সুন্দরবনের আয়তন ও মধু উৎপাদনের সিংহভাগ বাংলাদেশের। তবে গত বছর নিজেদের পণ্য হিসেবে মধুর ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি নিয়েছিল ভারত। সেই থেকে বাংলাদেশের মৌয়াল, মধু ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদাসীনতাকে দায়ী করে দ্রুত দেশের মধুর জিআই সনদের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে তাঁদের সেই দাবি পূরণ হয়েছে।

গত বুধবার সুন্দরবনের মধুর জিআই নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছে। এই স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত সারা দেশের মধুওয়ালারা।

এ সম্পর্কে চট্টগ্রামের আল্ওয়ান মধু জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মুহাম্মদ মঈনুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, দেশে প্রাকৃতিক মধুর সবচেয়ে বড় উৎস সুন্দরবন। ঘ্রাণ ও স্বাদে অতুলনীয় সুন্দরবনের মধুর বিশ্বজোড়া চাহিদা আছে। দেশের সুন্দরবনের মধু আরও অনেক আগেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া উচিত ছিল। অবশেষে স্বীকৃতি মিলেছে, এতেই আনন্দিত সারা দেশের মধুওয়ালাসহ সবাই। স্বীকৃতি পাওয়ায় আজ জুমার নামাজের পর অনেক মসজিদে আমরা শুকরিয়া দোয়া ও মিষ্টি বিতরণের আয়োজন করেছি। জিআই স্বীকৃতিতে বিশ্বে বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধুর একটা নতুন ব্র্যান্ডিং হবে।’

গত বুধবার বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস ২০২৫ উদ্‌যাপন উপলক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্পনকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর আয়োজনে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠান হয়। সেখানে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের হাতে সুন্দরবনের মধুর জিআই পণ্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সনদ তুলে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মমিনুর রহমান।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট আবেদন করা হয়েছিল। এরপর গত বছরের জুনে পুনরায় কিছু তথ্যাদি দাখিল করা হয়। আমরা অবশেষে সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতির সেই সুখবর পেয়েছি।মমিনুর রহমান, বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)

আজ শুক্রবার মমিনুর রহমান উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মধুর জিআই নিবন্ধন সনদ পেয়ে দেশের সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার মৌয়াল, ব্যবসায়ী ও গবেষকদের মতো আমরাও আনন্দিত। সুন্দরবনের মধু জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট আবেদন করা হয়েছিল। এরপর গত বছরের জুনে পুনরায় কিছু তথ্যাদি দাখিল করা হয়। আমরা অবশেষে সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতির সেই সুখবর পেয়েছি। বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের চেষ্টায় এমন স্বীকৃতি পাওয়া আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।’

সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার মৌয়াল আজিজুল হক বলেন, ‘সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মৌয়াল বাঘ, সাপ, কুমিরের ভয় উপেক্ষা করে সরাসরি সুন্দরবনে ঢুকে মধু সংগ্রহ করে। আমি ১৮ বছর ধরে সুন্দরবন থেকে মধুর চাক কাটি। আমরা সবাই সুন্দরবনের মধুর এমন স্বীকৃতিতে আনন্দিত। দেশ-বিদেশে সুন্দরবনের মধুর ব্যাপক চাহিদা আছে। জিআই পণ্যের স্বীকৃতিতে মধুর চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে।’

আরও পড়ুনসুন্দরবনের মধু ভারতের জিআই পণ্য, বাংলাদেশে শঙ্কা০৮ জুলাই ২০২৪সুন্দরবনের গাছ থেকে মৌচাক কেটে ড্রামে ভরে নিয়ে ফিরছেন এক মৌয়াল। ১৫ এপ্রিল খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবনের ঝপঝোপিয়া নদী–সংলগ্ন এলাকায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ শ র স ন দরবন জ আই স ব ক ত আনন দ ত অবশ ষ

এছাড়াও পড়ুন:

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ

জীব ও প্রাণ-বৈচিত্র্য রক্ষার অংশ হিসেবে সুন্দরবনকে বিশ্রাম দিতে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। ১ জুন থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে বনজীবী থেকে শুরু করে পর্যটক, কেউই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবন ঘুরেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা যুবদল ও মৎস্যজীবী দলের অন্তত ৩০ নেতাকর্মী।

গত শুক্রবার তারা ভ্রমণে যান। সুন্দরবনের কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়িতে অবস্থানকালে নিজেদের ছবি রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশ নিয়ে জানতে চাইলে যুবদলের সাবেক নেতা আমিনুর রহমান জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব সুন্দরবনে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এডিসি পদমর্যাদার একজনের মাধ্যমে বন বিভাগের কাছ থেকে ১০ জনের অনুমতি মেলে। ওই দলে তিনি যুক্ত হওয়ার পর স্থানীয় কিছু কর্মী-সমর্থক তাঁর সঙ্গে ট্রলারে উঠে পড়েন। এ সময় তাদের আর নামিয়ে দেওয়া যায়নি। 

উপসচিব বা তাঁর জন্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সুন্দরবনে যাওয়া উচিত ছিল কিনা– জানতে চাইলে আমিনুর বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা চলার তথ্য আমাদের জানানো হয়নি।’ কথা বলার জন্য ওই উপসচিবের নাম ও যোগাযোগ নম্বর চাইলে তিনি দেননি।

এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের জিয়াউর রহমান বলেন, এক উপসচিবের একান্ত সচিব (পিএস) পরিচয়ে ১০ জনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণের অনুমতি চাওয়া হয়। অনেকটা ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’র মতো করে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একই সঙ্গে কয়েক রাজনৈতিক ব্যক্তির সুন্দরবনে যাওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের এমন আবদারে তারা অসহায় হয়ে পড়েন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বহর নিয়ে সাবেক যুবদল নেতার সুন্দরবন ভ্রমণ