ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সোনিয়া-রাহুলকে আদালতের নোটিশ
Published: 2nd, May 2025 GMT
ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে কংগ্রেস নেতা–নেত্রীদের অভিমত শোনার সুযোগ দেওয়া হলো। দিল্লির রাউজ অ্যাভিনিউর বিশেষ আদালতের বিচারপতি আজ শুক্রবার এই কারণে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীসহ অন্য অভিযুক্তদের নোটিশ দিয়েছেন।
এই নেতা–নেত্রীদের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্রের অর্থ ও সম্পত্তি বেআইনিভাবে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) মামলা করেছে। অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইনে (পিএমএলএ) দায়ের হওয়া ওই মামলায় সোনিয়া, রাহুলসহ অন্যান্য কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে ইডি ইতিমধ্যেই অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।
বিশেষ আদালত ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ২২৩ ধারায় সোনিয়া–রাহুলদের ওই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি ৮ মে।
বিশেষ আদালতের বিচারপতি বিশাল গোগনে ওই নোটিশ জারি করে বলেন, মামলাটি আদালতের বিচারাধীন। অভিযোগপত্র দাখিলের পর তা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বক্তব্য শোনা প্রয়োজন। সেই অধিকার আইন তাঁদের দিয়েছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থেই ওই অধিকার দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই অধিকার পিএমএলএ আইনের বিধানের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ নয়।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই ওই মামলার বিরোধিতা করা হচ্ছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, ন্যাশনাল হেরাল্ড কাগজ কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেছিল। কংগ্রেস তা চালাতে টাকা খরচ করেছিল। কংগ্রেসের তরফে অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড (এজেএল) সংস্থা ওই কাগজ চালাত।
কংগ্রেস বলছে, পরবর্তী সময়ে ইয়ং ইন্ডিয়ান সংস্থা এজেএল অধিগ্রহণ করে। ইয়ং ইন্ডিয়ান কোনো লাভজনক সংস্থা নয়, যা ছিল কংগ্রেসের, পরবর্তী সময়েও তা কংগ্রেসেরই আছে। একটি টাকাও হস্তান্তর হয়নি।
এই মামলা করেছিলেন বিজেপি নেতা সুব্রামানিয়াম স্বামী। তাঁর যুক্তি, কংগ্রেস রাজনৈতিক দল। তাই তারা কোনো বাণিজ্যিক সংস্থাকে ঋণ দিতে পারে না। কিন্তু কংগ্রেস ঋণ দিয়েছিল এজেএলকে। এবং ইয়ং ইন্ডিয়ান সংস্থা খুলে সেই সংস্থা অধিগ্রহণ করে নেয়। ইডি ইতিমধ্যেই ন্যাশনাল হেরাল্ডের দিল্লি, মুম্বাই ও পাটনার স্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।