বাঁধের ভেতর বাঁধ, চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে কৃষক
Published: 2nd, May 2025 GMT
সোনাভরি নদীতে বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ বাঁধের কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নদীর উজানে থাকে জলাবদ্ধতা। এ কারণে তিন ফসলি জমি এক ফসলে পরিণত হয়েছে। অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সোনাভরি নদী। ঘটনাটি রৌমারী উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের কাজাইকাটা এলাকার।
সরেজমিন দেখা গেছে, অনেক বছর আগে চরশৌলমারী ইউনিয়নে ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। পানি নিষ্কাশনের জন্য বাঁধের ভাটিতে কাজাইকাটা এলাকার সোনাভরি নদীতে একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। স্লুইসগেটের সামনে দেড় থেকে দুই বছর আগে ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যের আরেকটি বাঁধ নির্মাণ করে উপজেলা এলজিইডির ক্ষুদ্র পানিসম্পদ প্রকল্পের আওতায়। এ বাঁধের কারণে উজানে হয়ে থাকে জলাবদ্ধতা। তলিয়ে থাকে আবাদি জমি। এ ছাড়া বাঁধের উজানে ঘের দিয়ে মাছ চাষ করছেন কয়েকজন প্রভাবশালী। দ্রুত বাঁধটি অপসারণ করে নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, কোনো প্রকার জরিপ ছাড়াই সোনাভরি নদীতে স্লুইসগেটের সামনে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সময় বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে বাঁধ নির্মাণ করে উপজেলা এলজিইডির ক্ষুদ্র পানিসম্পদ প্রকল্পের আওতায়। এতে এই অঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে তিন ফসলি জমি এক ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, এই বাঁধ দ্রুত অপসারণ না করা হলে শত শত একর ফসলি জমি স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে। বাঁধের ভেতরে চর ইটালুকান্দা, ইটালুকান্দা, ভেড়ামারা, ডিগ্রীর চর ও শান্তির চরের অংশবিশেষ ছয় মাস পানিতে নিমজ্জিত হয়ে থাকে। এ কারণে এই অঞ্চলের মানুষ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। বাঁধ থাকার কারণে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রোপা আমন চাষ ব্যাহত হয়।
নদী সংগঠক মহিউদ্দিন মহির বলেন, নদীর যে কোনো কাজ করতে চাইলে নদীর পারের কমিউনিটির মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজাইকাটা এলাকার বাঁধের ব্যাপারে স্থানীয় জনগণের মতামত যদি নেওয়া হতো, তাহলে এত বড় দুর্গতি হতো না। কোনো জরিপ ছাড়াই এলজিইডির ক্ষুদ্র পানিসম্পদ প্রকল্পের আওতায় এমন কাজ দায়িত্বহীনতারই বহিঃপ্রকাশ।
শিক্ষক আমজাদ হোসেন জানান, সোনাভরি নদীর অস্তিত্ব ও ফসলি জমি রক্ষায় জলাবদ্ধতা রোধে বাঁধ অপসারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, এ সমস্যার সৃষ্টিই হয়েছে এলজিইডির ক্ষুদ্র পানিসম্পদ প্রকল্প বাস্তবায়িত বাঁধ নির্মাণের কারণে। এ বাঁধ দিয়ে খাল-বিল ও নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কোনো প্রকার জরিপ না করে কোনো এক গোষ্ঠীর ভ্রান্ত চিন্তাভাবনা দ্বারা পরিচালিত হয়েছে এলজিইডি। ভ্রান্ত চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে এই জলাবদ্ধতার নিরসন করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কৃষিজমি, বসতবাড়ি ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সমস্যার একটি টেকসই সমাধান দরকার। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার, দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসন এবং স্থানীয় কৃষি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
চরশৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মজনু মিয়ার ভাষ্য, এই বাঁধের কারণে তিন ফসলি জমি এক ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। এই এলাকার মানুষের জীবিকার জায়গা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। বারবার নদীভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে এই অঞ্চলের অনেক পরিবার। তাদের যতটুকু আবাদি জমি ছিল, সেটিও বাঁধ দিয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নদীতে বাঁধ দেওয়ার বিষয়ে রৌমারী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মনছুরুল হক জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার হালদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধ ন র ম ণ কর স ন ভর ত হয় ছ এল ক র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন দাবিতে রংপুরে রোববার গণপদযাত্রা
তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুরে রোববার গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন। নগরীর শাপলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে রংপুর জিলা স্কুল মাঠ পর্যন্ত এই গণপদযাত্রায় নদীপারের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ অংশ নেবেন। কর্মসূচিতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
শনিবার দুপুরে নগরীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীব দুলু। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে এর আগে বিভিন্ন সংগঠন তিস্তা ব্যারাজ অভিমুখে রোডমার্চ, মানববন্ধন, সমাবেশসহ স্তব্ধ কর্মসূচি পালন করেও বিগত সরকারের আমলে আশ্বাসের বাণী ছাড়া মেলেনি কিছু। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এবং অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তাপারের মানুষজন ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দু’দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে এ কর্মসূচিতে পাঁচ জেলার ১১ স্থানে তাঁবু খাটিয়ে একই সময়ে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে সংহতি প্রকাশ করে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাপনী অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে সবগুলো পয়েন্টে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ব্যতিক্রমী এই কর্মসূচিতে পাঁচ জেলার লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেন। কিন্তু তারপরও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন পর্যন্ত বিষয়টি আমলে নেয়নি।
আসাদুল হাবীব দুলু বলেন, দু’দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় ঘোষণা ছিল যতদিন তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে না, ততদিন আন্দোলন চলবে। সেই ঘোষণার প্রেক্ষিতে রোববার গণপদযাত্রা কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিছুর রহমান লাকু, বিএনপি নেতা এমদাদুল হক ভরসা, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক উপস্থিত ছিলেন।