২০২৩ সালে বিএনপির মহাসমাবেশে যুবদল নেতা শামীমকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় কক্সবাজার-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. জাফর আলমকে ৪ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ শুক্রবার ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান এ আদেশ দেন।

এদিন তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের উপপরিদর্শক ফেরদৌস আলম। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আদালতের পল্টন থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার উপপরিদর্শক মো.

রোকনুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

গত ৫ মে জাফর আলমের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র। এর আগে গত ২৮ এপ্রিল জাফর আলমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহর আদালত। তার আগে ২৭ এপ্রিল রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকায় মহাসমাবেশ ডাকা হয়। মহাসমাবেশকে পণ্ড করার জন্য একই দিনে আওয়ামী লীগ পাল্টা সমাবেশ ডাকে। বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে পুলিশের সহায়তায় মহাসমাবেশে হামলা চালানো হয়। হামলায় যুবদল নেতা শামীম নিহত হন। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা করা হয়।

এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাফর আলম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ২০২৪ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন অংশ নিয়ে হেরে যান তিনি। জাফর আলম ২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ছিলেন। ২০১৪ সালে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে জয়ী হন।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ ৪ কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি খারাপ

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ চার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো খারাপ অবস্থায় আছে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। অন্য তিনটি কারণ হলো কঠোর আর্থিক ও রাজস্ব নীতির প্রভাব, বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা বৃদ্ধি এবং ব্যাংক খাতে অব্যাহত চাপ। আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।

আইএমএফের সঙ্গে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে দুই কিস্তির ১৩৭ কোটি মার্কিন ডলার একসঙ্গে পাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামীকাল ২৬ জুন বাংলাদেশের হিসাবে এ অর্থ জমা হবে। গত সোমবার রাতে আইএমএফের বোর্ড সভায় দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি অনুমোদন করা হয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আইএমএফ আরও বলেছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে আগের সরকারের পতন হয়।

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আছে, এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। বিনিয়োগ স্থবিরতাও কাটেনি। আইএমএফ অর্থনীতির কিছু বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যা ঠিকই আছে। জাহিদ হোসেন, সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংক, ঢাকা কার্যালয়

তখন সামষ্টিক অর্থনীতি আরও চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে। পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা উদ্যোগে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়; যা অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতার পথে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জটিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও আইএমএফ কর্মসূচির অধীন তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের পর্যালোচনায় বাংলাদেশের পারফরম্যান্স মোটামুটি সন্তোষজনক ছিল। সরকার প্রয়োজনীয় নীতিগুলো বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সম্প্রতি বিনিময় হার আরও নমনীয় করার পাশাপাশি কর রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আছে, এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। বিনিয়োগ স্থবিরতাও কাটেনি। আইএমএফ অর্থনীতির কিছু বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যা ঠিকই আছে।

জাহিদ হোসেনের মতে, আইএমএফ মূলত তিন ধরনের সুপারিশ করেছে। কঠোর আর্থিক নীতি অব্যাহত রাখার কথা বলেছে। এ ছাড়া যে বিনিময় হার ব্যবস্থা প্রচলন করা হয়েছে, তা যেন বজায় রাখা হয়। আর রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজেট–ঘাটতি কমাতে হবে।

অর্থনীতি নিয়ে আইএমএফের মূল্যায়ন

আইএমএফ বলছে, চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হবে।

এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিও আগামী অর্থবছরে কিছুটা সহনীয় হবে। আইএমএফের মতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে। চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি গড়ে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ হওয়ার কথা বলেছে আইএমএফ।

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি নানা ধরনের সামষ্টিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। কঠিন পরিবেশ সত্ত্বেও আইএমএফের কর্মসূচির অধীনে প্রতিশ্রুত খাতগুলোর অগ্রগতি সন্তোষজনক রয়েছে এবং সরকার প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও সংস্কার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখন বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ পুনর্গঠন এবং মূল্যস্ফীতি কমানোর ওপর জোর দেওয়া উচিত।

সম্প্রতি সরকার নতুন বিনিময় হার ব্যবস্থা চালু করেছে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছে, যা ইতিবাচক। কঠোর মুদ্রানীতির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন নীতিমালার সমন্বয়, নমনীয় বিনিময় হার এবং রাজস্ব ঘাটতি হ্রাস—এই তিনটি মিলেই অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক খাতে ভারসাম্য স্থাপনে সহায়ক হবে বলে মনে করে আইএমএফ।

সরকারি ভর্তুকি ধাপে ধাপে কমিয়ে একটি টেকসই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত বলেও মত দিয়েছে আইএমএফ। এ ছাড়া সরকারি অর্থের দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ব্যয়ের দক্ষতা বাড়াতে হবে। আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ খাতে সংস্কারের জন্য ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য কৌশল প্রণয়ন জরুরি। পাশাপাশি ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে ব্যাংক খাত পুনর্গঠনের জন্য নতুন আইন দ্রুত কার্যকর করা দরকার।

আইএমএফের মতে, বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে টেকসই কাঠামোগত সংস্কার অপরিহার্য। এর মধ্যে রয়েছে রপ্তানি বৈচিত্র্য, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করা, সুশাসন জোরদার এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্তের গুণগত মান উন্নয়ন।

২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ কর্মসূচি অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন হওয়া এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে তখন আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।

২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার বাংলাদেশ পেয়েছে। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৩১ কোটি ডলার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ইসরায়েলের ৭ সেনাসদস্য নিহত
  • রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ ৪ কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি খারাপ
  • ৫ বছরে লেবুজাতীয় ফসলের উৎপাদন বেড়েছে ২৫%
  • আশুলিয়ায় ৬ জনকে পোড়ানোর ঘটনা: সাবেক এমপি সাইফুলসহ ১৬ জনকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন
  • অডিও বুকের বিক্রি বেড়েছে
  • গত ৬ দিনে ১৫ টাকা দাম বেড়েছে রহিমা ফুডের
  • তৃতীয় ওপেনার হিসেবে দলে নাঈম শেখ, সৌম্যকে কড়া বার্তা
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ শিক্ষক ও ১৯ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর
  • সেন্ট্রাল ফার্মার ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নিরীক্ষকের শঙ্কা, পরিদর্শনের নির্দেশ
  • হিরো আলমকে হত্যাচেষ্টার মামলায় জামিন পেলেন স্ত্রী রিয়া মনি ও তাঁর বন্ধু