বোরো ধানে নামছে চালের দর উত্তাপ সবজির বাজারে
Published: 3rd, May 2025 GMT
বোরো মৌসুমের ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজারে এ জাতের চাল আসতে শুরু করায় সরু বা মিনিকেট চালের দাম কিছুটা কমতির দিকে। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে কমেছে সর্বোচ্চ ৪ টাকা। গ্রীষ্ম মৌসুমে সরবরাহ কম থাকায় বেশির ভাগ সবজির দর তুলনামূলক বেশি। ফলে দীর্ঘ সময় পর নিত্যপণ্যের বাজারে চালের দাম কিছুটা কমলেও ক্রেতাকে ভোগাচ্ছে সবজি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা ও নাখালপাড়ার সমিতি বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে বোরো ধানের। সরবরাহ বাড়ায় নতুন সরু বা মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৪ থেকে ৮২ টাকায়। এ মানের পুরোনো চালের কেজি এখনও ৭৮ থেকে ৮৬ টাকা। মোটা চালের দর কেজিতে ২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা।
মাঝারি চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৭ থেকে ৬৫ টাকায়। এ মানের চালের কেজিতেও এক-দুই টাকা কমেছে।
বেশ কয়েক মাস স্থির থাকার পর চালের দর কমছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারের নোয়াখালী রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো.
সবজি কিনতে গেলে ক্রেতাকে হতাশ হতে হচ্ছে। বেশির ভাগ সবজি কিনতে খরচ করতে হচ্ছে কেজিতে অন্তত ৬০ টাকা। কোনোটির দর শতক পার হয়েছে। মাসখানেক ধরে সবজির বাজার চড়া।
বিক্রেতারা বলছেন, শীতকালীন সবজির মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে। গ্রীষ্মের সবজি আসা শুরু হয়েছে। এসব সবজির দর এ সময় কিছুটা বেশি থাকে।
খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁপে, পটোল, ঢ্যাঁড়শ, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ও ঝিঙার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। উচ্ছে ও বেগুনের কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। বরবটি ও কাঁকরোলের মতো গ্রীষ্মকালীন সবজি কিনতে ক্রেতাকে কেজিপ্রতি খরচ করতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এ ছাড়া টমেটো ৩০ থেকে ৪০, শসা ৬০ থেকে ৭০ ও গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। কাঁচামরিচের দরও কিছুটা বেড়েছে। মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা। আলুর দর কমেছে। প্রতি কেজি কেনা যাচ্ছে ১৭ থেকে ২০ টাকায়। গত সপ্তাহে কেজি ছিল ২০ থেকে ২২ টাকা। সেই হিসাবে কেজিতে কমেছে ২ থেকে ৩ টাকা।
গত সপ্তাহের তুলনায় মাছের বাজারে কিছুটা চড়াভাব দেখা যায়। চাষের রুই, তেলাপিয়া ও পাঙাশ কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। প্রতি কেজি চাষের রুই ও কাতলা ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৪০ টাকা ও পাঙাশ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি চাষের চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং নদীর চিংড়ি ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়, যা গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি।
মাসখানেক ধরে পেঁয়াজের বাজারও চড়া। খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
ডিম-মুরগির দামে অনেকটা স্বস্তি আছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৮০ এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দর দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় কেজিতে অন্তত ৪০ টাকা কম।
প্রায় দুই মাস ধরে ডিমের বাজার ঠান্ডা। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। ভ্যানে করে কিছুটা ছোট আকারের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব জ রদর সরবর হ ল র দর সবজ র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েল কেন ইরানি তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে, এগুলো কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে বৈরিতা চলছে। তবে এবারই প্রথম ইসরায়েল ইরানে হামলা চালানোর পর দুই পক্ষ সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি হামলা তীব্র হতে থাকায় বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত শনিবার গভীর রাতে ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ডিপোতে হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানী তেহরানে একটি তেল শোধনাগারেও আগুন ধরে যায়। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
বিশ্বের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’-এ ইসরায়েলের হামলায় আগুন লাগার পর ইরান আংশিকভাবে এ ক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ইরান কাতারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে থাকে।
গত শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করে। এর জবাবে তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে পাল্টা হামলা চালায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংঘাত বন্ধে আহ্বান জানাচ্ছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় চার দিনে অন্তত ২২৪ জন নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে শিশু ও নারী রয়েছেন। আহত হয়েছেন হাজারের বেশি মানুষ। অন্যদিকে ইসরায়েল জানিয়েছে, ইরানের হামলায় তাঁদের অন্তত ১৯ নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক।
ইসরায়েল নজিরবিহীনভাবে ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আরও বাড়তে পারে। দুই দেশই একে অন্যের ভূখণ্ডে আরও বড় ধরনের হামলার হুমকি দিচ্ছে।
ইসরায়েলের হামলায় ইরানের কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আক্রান্ত
ইরান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ও তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল মজুতের অধিকারী—এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) দেওয়া। ফলে দেশটির জ্বালানি অবকাঠামো দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু ছিল।
তবে এত দিন ইসরায়েল ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা এড়িয়ে চলছিল, বিশেষ করে তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের চাপ ছিল। কিন্তু এবার তা বদলে গেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ গত শুক্রবার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ‘ইরান যদি আর হামলা চালায়, তবে তেহরান পুড়ে যাবে।’
গত শনিবার রাতে তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে শাররান জ্বালানি ডিপো ও শহরের দক্ষিণে শার-রে অঞ্চলে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ তেল শোধনাগারে বড় ধরনের আগুন লাগে।
তবে ইরানের স্টুডেন্ট নিউজ নেটওয়ার্কের দাবি, শার-রে শোধনাগারে কোনো হামলা হয়নি। এটি এখনো চালু রয়েছে। তবে তারা স্বীকার করেছে, শোধনাগারের বাইরে একটি জ্বালানি ট্যাংকে আগুন লেগেছে। আগুন লাগার কারণ তারা ব্যাখ্যা করেনি।
তবে ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, শাররান জ্বালানি ডিপোতে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে। ইরানের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছেন।
এ ছাড়া ইরানের দক্ষিণ বুশেহর প্রদেশে উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র সাউথ পার্স লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ইরানের মোট গ্যাস উৎপাদনের দুই-তৃতীয়াংশ আসে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে। কাতারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে এখান থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হয়, কাতার অংশে এটি ‘নর্থ ফিল্ড’ নামে পরিচিত।
হামলায় সাউথ পার্সের ‘ফেইজ ১৪’ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে আগুন লাগে। ফলে এখানে দৈনিক ১ দশমিক ২ কোটি ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদনকারী একটি অফশোর প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।
বুশেহর প্রদেশের ফজর-জাম গ্যাস প্ল্যান্টেও ইসরায়েল হামলা চালায়। এখানে দক্ষিণ পার্স থেকে উত্তোলন করা গ্যাস প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এটি ইরানের অন্যতম বৃহৎ গ্যাস কারখানা। ইরানের জ্বালানি মন্ত্রণালয় সেখানে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এসব স্থাপনার গুরুত্ব কী
শাররান তেল গুদাম তেহরানের অন্যতম প্রধান জ্বালানি সংরক্ষণ ও সরবরাহের কেন্দ্র। এখানে ২৬ কোটি লিটার জ্বালানি মজুত রাখা যায় ১১টি ট্যাংকে। এখান থেকে রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন এলাকায় পেট্রল, ডিজেল ও এভিয়েশন ফুয়েল সরবরাহ করে।
তেহরান রিফাইনারি শার-রে এলাকার এই পুরোনো তেল শোধনাগার দৈনিক প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার ব্যারেল তেল পরিশোধন করতে পারে। এ স্থাপনায় কোনো সমস্যা হলে তেহরান ও আশপাশের অঞ্চলে জ্বালানি সরবরাহে বড় সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
সাউথ পার্স গ্যাসক্ষেত্র বিশ্বের মোট গ্যাস রিজার্ভের প্রায় ২০ শতাংশ ধারণ করে। এখানে ১ হাজার ২৬০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস রয়েছে।
ফজর-জাম গ্যাস প্ল্যান্টে হামলার কারণে ইরানের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ হুমকির মুখে পড়েছে। ইরানে প্রতিদিনের বৈদ্যুতিক গোলযোগে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়।
বৈশ্বিক বাজারে অনিশ্চয়তা
এ সংঘাতের মধ্যে ইরান জানিয়েছে, তারা সম্ভবত হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেবে। এটি করলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম হু হু করে বাড়বে।
হরমুজ প্রণালির এক পাশে ইরান এবং অন্য পাশে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ তেল এই পথ দিয়ে সরবরাহ করা হয়। ইআইএ একে ‘বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহন চোকপয়েন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ইসরায়েলের হামলার প্রথম দিনে তেল ও গ্যাস স্থাপনা বাদ পড়লেও বাজারে তেলের দাম প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। আজ সোমবার যখন বিশ্ববাজার খুলবে, তখন দামে আরও বড় উল্লম্ফন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের গবেষক অ্যালান এয়ার বলেন, ‘ইসরায়েল চায়, ইরানের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ুক। তাদের লক্ষ্য, ইরানের এই সরকারের পতন ঘটানো।’
অ্যালান এয়ার আরও বলেন, ইরানের সামরিক প্রতিক্রিয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, দেশের অভ্যন্তরে সম্মান রক্ষার বিষয় আছে। কিন্তু ইসরায়েলে বড় ধরনের ক্ষতি করার মতো ক্ষমতা ইরানের নেই।
অ্যালান আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের বন্ধুর সংখ্যা কম। আর থাকলেও ইসরায়েল পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মতামতকে পাত্তা দেয় না।