পানি সংকট দূরীকরণ প্রকল্পের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি
Published: 3rd, May 2025 GMT
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বরগুনায় ভূ-উপরিস্থ ও ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা ও পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে চরম পানি সংকটে ভোগেন উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। পানি সংকট দূর করতে পতিত সরকার ‘উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। তবে সেই প্রকল্পের কয়েকটি ধাপে ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে এসেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, তালিকা প্রস্তুত থেকে ট্যাংকি বিতরণ পর্যন্ত পাঁচটি ধাপে দুর্নীতি হয়েছে। ঠিকাদারের সাথে সমন্বয় করে খোদ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অনেকটা না দেখার ভান করে আছেন দৃশ্যমান সকল অনিয়ম-দুর্নীতি।
আরো পড়ুন:
কিশোরগঞ্জে পানি উঠছে না নলকূপে, খাবার পানির তীব্র সংকট
সাতক্ষীরার মরিচ্চাপ নদীতে ভাঙন, আতঙ্কে ৮০০ পরিবার
পায়রা-বলেশ্বর ও বিষখালী নদী বেষ্টিত দেশের সর্ব দক্ষিণের উপজেলা বরগুনার পাথরঘাটা, এরপরেই বঙ্গোপসাগর। পানির মধ্যে বসবাস, তবুও সুপেয় পানির তীব্র সংকট। মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততায় শুধু খাবার অযোগ্য নয়, এই পানি পুরোপুরি ব্যবহারেরও অনুপযোগী।
পানির চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে বরগুনার পাথরঘাটার পদ্দা বেড়িবাঁধ থেকে পাশের গ্রাম পদ্দা এলাকায় সুপেয় পানি নিতে যান ৬০ বছরের বৃদ্ধ ধলু মিয়া। এক শিক্ষকের উদ্যোগে ব্যক্তিগতভাবে স্থাপন করা এই ফিল্টার থেকে প্রতিদিন ৩৫ লিটার সুপেয় পানির জার কাঁধে নিয়ে হেঁটে বাড়ি ফেরেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়- শুধু ধলু মিয়া নন, গোটা পদ্দা গ্রামের বাসিন্দাদের সুপেয় পানি সংগ্রহের চিত্র এটি। কখনো দিনের শুরুতে আবার কখনো দিনের শেষে লাইনে দাঁড়িয়ে সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে হয় তাদের।
এলাকাবাসী জানান, পানিতে লবণাক্ততা ও নলকূপ স্থাপনের সুযোগ না থাকায় বৃষ্টি মৌসুম শেষ হলেই এভাবেই ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের।
পদ্দা এলাকার ইয়াকুব হোসেন, হুমায়ূন কবির, বশির হাওলাদারসহ একাধিক বাসিন্দা বলেন, “এই এলাকার চারপাশে পানি থাকলেও সুপেয় পানির দারুণ সংকট। নদী ও খালের পানি এতটাই লবণাক্ত যা মানুষতো দূরের কথা, গবাদি পশুকেও পান করানো যায় না। বছরের অন্তত পাঁচ মাস পানির সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।”
সুপেয় পানির তীব্র সংকট বরগুনার সদরের নলটোনা ইউনিয়ন ও বালিয়াতলী ইউনিয়নের একাংশে। এখানকার বাসিন্দারা সুপেয় পানির সংকটে লবণাক্ত পানি পান করে পানি বাহিত নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা লবণাক্ত পানি পান করছেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জল ও বায়ু গবেষক ড.
তিনি আরও বলেন, “এসব লবণ পানি পান ও ব্যবহার করা থেকে উপকূলীয় বাসিন্দাদের বিরত থাকতে ব্যাপকহারে প্রচারণা দরকার। পানির প্রতি মিলিয়ন অংশে লবণের মাত্রা ৬০০ পিপিএম পর্যন্ত থাকলে সে পানি খাবার উপযোগী ধরা হয়। তবে পাথরঘাটায় ভূ-গর্ভস্থ পানিতে লবণের মাত্রা প্রায় ৩০০০ পিপিএম, যা পুরোপুরি পানের অযোগ্য।”
এই সংকট দূর করতে উপকূলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্প থাকার পরেও কেনো কাটছে না সংকট! এমন প্রশ্নের উত্তর পেতে আবারও ফিরতে হবে ধলু মিয়ার কথায়।
পদ্দা এলাকার বাসিন্দা সেই ধলু মিয়া বলেন, “আমরা গরিবরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাই না। কারণ টাকার বিনিময়ে তালিকা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার ও তার চ্যালারা।”
ধলু মিয়ার মতোই বরগুনা উপকূলের অন্তত ছয় লাখ মানুষ সুপেয় পানির সংকটে। সংকট নিরসনে ২০২২-২০২৩ ও ২৩-২৪ অর্থ বছরে পৃথকভাবে তিনটি প্যাকেজে ৭৫৬০ জনের নামের সুপারিশ করেন তৎকালীন বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, বরগুনা সদরের উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন, বামনার উপজেলা চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু ও প্রকল্পের আওতাধীন ইউপি চেয়ারম্যান এবং সদস্যরা।
তথ্য অধিকার আইনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, গত দুই অর্থ বছরে পৃথকভাবে তিনটি প্যাকেজে ৩৪ কোটি ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৩৬০ টাকায় টেন্ডার পায় বরগুনার কামাল এন্টার প্রাইজ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, পাঁচটি ধাপে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে গোটা প্রকল্প জুড়ে। পাথরঘাটার চরদুয়ানী, কালমেঘা, পাথরঘাটা সদর ও কাঠালতলী ইউনিয়ন, বরগুনা সদরের নলটোনা ও এম বালিয়াতলী ও বামনার ডৌয়াতলা ইউনিয়নে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের তালিকায় নাম নিশ্চিত করতে তিন থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে গ্রাহকের কাছ থেকে। যারা টাকা দিতে পারেনি, তাদের নাম আসেনি তালিকায়।
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগী মো. হারুন, সেলিম ঘরামি, কামাল খান, মন্নান খান, আ. রহিম, হাকিম আকনসহ একাধিক সুবিধাভোগী অভিযোগ করে বলেন, “সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম কবিরকে টাকা দিতে হয়েছে এই প্রকল্পের তালিকায় নাম ওঠাতে।”
একাধিক সুবিধাভোগী অভিযোগ করে বলেছেন, “সাবেক সংসদ সদস্য শওকত হাসানুর রহমান রিমনের লোকজন তালিকায় নাম ওঠানো নিশ্চিত করতে তাদের কাছ থেকে তিন থেকে ছয় হাজার টাকা করে নিয়েছেন।”
একই অভিযোগ করেছেন বরগুনা সদরের দুটি ইউনিয়নের প্রকল্পের আওতায় আসা সুবিধাভোগীরাও। নলটোনা এলাকার হিরু মল্লিক, রাসেল মিয়া, মোসা. মাসুরাসহ অনেকেরই এমন অভিযোগ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, টেন্ডারের প্রথম বিল উত্তোলনের জন্য কিছু কিছু বাড়িতে তিন হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতার ট্যাংকি রাখার প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন ঠিকাদার। তবে, নিম্নমানের কাজ করায় ট্যাংকি স্থাপনের আগেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সেসব প্লাটফর্ম।
পাথরঘাটার চরদুয়ানী এলকার মোস্তফা হাওলাদার ও মিল্টন সমাদ্দার বলেন, “তিন বছর আগে তড়িঘড়ি করে নিম্নমানের প্লাটফর্ম বানিয়ে ফেলে রেখে গেছেন ঠিকাদার। তারপর আর কোন খোঁজ নেই। ট্যাংকিও দেয়নি। ট্যাংকি রাখার আগেই প্লাটফর্ম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।”
সরেজমিনে অনুন্ধান করে দেখা যায়, প্রতিটি ইউনিয়নে লোক দেখানো কিছু কিছু ট্যাংকি বিতরণ করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে সেসব ট্যাংকি খুবই নিম্নমানের। এছাড়া পানি সংরক্ষণের জন্য ফিটিংসের সব মালামাল দেয়ার কথা থাকলেও কিছুই করেনি ঠিকাদার।
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নে প্রকল্পের আওতায় এসেছেন হানিফা, তুহিন ইব্রাহিমসহ অনেকে। তারা বলছেন, “ছয় মাস আগে নিম্নমানের ট্যাংকি দিয়েছে ঠিকাদার। তবে ফিল্টারসহ অন্যান্য ফিটিংসের কিছুই দেয়নি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কোন পদক্ষেপও নিচ্ছে না।”
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে পাথরঘাটার চরদুয়ানী এলাকার মোস্তফা হাওলাদার বাড়ির মসজিদের সামনে এবং মিল্টন সমাদ্দারের বাড়ির মন্দিরের পিছনে দুটি পানির ট্যাংকি এবং শেড পাওয়ার কথা থাকলেও মসজিদ ও মন্দির ঘুরে দেখা যায়, আড়াই বছর আগে ট্যাংকি রাখার প্লাটফর্ম করে চলে গেছে ঠিকাদার। এছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ২০২২-২০২৩ ও ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের তালিকা ধরে পাথরঘাটা ও সদর উপজেলা ঘুরে দেখা যায়- ট্যাংকি না পাওয়া মানুষের সংখ্যাই বেশি।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বরগুনা সদরের নলটোনা ইউনিয়নের গাজী মাহমুদ এলাকার বেল্লাল হোসেন, আবু হানিফা, সহিদুল ইসলাম, ইদ্রিস, আলী আকবর ও মন্টু মোল্লসহ বেশিরভাগ পরিবার রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রকল্পের আওতায় আসার কথা থাকলেও অর্থবছর শেষ হলেও কিছুই পায়নি।
গোটা প্রকল্পে প্রতিটি ধাপে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে। বরগুনা সদরের ৯নং এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের মাইঠা এলাকা। এই এলাকায় সুপেয় পানির কোন সংকট নেই। অধিকাংশ বাড়িতেই রয়েছে গভীর নলকূপ। সেসব নলকূপ থেকে সুপেয় পানি পাচ্ছেন বাসিন্দারা। এই এলাকার স্বচ্ছল বাসিন্দা আবুল হোসেন, ফরহাদ হোসেন, মনির খান, শহিদুল ইসলামসহ অসংখ্য পরিবারের নাম রয়েছে ওই তালিকায়। অথচ তালিকাভুক্তদের অনেকের বাড়িতেই গভীর নলকূপ ও সুপেয় পানির পুকুর রয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দারা যখন সুপেয় পানির সংকটে দিশেহারা, পাশ্ববর্তী উপজেলা বামনার ডৌয়াতলা ইউনিয়নে পানি সংকট না থাকলেও এই ইউনিয়নের ৫৬২ জন তালিকাভুক্ত হয়েছেন এই প্রকল্পে।
উপকূলীয় ১০ জেলার মানুষের জন্য নিরাপদ বৃষ্টির পানি সরবরাহ করতে আওয়ামী লীগ সরকার ৯৬১ কোটি ৭৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প গ্রহণ করেন। এর মধ্যে বরগুনা, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালী জেলায় দরপত্র পায় কামাল এন্টারপ্রাইজ।
এ বিষয়ে কামাল এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী ঠিকাদার কামাল হোসেন বলেন, “কিছু প্লাটফর্ম বৃষ্টির মৌসুমে নির্মাণ করা হয়েছে, তাই সমস্যা হয়েছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত সবাই ট্যাংকসহ সবকিছুই পাবেন, একটু সময় লাগবে।”
এসব বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাইসুল ইসলাম দাবি করেছেন, “প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। এখনো কাজ চলমান আছে।”
২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের সুবিধাভোগীরা কেন অর্থ বছর শেষ হওয়ার পরেও প্রকল্পের মালামাল পায়নি? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক কারণে কিছুটা সময় লেগেছে। সবাই ট্যাংকিসহ সব মালামাল পাবেন।”
পাথরঘাটা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান খান রাইজিংবিডিকে বলেন, “অনিয়ম-দুর্নীতির কিছু অভিযোগ পেয়েছি। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের ট্যাংক এখনো অনেক পরিবার পায়নি। এটা আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি। বিষয়টি জানার পর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করে অগ্রগতি সম্পর্কে আমাকে লিখিতভাবে জানাতে বলেছি। ঠিকাদারদের সাথেও কথা বলেছি। ঠিকাদারকে কঠোরভাবে বলেছি। এখন থেকে এই কাজ আমিও তদারকি করব। আমার উপজেলায় কোন অনিয়ম দুর্নীতি সহ্য করা হবে না।”
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, “আমি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়গুলো আমাকে জানতে হবে, না জেনে এ বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।”
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প র আওত য় এই প রকল প প ল টফর ম ই প রকল প প থরঘ ট র র উপজ ল বরগ ন র উপক ল য় লবণ ক ত ল ইসল ম এল ক র পর ব র থ কল ও বছর র সদস য নলক প সদর র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
১০ বছরে বিকাশের আয় বেড়ে ৯ গুণ, মুনাফা ১৭ গুণ
মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা বা এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশের জন্য ২০২৪ সালটি ছিল রেকর্ডের বছর। এ বছর প্রতিষ্ঠানটির আয় প্রথমবারের মতো পাঁচ হাজার কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো মুনাফা ছাড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকার ঘর। সম্প্রতি ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশের গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদন থেকে বিকাশের রেকর্ড আয় ও মুনাফার এই তথ্য পাওয়া গেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর শেষে বিকাশের আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৮ কোটি টাকায়। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিকাশের আয় ৮৬৭ কোটি টাকা বা ২১ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি গত বছর শেষে প্রতিষ্ঠানটির প্রথমবারের মতো ৩১৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৯৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিকাশের মুনাফা বেড়েছে ২১৭ কোটি টাকা বা ২১৯ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিকাশ এত মুনাফা ও আয় করেনি। ২০১১ সালে যাত্রা শুরুর পর বিকাশের সর্বোচ্চ মুনাফা ছিল ২০২৩ সালে, ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি ৯৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। গত বছর একলাফে তা ৩০০ কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়ে যায়। বিকাশের এই মুনাফার ওপর ভর করে ব্র্যাক ব্যাংকও সমন্বিতভাবে ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা করেছে। কারণ, বিকাশের সিংহভাগ মালিকানা ব্র্যাক ব্যাংকের হাতে রয়েছে।
এদিকে বিকাশের গত ১০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১০ বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির আয় বা ব্যবসা বেড়ে হয়েছে ৯ গুণ। আর একই সময়ের ব্যবধানে মুনাফা বেড়ে ১৭ গুণ হয়েছে। ১০ বছর আগে ২০১৪ সালে বিকাশের আয় ছিল ৫৭৩ কোটি টাকা। আর ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করেছিল ১৯ কোটি টাকা। দুটোই এখন বেড়ে বিকাশকে বড় অঙ্কের লাভজনক এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।
তিন বছর ধরে বিকাশের মুনাফা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১১৭ কোটি টাকা লোকসান করেছিল। এরপর ২০২২ সালে ১৮ কোটি এবং ২০২৩ সালে ৯৯ কোটি টাকা মুনাফা করে বিকাশ। তবে ২০১৪ সাল থেকে প্রতিবছরই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা বা আয় বেড়েছে। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে মুনাফায় ছেদ পড়ে। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিকাশের মুনাফা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছিল। ২০১৮ সালে এসে তা কমে যায়। এরপর ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছর বিকাশ লোকসানে ছিল। গত বছর শেষে মুনাফায় বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটে।
জানতে চাইলে বিকাশের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা বা সিএফও মঈনুদ্দিন মোহাম্মদ রাহগীর প্রথম আলোকে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকাশ সব সময় ব্যবসা টেকসই করতে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যকে সামনে রেখেছে। ক্যাশলেস দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে বিকাশ এক দশক ধরে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিষেবা অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও গ্রাহকসহ অংশীজনদের ডিজিটাল শিক্ষা বাড়াতে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করেছে। এই কৌশলগত উদ্যোগ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে স্থিতিশীলতা এনেছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথকে সুগম করেছে।
২০১১ সালে এমএফএস প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করা বিকাশের এখন গ্রাহক প্রায় ৮ কোটি। দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার এজেন্ট ও সাড়ে ৫ লাখ মার্চেন্ট পয়েন্ট। আর্থিক লেনদেন ছাড়াও বিকাশে রয়েছে বিভিন্ন পরিষেবা বিল পরিশোধ, ন্যানো ঋণ ও ডিপোজিট সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার সঙ্গে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানি ইন মোশন, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন বা আইএফসি, গেটস ফাউন্ডেশন, অ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল ও সফটব্যাংক।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ১৮৯ কোটি টাকা সরকারকে কর দিয়েছে। আর ওই বছর ব্যাংক থেকে সুদ বাবদ প্রতিষ্ঠানটি আয় করেছে ১৯০ কোটি টাকা।