময় লাগে। মূলত ছোট ছোট ক্ষেতের কৃষকরাই আমাদের কাজে লাগাচ্ছে। যাদের সক্ষমতা আছে, তারা মেশিনে ধান কাটান।”
জমি থেকে কাটা ধান নিয়ে ফিরছেন কৃষক ও শ্রমিকরা
তিনি জানান, এবার নতুন জাতের ধানই বেশি চাষ করেছে কৃষক। পুরোনো জাতের মধ্য ব্রি-ধান ২৯-ও দেখা গেছে অনেক ক্ষেতে। নতুনের মধ্যে ব্রি-ধান ৮৮, ৮৯, ৯২, ৯৮ এবং হাইব্রিডসহ সব ধানেরই ভালো ফলন হয়েছে। এ বছর বন্যায় ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকলেও ভারিবৃষ্টি হলে ধান কাটায় ব্যাঘাত ঘটবে। এ কারণে দ্রুত ধান কাটায় মনোযোগী সবাই।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড.
তিনি আরো বরেন, “সব ঠিক থাকলে মে মাসের ১০ তারিখের মধ্যেই হাওরের সব ধান কাটা হয়ে যাবে।”
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ ওর ক জ কর ক ষকর র ফলন
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিয়ে উড়োজাহাজে গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পতন চেয়ে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে ৪১ বছর বয়সী এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত রোববার লন্ডনের লুটন বিমানবন্দর থেকে গ্লাসগোগামী একটি ফ্লাইটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি লন্ডনের কাছে বেডফোর্ডশায়ারের লুটন শহরের বাসিন্দা।
অভয় নায়েক ইজিজেট ফ্লাইটে হামলা ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার মতো আচরণ করেছেন। তিনি উড়োজাহাজে বোমা ফাটানোর হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি মাঝ আকাশে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে চিৎকার করেছিলেন, যা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।
ওই ঘটনার একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, অভয় নায়েক স্লোগান দিচ্ছেন, ‘আমেরিকার পতন হোক’, ‘ট্রাম্পের পতন হোক’। এরপরই তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ (যার অর্থ ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’) বলে স্লোগান দেন। পরে দুজন ব্যক্তি তাঁকে কাবু করে উড়োজাহাজের মেঝেতে ফেলে দেন।
ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি কোন ধর্মের অনুসারী, সে ব্যাপারে তাৎক্ষিণক কিছু জানা যায়নি।
ওই ব্যক্তির এমন আচরণের পর পাইলটরা বাধ্য হয়ে গ্লাসগোতে জরুরি অবতরণ করেন। সেখানেই স্কটিশ পুলিশ এসে অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করে।
স্কটল্যান্ডের পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘গত রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে গ্লাসগোতে পৌঁছানো ইজিজেটের একটি ফ্লাইটে এক ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, ঘটনাটি এককভাবে ওই ব্যক্তির, অন্য কেউ জড়িত নন। যেসব ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে, সেগুলো সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন।’
উড়োজাহাজ অবতরণের পরই অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
ইজিজেট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বেপরোয়া আচরণের কারণে একজন যাত্রীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে তদন্তে সহযোগিতা করছি।’
পাইসলি শেরিফ আদালতে হাজিরার সময় অভয় নায়েক কোনো বক্তব্য দেননি। তাঁকে বিচারিক হেফাজতে পাঠানো হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে তাঁকে আবার আদালতে হাজির করা হবে।