মাথার ওপর কড়া রোদ। হাওরজুড়ে এলোমেলো তপ্ত হাওয়া। নতুন সোনালী পাকা ধানের গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ। গনগনে এই রোদের মধ্যেই কিশোরগঞ্জের হাওরগুলোতে চলছে অন্যরকম উৎসব। সেখানে কৃষকরা ধান কাটা, শুকানো ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেছেন। শুধু কৃষকরা নন, তাদের সহযোগিতা করছে পরিবারের সদস্যরাও। সামর্থ্যবান কৃষকরা এই কাজে শ্রমিকদের ভাড়া করেছেন। ধান কাটার কাজে ব্যবহার হচ্ছে কম্বাইন্ড হারভেস্টার।

কিশোরগঞ্জে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে দাবি করেছে কৃষি বিভাগ। তাদের পরামর্শ ৮০ ভাগ পাকলেই যেন কেটে ফেলা হয় সব ধান। কৃষকরা বলছে, দীর্ঘ খরা না থাকলে ফলন আরো বেশি হতো। লাভ তো দূরে খরচের টাকা উঠবে কিনা সেটা নিয়েই শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

কৃষকরা জানান, মৌসুমের শুরুতে ধানের দাম ১১০০ টাকা মণ ছিল। বর্তমানে পাকা ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৩০ থেকে ৯৫০ টাকা মণ দরে। দীর্ঘ খরার কারণে এবার সেচে খরচ হয়েছে অন্যবারের চেয়ে দ্বিগুণ। লোকসান হলে ধান চাষে আগ্রহ হারাবেন তারা। সরকারের উচিত ফসলে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।

আরো পড়ুন:

সুনামগঞ্জের হাওরে বজ্রপাত, ধানকাটা শ্রমিকের মৃত্যু

হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা

যন্ত্রের সাহায্যে ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন কৃষকরা 

জেলার নিকলী উপজেলার বড় হাওরে পুরো পরিবার নিয়ে ধান কেটেছেন কৃষক আবুল কালাম। তিনি চার কাঠা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। প্রতিকাঠা জমিতে ধান উৎপাদনে মণ হিসেবে খরচ হয়েছে তারা ১১০০ টাকার মতো। যারা ধান কিনতে আসছেন তারা ৯৩০ থেকে ৯৫০টাকা মণ দরে পাকা ধান কিনছেন। 

তিনি আরো জানান, এবার খরচ কমানোর জন্য স্ত্রী, তিন ছেলে ও শিশু কন্যাকে নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে ধান কেটেন তিনি। ধানের ফলন ভালো হলেও খুশি হতে পারছেন না দামে। ধানের যে দাম উঠছে, সেই দামে পাওনা মিটিয়ে কিছু থাকবে কিনা সেটাই তার ভাবনার বিষয়।

ধানের ফলন কেমন হয়েছে এমন প্রশ্নে কৃষক মজনু মিয়া জানান, এ বছর পাঁচ কাঠা জমিতে ধান চাষ করেছেন। ফলন বেশ। রোদে পুড়ে ফলানো ফসলের যখন দাম না মেলে, তাখন এমন ফসল ফলিয়ে কি হবে? 

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক ও শ্রমিক 

কিছুটা চুপ থেকে তিনি আবারো বলতে শুরু করলেন, “ধানের দাম বলা হচ্ছে ৯৫০ টাকা মণ। উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ১১০০ থেকে ১২০০ টাকার মতো। স্ত্রী, সন্তান, বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে কিভাবে বছরের বাকি সময়টুকু কাটাব, কিভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করব- সেই ভাবনা এখন সারাদিন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।”

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাওর অঞ্চলের ৬৫-৭০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। এবছর কেবল হাওর অঞ্চলেই ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছে ধান কাটায়। কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ধান কাটার যন্ত্র কাজ করছে ৪১৩টি। ফলে দ্রুতবেগে চলছে ধান কাটা।

শ্রমিক হিসেবে অন্যের জমির ধান কাটছেন কামরুল মিয়া। তিনি বলেন, “আগে একাই কাজ করেছি। কিন্তু এখন দলবেধে কাজ না করলে পুষায় না। দলবেধে করলে সবাই মিলে কম বেশি কাজ করা যায়।” 

তিনি আরো বলেন, “বিভিন্ন যন্ত্রপাতির কারণে দিন দিন কমছে ধানকাটার শ্রমিক। কারণ হাতের কাজে অনেক সময় লাগে। মূলত ছোট ছোট ক্ষেতের কৃষকরাই আমাদের কাজে লাগাচ্ছে। যাদের সক্ষমতা আছে, তারা মেশিনে ধান কাটান।” 

জমি থেকে কাটা ধান নিয়ে ফিরছেন কৃষক ও শ্রমিকরা 

তিনি জানান, এবার নতুন জাতের ধানই বেশি চাষ করেছে কৃষক। পুরোনো জাতের মধ্য ব্রি-ধান ২৯-ও দেখা গেছে অনেক ক্ষেতে। নতুনের মধ্যে ব্রি-ধান ৮৮, ৮৯, ৯২, ৯৮ এবং হাইব্রিডসহ সব ধানেরই ভালো ফলন হয়েছে। এ বছর বন্যায় ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকলেও ভারিবৃষ্টি হলে ধান কাটায় ব্যাঘাত ঘটবে। এ কারণে দ্রুত ধান কাটায় মনোযোগী সবাই।

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড.

মো. সাদিকুর রহমান বলেন, “এবার পুরো জেলায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্র ছিল। চাষ হয়েছে আরো কিছু বেশি জমিতে। কেবল হাওর এলাকাতেই বোরো আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। এসব চাল জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে পাঠানো যাবে।” 

তিনি আরো বরেন, “সব ঠিক থাকলে মে মাসের ১০ তারিখের মধ্যেই হাওরের সব ধান কাটা হয়ে যাবে।”

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ ওর ক জ কর ক ষকর র ফলন

এছাড়াও পড়ুন:

হাওরে ধানের বাম্পার ফলন, দাম নিয়ে চিন্তায় কৃষক

মাথার ওপর কড়া রোদ। হাওরজুড়ে এলোমেলো তপ্ত হাওয়া। নতুন সোনালী পাকা ধানের গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ। গনগনে এই রোদের মধ্যেই কিশোরগঞ্জের হাওরগুলোতে চলছে অন্যরকম উৎসব। সেখানে কৃষকরা ধান কাটা, শুকানো ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেছেন। শুধু কৃষকরা নন, তাদের সহযোগিতা করছে পরিবারের সদস্যরাও। সামর্থ্যবান কৃষকরা এই কাজে শ্রমিকদের ভাড়া করেছেন। ধান কাটার কাজে ব্যবহার হচ্ছে কম্বাইন্ড হারভেস্টার।

কিশোরগঞ্জে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে দাবি করেছে কৃষি বিভাগ। তাদের পরামর্শ ৮০ ভাগ পাকলেই যেন কেটে ফেলা হয় সব ধান। কৃষকরা বলছে, দীর্ঘ খরা না থাকলে ফলন আরো বেশি হতো। লাভ তো দূরে খরচের টাকা উঠবে কিনা সেটা নিয়েই শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

কৃষকরা জানান, মৌসুমের শুরুতে ধানের দাম ১১০০ টাকা মণ ছিল। বর্তমানে পাকা ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৩০ থেকে ৯৫০ টাকা মণ দরে। দীর্ঘ খরার কারণে এবার সেচে খরচ হয়েছে অন্যবারের চেয়ে দ্বিগুণ। লোকসান হলে ধান চাষে আগ্রহ হারাবেন তারা। সরকারের উচিত ফসলে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।

আরো পড়ুন:

সুনামগঞ্জের হাওরে বজ্রপাত, ধানকাটা শ্রমিকের মৃত্যু

হবিগঞ্জে শুঁটকি উৎপাদনে ভাটা

যন্ত্রের সাহায্যে ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন কৃষকরা 

জেলার নিকলী উপজেলার বড় হাওরে পুরো পরিবার নিয়ে ধান কেটেছেন কৃষক আবুল কালাম। তিনি চার কাঠা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। প্রতিকাঠা জমিতে ধান উৎপাদনে মণ হিসেবে খরচ হয়েছে তারা ১১০০ টাকার মতো। যারা ধান কিনতে আসছেন তারা ৯৩০ থেকে ৯৫০টাকা মণ দরে পাকা ধান কিনছেন। 

তিনি আরো জানান, এবার খরচ কমানোর জন্য স্ত্রী, তিন ছেলে ও শিশু কন্যাকে নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে ধান কেটেন তিনি। ধানের ফলন ভালো হলেও খুশি হতে পারছেন না দামে। ধানের যে দাম উঠছে, সেই দামে পাওনা মিটিয়ে কিছু থাকবে কিনা সেটাই তার ভাবনার বিষয়।

ধানের ফলন কেমন হয়েছে এমন প্রশ্নে কৃষক মজনু মিয়া জানান, এ বছর পাঁচ কাঠা জমিতে ধান চাষ করেছেন। ফলন বেশ। রোদে পুড়ে ফলানো ফসলের যখন দাম না মেলে, তাখন এমন ফসল ফলিয়ে কি হবে? 

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক ও শ্রমিক 

কিছুটা চুপ থেকে তিনি আবারো বলতে শুরু করলেন, “ধানের দাম বলা হচ্ছে ৯৫০ টাকা মণ। উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ১১০০ থেকে ১২০০ টাকার মতো। স্ত্রী, সন্তান, বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে কিভাবে বছরের বাকি সময়টুকু কাটাব, কিভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করব- সেই ভাবনা এখন সারাদিন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।”

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাওর অঞ্চলের ৬৫-৭০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। এবছর কেবল হাওর অঞ্চলেই ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছে ধান কাটায়। কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ধান কাটার যন্ত্র কাজ করছে ৪১৩টি। ফলে দ্রুতবেগে চলছে ধান কাটা।

শ্রমিক হিসেবে অন্যের জমির ধান কাটছেন কামরুল মিয়া। তিনি বলেন, “আগে একাই কাজ করেছি। কিন্তু এখন দলবেধে কাজ না করলে পুষায় না। দলবেধে করলে সবাই মিলে কম বেশি কাজ করা যায়।” 

তিনি আরো বলেন, “বিভিন্ন যন্ত্রপাতির কারণে দিন দিন কমছে ধানকাটার শ্রমিক। কারণ হাতের কাজে অনেক সময় লাগে। মূলত ছোট ছোট ক্ষেতের কৃষকরাই আমাদের কাজে লাগাচ্ছে। যাদের সক্ষমতা আছে, তারা মেশিনে ধান কাটান।” 

জমি থেকে কাটা ধান নিয়ে ফিরছেন কৃষক ও শ্রমিকরা 

তিনি জানান, এবার নতুন জাতের ধানই বেশি চাষ করেছে কৃষক। পুরোনো জাতের মধ্য ব্রি-ধান ২৯-ও দেখা গেছে অনেক ক্ষেতে। নতুনের মধ্যে ব্রি-ধান ৮৮, ৮৯, ৯২, ৯৮ এবং হাইব্রিডসহ সব ধানেরই ভালো ফলন হয়েছে। এ বছর বন্যায় ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকলেও ভারিবৃষ্টি হলে ধান কাটায় ব্যাঘাত ঘটবে। এ কারণে দ্রুত ধান কাটায় মনোযোগী সবাই।

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাদিকুর রহমান বলেন, “এবার পুরো জেলায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্র ছিল। চাষ হয়েছে আরো কিছু বেশি জমিতে। কেবল হাওর এলাকাতেই বোরো আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। এসব চাল জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে পাঠানো যাবে।” 

তিনি আরো বরেন, “সব ঠিক থাকলে মে মাসের ১০ তারিখের মধ্যেই হাওরের সব ধান কাটা হয়ে যাবে।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ