সোনাভরি নদীতে বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ বাঁধের কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নদীর উজানে থাকে জলাবদ্ধতা। এ কারণে তিন ফসলি জমি এক ফসলে পরিণত হয়েছে। অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সোনাভরি নদী। ঘটনাটি রৌমারী উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের কাজাইকাটা এলাকার।
সরেজমিন দেখা গেছে, অনেক বছর আগে চরশৌলমারী ইউনিয়নে ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। পানি নিষ্কাশনের জন্য বাঁধের ভাটিতে কাজাইকাটা এলাকার সোনাভরি নদীতে একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। স্লুইসগেটের সামনে দেড় থেকে দুই বছর আগে ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যের আরেকটি বাঁধ নির্মাণ করে উপজেলা এলজিইডির ক্ষুদ্র পানিসম্পদ প্রকল্পের আওতায়। এ বাঁধের কারণে উজানে হয়ে থাকে জলাবদ্ধতা। তলিয়ে থাকে আবাদি জমি। এ ছাড়া বাঁধের উজানে ঘের দিয়ে মাছ চাষ করছেন কয়েকজন প্রভাবশালী। দ্রুত বাঁধটি অপসারণ করে নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, কোনো প্রকার জরিপ ছাড়াই সোনাভরি নদীতে স্লুইসগেটের সামনে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সময় বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে বাঁধ নির্মাণ করে উপজেলা এলজিইডির ক্ষুদ্র পানিসম্পদ প্রকল্পের আওতায়। এতে এই অঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে তিন ফসলি জমি এক ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, এই বাঁধ দ্রুত অপসারণ না করা হলে শত শত একর ফসলি জমি স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে। বাঁধের ভেতরে চর ইটালুকান্দা, ইটালুকান্দা, ভেড়ামারা, ডিগ্রীর চর ও শান্তির চরের অংশবিশেষ ছয় মাস পানিতে নিমজ্জিত হয়ে থাকে। এ কারণে এই অঞ্চলের মানুষ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। বাঁধ থাকার কারণে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রোপা আমন চাষ ব্যাহত হয়।
নদী সংগঠক মহিউদ্দিন মহির বলেন, নদীর যে কোনো কাজ করতে চাইলে নদীর পারের কমিউনিটির মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজাইকাটা এলাকার বাঁধের ব্যাপারে স্থানীয় জনগণের মতামত যদি নেওয়া হতো, তাহলে এত বড় দুর্গতি হতো না। কোনো জরিপ ছাড়াই এলজিইডির ক্ষুদ্র পানিসম্পদ প্রকল্পের আওতায় এমন কাজ দায়িত্বহীনতারই বহিঃপ্রকাশ।
শিক্ষক আমজাদ হোসেন জানান, সোনাভরি নদীর অস্তিত্ব ও ফসলি জমি রক্ষায় জলাবদ্ধতা রোধে বাঁধ অপসারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, এ সমস্যার সৃষ্টিই হয়েছে এলজিইডির ক্ষুদ্র পানিসম্পদ প্রকল্প বাস্তবায়িত বাঁধ নির্মাণের কারণে। এ বাঁধ দিয়ে খাল-বিল ও নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কোনো প্রকার জরিপ না করে কোনো এক গোষ্ঠীর ভ্রান্ত চিন্তাভাবনা দ্বারা পরিচালিত হয়েছে এলজিইডি। ভ্রান্ত চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে এই জলাবদ্ধতার নিরসন করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কৃষিজমি, বসতবাড়ি ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সমস্যার একটি টেকসই সমাধান দরকার। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার, দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসন এবং স্থানীয় কৃষি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
চরশৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মজনু মিয়ার ভাষ্য, এই বাঁধের কারণে তিন ফসলি জমি এক ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। এই এলাকার মানুষের জীবিকার জায়গা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। বারবার নদীভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে এই অঞ্চলের অনেক পরিবার। তাদের যতটুকু আবাদি জমি ছিল, সেটিও বাঁধ দিয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নদীতে বাঁধ দেওয়ার বিষয়ে রৌমারী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মনছুরুল হক জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার হালদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধ ন র ম ণ কর স ন ভর ত হয় ছ এল ক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা

জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।

এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।

আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?

উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’

আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ