জেলি ফিশের কাঁটার খোঁচা খেয়েও ১৪ ঘণ্টা সাঁতার কেটেছে মার্কিন কিশোরী
Published: 2nd, May 2025 GMT
সাঁতার কাটতে গিয়ে ক্রমাগত জেলি ফিশের কাঁটার খোঁচা খাচ্ছিল ১৭ বছর বয়সী মার্কিন সাঁতারু মায়া মারহিজ। শুরুতে হিসাব রাখলেও একপর্যায়ে কতগুলো খোঁচা খাচ্ছে, তা গোনা বন্ধ করে দেয় সে। কারণ, এত ঘন ঘন খোঁচা খাওয়ার কারণে শরীরে এত যন্ত্রণা হচ্ছিল যে তার পক্ষে আর গোনা সম্ভব হয়নি।
এই অবস্থার মধ্যেই নিউজিল্যান্ডের কুক প্রণালিতে কয়েক ঘণ্টা ধরে ২৭ মাইল এলাকা সাঁতরেছে মারহিজ। তার পুরো শরীরে কামড়ের ক্ষত। শেষ পর্যন্ত এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে তার মুখ, নাক, কান এবং ঠোঁটের ছিল জেলিফিশের কাঁটার আঘাত।
কত ঘন ঘন জেলি ফিশের কাঁটার খোঁচা খেতে হয়েছে তার একটি আনুমানিক হিসাব দিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা মারহিজ। সে বলেছে, ‘অনবরত চলেছে, প্রতি মিনিটে প্রায় ২৫ বার—বারবার এমন হয়েছে।’
মারহিজ আরও বলেছে, পানিতে নামার সময়ই সে খুব ভয় পাচ্ছিল। যেন কোনো জেলিফিশ না দেখা যায়, তা চাইছিল সে। ভয় কাটিয়ে উঠতে পুরোটা সময় নিজেকে মানসিকভাবে শক্ত রাখার চেষ্টা করছিল।
বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন জলপথগুলোতে সাঁতার কাটতে গিয়ে মারহিজ বারবারই তার সবচেয়ে ভয়ের জায়গাগুলোকে মোকাবিলা করেছে। কাজটি সে বারবারই করেছে।
নিউজিল্যান্ডের উত্তর ও দক্ষিণ দ্বীপকে আলাদা করেছে কুক প্রণালি। গত মাসে মারহিজ এ কুক প্রণালি পাড়ি দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সে তার লক্ষ্যপূরণের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে। তার লক্ষ্য হলো, বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে ‘ওশেনস সেভেন’-এ সাঁতারের অভিযান শেষ করা। ওশেনস সেভেন হলো, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সাতটি ভয়ংকর উন্মুক্ত জলপথে সাঁতারের একটি সিরিজ।
মারহিজ ইতিমধ্যেই সফলভাবে নিউজিল্যান্ডের কুক প্রণালি, হাওয়াইয়ের মোলোকাই চ্যানেল, লস অ্যাঞ্জেলেস উপকূলের ক্যাটালিনা চ্যানেল এবং ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মাঝখানে অবস্থিত ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছে। এসব কিছু সে করেছে হাইস্কুল থেকে স্নাতক শেষ করার আগেই।
আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মাঝখানের নর্থ চ্যানেল, স্পেন ও মরক্কোর মাঝখানের জিব্রাল্টার প্রণালি এবং জাপানের সুনামিপ্রবণ সুগারু প্রণালিতে এখনো সে সাঁতার কাটেনি। সাঁতার কেটে এগুলোও পাড়ি দিতে চায় সে।
সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে আমি এটা করতে চাই। এর অর্থ হলো, ‘২০২৮ সালের জানুয়ারির মধ্যে আমাকে এগুলো শেষ করতে হবে। আমি সব কটি শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। যেগুলোতে এখনো পাড়ি জমানো বাকি আছে, সেগুলো নিয়ে আমি সত্যিই খুব উচ্ছ্বসিত।’
মারহিজ গত মাসে কুক প্রণালি পাড়ি দিয়েছে।
ম্যারাথন সুইমারস ফেডারেশনের নীতিমালা অনুযায়ী, যাঁরা কারও সহযোগিতা ছাড়া এককভাবে উন্মুক্ত পানিতে ম্যারাথন সাঁতারে অংশ নেন, তাদের শুধু সুইম স্যুট পরার অনুমতি আছে। তাঁরা ওয়েটস্যুট পরতে পারেন না।
মারহিজকে একটি সহায়ক নৌকা থেকে পথনির্দেশনা দেওয়া হয়। সে প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর তার দলের কাছ থেকে খাবার খেতে সাময়িক বিরতি নেয়।
মারহিজের বক্তব্য অনুসারে, কুক প্রণালি পাড়ি দেওয়া ছিল এখন পর্যন্ত তার সবচেয়ে কঠিন সাঁতারের অভিজ্ঞতা। সাঁতার শেষ হওয়ার পরদিন সে এটা টের পেয়েছিল। পরদিন সে তার হাতগুলো কাঁধের ওপর তুলতেই পারছিল না।
উত্তাল সাগর আর প্রবল স্রোতের কারণে মারহিজ খুব বেশি এগোতে পারছিল না। তাকে আধা দিনের বেশি সময় ধরে সাঁতরাতে হয়েছে। ১৩ দশমিক ৭ মাইলের পরিবর্তে মারহিজকে ২৭ মাইল সাঁতরাতে হয়েছে। সাত ঘণ্টা পানিতে থাকার কথা থাকলেও তাকে থাকতে হয়েছে ১৪ ঘণ্টার বেশি। তবে তার মানসিক দৃঢ়তাকে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে সাঁতারের গন্তব্য হিসেবে যে বড় পাখা সজ্জিত উইন্ড টার্বাইনগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তা কোনোভাবেই কাছে আসছে বলে মনে হচ্ছিল না।
মায়া মারহিজ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রুয়ান্ডা-কঙ্গোর সঙ্গে চুক্তি করছে যুক্তরাষ্ট্র
ইউক্রেনের পর যুক্তরাষ্ট্রের নজর এবার আফ্রিকায়। কঙ্গো ও রুয়ান্ডার মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনের পাশাপাশি তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় খনিজ সম্পদ চুক্তির জন্য তোড়জোড় করছে ওয়াশিংটন।
বৃহস্পতিবার এ তথ্য দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আফ্রিকাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মাসসাদ বৌলোস। দোহায় এক সাক্ষাৎকারে বৌলোস বলেছেন, শান্তিচুক্তি সম্পন্ন হলে সেদিনই কঙ্গোর সঙ্গে খনিজ সম্পদ চুক্তি সম্পন্ন করবে যুক্তরাষ্ট্র। আর রুয়ান্ডার সঙ্গে একই তবে কিছুটা ভিন্ন আকারের চুক্তি করা হবে।
এই চুক্তি এমন একসময়ে হচ্ছে, যখন রুয়ান্ডাসমর্থিত এম২৩ বিদ্রোহীরা কঙ্গোতে নজিরবিহীন অগ্রগতি অর্জন করছে। অঞ্চলটি ট্যানটালাম, স্বর্ণসহ বিভিন্ন খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এবং কয়েক দশক ধরে সংঘাতে জর্জরিত। রয়টার্স।