খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা এবং পানছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ৬৬ জনকে ‘পুশইন’ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোর থেকে তাদের পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্ত হয়ে ৩০ জনকে পুশইন করার তথ্য পাওয়া গেছে। যাদের পুশইন করা হয়েছে তাদের কাছে কোনো দেশের পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র নেই।
বিজিবির সূত্র বলছে, তাদের নাগরিকত্ব ও পরিচয় বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া শেষে প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভারত থেকে বাংলা ভাষাভাষী যাদের অবৈধভাবে পুশইন করা হয়েছে তারা বিজিবির হেফাজতে রয়েছে। এরই মধ্যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এই ধরনের পুশইনের ঘটনার জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বিএসএফের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে পতাকা বৈঠকের আহ্বান করা হয়। যদি তারা ভারতীয় নাগরিক বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের ফেরত পাঠানো হবে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বিজিবির পক্ষ থেকে অবহিত করা হয়।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেছেন, ভারত থেকে এভাবে পুশইন করাটা সঠিক প্রক্রিয়া নয়। আমরা এরই মধ্যে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।
গতকাল বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই মন্তব্য করেন তিনি। নাগরিকদের পুশইন করার বিষয়ে খলিলুর রহমান বলেন, আমরা প্রতিটি কেস আলাদাভাবে নিরীক্ষণ করছি। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আমাদের দেশের নাগরিক যদি কেউ হয়ে থাকেন, আর সেটা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের আমরা গ্রহণ করব। তবে এটা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় হতে হবে। এভাবে পুশইন করাটা সঠিক প্রক্রিয়া নয়।
এটা নিয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, আমরা এটা নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ভোরে মাটিরাঙা উপজেলার ৪০ বিজিবি জোনের আওতাধীন শান্তিপুর বিওপির আওতাধীন দক্ষিণ শান্তিপুর সীমান্ত দিয়ে ৩ পরিবারের ২৭ জন, পানছড়ি উপজেলার রূপসেনপাড়া বিওপি এলাকা দিয়ে ২৪, বিটিলা বিওপি এলাকা দিয়ে ৬ এবং মাটিরাঙার তাইন্দং দিয়ে আরও ৯ জনসহ ৬৬ জনকে ভারত থেকে পুশইন করা হয়েছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
সীমান্তের একটি সূত্র বলছে, পুশইন অনেককে প্রথমে গুজরাট থেকে ফ্লাইটে সীমান্তে নিয়ে আসা হয়। এরপর বিএসএফ ওপার থেকে এপারে পুশইন করে। আরও অনেককে পুশইন করতে গুজরাট ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে নিয়ে আসা হয়।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা জানান, মাটিরাঙা ও পানছড়ির সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে পুশইন করা ব্যক্তিরা বিজিবির অধীনে রয়েছে। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করবে প্রশাসন।
এদিকে ভারত থেকে কুড়িগ্রামে অনুপ্রবেশ করা ৩৫ রোহিঙ্গাসহ ৪৪ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল সকালে জেলার রৌমারী থেকে ২১ রোহিঙ্গা ও ৯ বাংলাদেশি এবং ভূরুঙ্গামারী থেকে ১৪ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে নারী-শিশুও রয়েছে।
গতকাল ভোরে রৌমারী উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ভাওয়ারকুরি সীমান্তে দিয়ে তাদের ফেরত পাঠায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। ঘোরাঘুরির সময় স্থানীয়রা তাদের আটক করে বিজিবির হাতে তুলে দেয়।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমান জানান, ভোররাতে রৌমারী বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ৩০ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এদের মধ্যে ২২ জন রোহিঙ্গা। আটককৃতদের পরিচয় যাছাই করছে বিজিবি।
কুড়িগ্রাম ২২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.
চার বাংলাদেশি আটক
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার জগদল সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরে ৪ বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে বিএসএফ। ভোরে সীমান্ত পিলার ৩৭৪/১-এস থেকে প্রায় ২০০ গজ ভারতের ভেতরে এই ঘটনা ঘটে।
আটককৃতরা হলেন– রানীশংকৈল উপজেলার ঢোলপুকুর জগদল গ্রামের মৃত বশির উদ্দীনের ছেলে মো. আলম (৪৫), বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী বেলপুকুর গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে মো. মিস্টার (৩০), মোড়লহাট জিয়াবাড়ী এলাকার আব্দুল হকের ছেলে হামিদুল ইসলাম (৩০) এবং একই এলাকার আনসারুল ইসলামের ছেলে শামীম (২৩)।
৫০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজীর আহমেদ বলেন, মাদকদ্রব্যসহ ৪ বাংলাদেশিকে আটক করে বিএসএফ। তাদের ফিরিয়ে আনতে এ বিষয়ে পতাকা বৈঠকের জন্য চিঠি দিয়েছি। পতাকা বৈঠকের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
সীমান্তবর্তী জেলায় পুলিশ সতর্ক
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৩২টি এবং মিয়ানমারের সঙ্গে তিনটি সীমান্ত জেলা রয়েছে। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপারদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি ড. বাহারুল আলম।
গতকাল রাতে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ সমকালকে বলেন, কোনো দু্র্বৃত্ত যাতে সীমান্তের ওপার থেকে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি। সীমান্তবর্তী যেসব থানা রয়েছে তাদের সতর্ক করা হয়েছে।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, রৌমারী প্রতিনিধি ও মানিকছড়ি সংবাদদাতা)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ম ন তবর ত উপজ ল র ব এসএফ সতর ক গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
সাতজনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ, দু’জনকে হস্তান্তর
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার চাপসার সীমান্ত দিয়ে শুক্রবার ভোরে সাতজনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। পরে তাদের আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এর আগে বৃহস্পতিবার লালমনিরহাট সীমান্তে দুই নাগরিককে হস্তান্তর করেছে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীরা। এ নিয়ে গত ৪ মে থেকে ১ হাজার ৫২৩ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ।
ঠাকুরগাঁওয়ে বিজিবির হাতে আটকদের মধ্যে চারজন নারী এবং এক শিশু রয়েছে। ৪২ বিজিবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানিয়েছেন, তারা ২০-২৫ বছর আগে কাজের সন্ধানে দালালের মাধ্যমে ভারতের মুম্বাই গিয়েছিলেন। ৬-৭ দিন আগে মুম্বাই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে এবং গত বুধবার সীমান্ত এলাকায় নিয়ে আসে। আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মনিবন্ধন সনদ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। নাগরিকত্ব সঠিক হওয়ায় তাদের হরিপুর থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিজিবি-বিএসএফ কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়েছে।
এদিকে লালমনিরহাট সীমান্তে আমিনুল ইসলাম নামে এক ভারতীয় নাগরিককে স্থানীয়রা আটক করে বিজিবির হাতে তুলে দেয়। তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকেছিলেন। তাঁর আটকের খবরে সীমান্তের ভারতীয় নাগরিকরা সিরাজুল হক নামে এক বাংলাদেশি যুবককে তুলে নিয়ে বিএসএফের কাছে সোপর্দ করে। পরে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে উভয় দেশের নাগরিককে হস্তান্তর করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মোগলহাট সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে।
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী ইমাম সমকালকে বলেন, বাংলাদেশে প্রবেশ করে কাউকে তুলে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। তবে তারা দু’জনই সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করেছেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিজিবি ও বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর পর উভয় দেশের নাগরিকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের হস্তান্তর করা হয়।