জিআই স্বীকৃতি: ‘বিশ্বে বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধুর নতুন ব্র্যান্ডিং হবে’
Published: 2nd, May 2025 GMT
সুন্দরবনের আয়তন ও মধু উৎপাদনের সিংহভাগ বাংলাদেশের। তবে গত বছর নিজেদের পণ্য হিসেবে মধুর ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি নিয়েছিল ভারত। সেই থেকে বাংলাদেশের মৌয়াল, মধু ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদাসীনতাকে দায়ী করে দ্রুত দেশের মধুর জিআই সনদের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে তাঁদের সেই দাবি পূরণ হয়েছে।
গত বুধবার সুন্দরবনের মধুর জিআই নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছে। এই স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত সারা দেশের মধুওয়ালারা।
এ সম্পর্কে চট্টগ্রামের আল্ওয়ান মধু জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মুহাম্মদ মঈনুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, দেশে প্রাকৃতিক মধুর সবচেয়ে বড় উৎস সুন্দরবন। ঘ্রাণ ও স্বাদে অতুলনীয় সুন্দরবনের মধুর বিশ্বজোড়া চাহিদা আছে। দেশের সুন্দরবনের মধু আরও অনেক আগেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া উচিত ছিল। অবশেষে স্বীকৃতি মিলেছে, এতেই আনন্দিত সারা দেশের মধুওয়ালাসহ সবাই। স্বীকৃতি পাওয়ায় আজ জুমার নামাজের পর অনেক মসজিদে আমরা শুকরিয়া দোয়া ও মিষ্টি বিতরণের আয়োজন করেছি। জিআই স্বীকৃতিতে বিশ্বে বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধুর একটা নতুন ব্র্যান্ডিং হবে।’
গত বুধবার বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস ২০২৫ উদ্যাপন উপলক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর আয়োজনে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠান হয়। সেখানে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের হাতে সুন্দরবনের মধুর জিআই পণ্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সনদ তুলে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মমিনুর রহমান।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট আবেদন করা হয়েছিল। এরপর গত বছরের জুনে পুনরায় কিছু তথ্যাদি দাখিল করা হয়। আমরা অবশেষে সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতির সেই সুখবর পেয়েছি।মমিনুর রহমান, বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)আজ শুক্রবার মমিনুর রহমান উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মধুর জিআই নিবন্ধন সনদ পেয়ে দেশের সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার মৌয়াল, ব্যবসায়ী ও গবেষকদের মতো আমরাও আনন্দিত। সুন্দরবনের মধু জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট আবেদন করা হয়েছিল। এরপর গত বছরের জুনে পুনরায় কিছু তথ্যাদি দাখিল করা হয়। আমরা অবশেষে সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতির সেই সুখবর পেয়েছি। বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের চেষ্টায় এমন স্বীকৃতি পাওয়া আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।’
সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার মৌয়াল আজিজুল হক বলেন, ‘সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মৌয়াল বাঘ, সাপ, কুমিরের ভয় উপেক্ষা করে সরাসরি সুন্দরবনে ঢুকে মধু সংগ্রহ করে। আমি ১৮ বছর ধরে সুন্দরবন থেকে মধুর চাক কাটি। আমরা সবাই সুন্দরবনের মধুর এমন স্বীকৃতিতে আনন্দিত। দেশ-বিদেশে সুন্দরবনের মধুর ব্যাপক চাহিদা আছে। জিআই পণ্যের স্বীকৃতিতে মধুর চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে।’
আরও পড়ুনসুন্দরবনের মধু ভারতের জিআই পণ্য, বাংলাদেশে শঙ্কা০৮ জুলাই ২০২৪সুন্দরবনের গাছ থেকে মৌচাক কেটে ড্রামে ভরে নিয়ে ফিরছেন এক মৌয়াল। ১৫ এপ্রিল খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবনের ঝপঝোপিয়া নদী–সংলগ্ন এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ শ র স ন দরবন জ আই স ব ক ত আনন দ ত অবশ ষ
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস