থাকছেন শাকিব খান, প্রতিযোগিতায় লড়বেন শুভ-রাজ-বাঁধনরা
Published: 3rd, May 2025 GMT
প্রেক্ষাগৃহে এখনও কাটেনি ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার রেশ। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ঈদুল আজহার প্রস্তুতি। অবশ্য নির্মাণের সময়সীমার ভিত্তিতে অনেক আগে থেকে বছরের দ্বিতীয় ঈদ উৎসবের আয়োজনে সারিবদ্ধ হয়েছে ছবিগুলো। অধিকাংশের ক্ষেত্রে একাধিকবার পেছানোর পর ঠিক হয়েছে মুক্তির দিনক্ষণ। চলুন আসন্ন ঈদুল আজহায় কোন চলচ্চিত্রগুলোর মুক্তির কথা চলছে তা জেনে নেওয়া যাক। আগামী ঈদুল আজহায় মুক্তির মিছিলে ৭টি বাংলাদেশি সিনেমা।
তাণ্ডব
আসছে ঈদে দর্শক আগ্রহের তুঙ্গে থাকা সিনেমাটি হচ্ছে শাকিব খান অভিনীত 'তাণ্ডব'। 'তুফান'-এর পর আবারও ঢালিউড সুপারস্টারকে নিয়ে ছবি বানালেন পরিচালক রায়হান রাফী। এবার শাকিবের বিপরীতে প্রধান নায়িকা হিসেবে থাকবেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাবিলা নূর। এর মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিষেক হতে যাচ্ছে সাবিলার। ছবিতে সাংবাদিকের ভূমিকায় দেখা যাবে দুই বাংলায় বহুল সমাদৃত অভিনেত্রী জয়া আহসানকে। এ ছাড়া ৪০ সেকেন্ডের একটি ক্যামিওতে দেখা দেবেন বর্তমান সময়ের ব্যস্ততম তারকা শরিফুল রাজ। রায়হান রাফী চলচ্চিত্রটির মূল গল্প লিখেছেন। চিত্রনাট্যে রাফীর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছেন আদনান আদিব খান। দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে হামলার প্রেক্ষাপট নিয়ে এগিয়ে যাবে সিনেমার কাহিনি।
ইনসাফ
ফারিণের নতুন সিনেমার নাম 'ইনসাফ'। ওয়েব চলচ্চিত্রের বাইরে বাংলাদেশে এটি ফারিণের দ্বিতীয় ছবি। এর আগে ২০২৪ সালে তাঁর অভিনীত প্রথম বাংলাদেশি সিনেমা 'ফাতিমা' মুক্তি পায়। 'ইনসাফ'-এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো তিনি ফর্মুলা ছবির নায়িকার ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। এখানে তাঁর বিপরীতে রয়েছেন শরিফুল রাজ। খলনায়কের ভূমিকায় দেখা যাবে শক্তিমান অভিনেতা মোশাররফ করিমকে। অ্যাকশন ও থ্রিলার গল্পকেন্দ্রিক সিনেমাটির নির্দেশনা দিয়েছেন সঞ্জয় সমাদ্দার।
নীলচক্র
বেশ কয়েকবার মুক্তির তারিখ পেছানোর পর আরিফিন শুভ অভিনীত 'নীলচক্র' এবার কোরবানির ঈদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। মিঠু খান পরিচালিত চলচ্চিত্রটির ইতোপূর্বে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছে আমেরিকান ফিল্ম মার্কেটে। এনায়েত এ মিলন প্রযোজিত এ সিনেমায় শুভ'র নায়িকা মন্দিরা চক্রবর্তী। এটি মন্দিরার অভিনীত দ্বিতীয় ছবি। 'কাজলরেখা'য় তাঁর প্রথম কাজ দেখিয়ে তিনি দর্শক-হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। 'নীলচক্র' সিনেমাটি ক্রাইম ঘরানার, যেখানে ইন্টারনেট জগতের নেতিবাচক দিককে তুলে ধরা হয়েছে। মানবকল্যাণে ইন্টারনেটের তাৎপর্যবহুল অবদান থাকলেও এর গহীনে রয়েছে ভয়াবহ ফাঁদ। এই ফাঁদে পড়ে অনেকের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়, এমনকি প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটে। এমনি প্রেক্ষাপটের ওপর নির্মিত হয়েছে সিনেমার কাহিনি। 'নীলচক্র'র মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিনয় যাত্রা শুরু করলেন সংগীতশিল্পী বালাম। এছাড়া বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয়ে দেখা যাবে শিরীন আলম, ফজলুর রহমান বাবু, খালেদা আক্তার কল্পনা, প্রিয়ন্তী উর্বী, দীপান্বিতা মার্টিন, শাহেদ আলী, মনির আহমেদ শাকিল, মাসুম রেজওয়ান এবং টাইগার রবিকে।
টগর
অপ্রকাশিত চলচ্চিত্র 'নাকফুলের কাব্য'র পর দ্বিতীয়বারের মতো জুটিবদ্ধ হচ্ছেন পূজা চেরী ও আদর আজাদ। আলোক হাসানের পরিচালনায় 'টগর' শিরোনামের এ সিনেমাটি অ্যাকশন ও থ্রিলার ঘরানার। কাহিনি, চিত্রনাট্য এবং প্রযোজনায় রয়েছে এ আর মুভি নেটওয়ার্ক। সংলাপ লেখনীতে ছিলেন মামুনুর রশিদ তানিম। সিনেমার অন্য অভিনয়শিল্পীরা হলেন রোজী সিদ্দিকী, আজাদ আবুল কালাম, জোযন, সুমন আনোয়ার, এল আর খান সীমান্ত ও শরিফুল।
এশা মার্ডার: কর্মফল
একাধিকবার মুক্তির তারিখ পিছিয়ে যাওয়া ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে আজমেরী হক বাঁধন অভিনীত 'এশা মার্ডার: কর্মফল'। এবার ঈদুল আজহাকে লক্ষ্য করে পুরোদমে অগ্রসর হচ্ছেন নির্মাতা সানী সানোয়ার। 'ব্ল্যাক ওয়ার' ও 'মিশন এক্সট্রিম'খ্যাত এ পরিচালক নিজে একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁর সিনেমাগুলোতেও প্রধান ভূমিকায় থাকে কোনো না কোনো পুলিশ চরিত্র। এশা মার্ডারও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানে পুলিশ চরিত্রে রয়েছেন বাঁধন, যেখানে একই জেলায় সংঘটিত তিনটি মেয়ের খুনের তদন্তের দায়িত্ব অর্পণ করা হয় তাঁকে। শ্রেষ্ঠাংশে থাকা অন্য অভিনয়শিল্পীরা হলেন পূজা ক্রুজ, মিশা সওদাগর, শহীদুজ্জামান সেলিম, শতাব্দী ওয়াদুদ, এজাজ আহমেদ ও মাজনুন মিজান। এ ছাড়াও বিভিন্ন ভূমিকায় রয়েছেন সুষমা সরকার, সুমিত সেনগুপ্ত, শরীফ সিরাজ, দীপু ঈমাম, নিবির আদনান নাহিদ এবং আনিসুল হক বরুণ। পরিচালনার পাশাপাশি মার্ডার মিস্ট্রি ঘরানার সিনেমাটির গল্পও লিখেছেন সানি সানোয়ার। চিত্রনাট্যে তাঁর সঙ্গে যৌথভাবে অবদান রেখেছেন হাসানাত বিন মতিন। সংলাপের দায়িত্বে ছিলেন শাহজাহান সৌরভ।
পিনিক
শবনম বুবলীকে প্রথমবারের মতো খলনায়িকার ভূমিকায় দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ভক্তরা। তাদের এই প্রতীক্ষা দীর্ঘায়িত করে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে ছবি মুক্তির দিনক্ষণ। তবে এবারের কোরবানির ঈদে চূড়ান্ত মুক্তির কথা চলছে জাহিদ জুয়েল পরিচালিত এ সিনেমাটির। সিনেমায় বুবলীর প্রধান সহশিল্পী হিসেবে রয়েছেন আদর আজাদ। ২০২২-এর 'তালাশ' এবং ২০২৩-এর 'লোকাল'-এর পর 'পিনিক' বুবলী-আদর জুটির তৃতীয় কাজ। থ্রিলার, সাসপেন্স ও অ্যাকশনে ভরপুর ছবিটিতে প্রাধান্য পেয়েছে জিঘাংসা, প্রতিশোধ-পাল্টা প্রতিশোধের গল্প। চিত্রনাট্যে রয়েছেন আখিউজ্জামান মেনন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন আলী রাজ, ফজলুর রহমান বাবু ও আজাদ আবুল কালামের মতো অভিনেতারা। এ ছাড়াও আছেন সমু চৌধুরী, মাসুম বাশার, মোমেনা চৌধুরী, এ কে আজাদ সেতু, শরীফ সিরাজ, নাফিস আহমেদ বিন্দু এবং জয়িতা মহলানবীশ। ইউরো বাংলা এন্টারটেইনমেন্টের সঙ্গে সিনেমার সহপ্রযোজনা করেছেন অভিনেতা শিমুল খান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ ত রন ট য চলচ চ ত র ন লচক র পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।
আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।
তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।
বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।