আ. লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে আগেই অনুরোধ করেছিলাম: আহমেদ আযম খান
Published: 14th, May 2025 GMT
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, ‘‘যারা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। তাদের তো বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ থাকতে পারে না। আমরা ফেব্রেুয়ারি মাসের ১০ তারিখেই এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে লিখিতভাবে অনুরোধ করেছিলাম।’’
বুধবার (১৪ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষার মানোন্নয়ন বিষয়ক মতবিনিময় সভায় যোগদানের আগে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
আহমেদ আযম খান বলেন, ‘‘নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের ধারাবাহিক যে বক্তব্য, আমাদের সুচিন্তিত যে বক্তব্য, সেটাই আমাদের কথা। মানুষের আকাঙ্খা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। সেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রথম পদ্ধতিই হলো অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। স্বাধীন সংসদ এবং নির্বাচিত সরকার। গত ১৭ বছর আমরা যে রক্ত দিয়েছি। আমরা সাত লক্ষ বিএনপির নেতাকর্মী হামলা, মামলায় জর্জরিত হয়েছি। হাজার হাজার নেতাকর্মী আমাদের গুম হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী খুন হয়েছে অবাধ ও নিরপক্ষে নির্বাচনের আন্দোলনের জন্য।’’
‘‘আমাগী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রয়োজনীয় যে সংস্কারগুলো দরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সেই সংস্কারগুলো শেষ করে আশা করবো ডিসেম্বরের মধ্যেই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। আমার অতি দ্রুত গণতন্ত্রে ফিরতে চাই।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ হবে গণতন্ত্রের বাংলাদেশ। এটা কোনো ফ্যাসিবাদী বাংলাদেশ হবে না। কোনো স্বৈরতন্ত্রের বাংলাদেশ হবে না। আদালতের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করা হোক।’’
‘‘এপ্রিল মাস থেকে যতবার উপদেষ্টামণ্ডলীর সাথে কথা হয়েছে আমাদের নেতৃবৃন্দ এই আলোচনাগুলো রেখেছেন। কাজেই আমরা মনে করি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোই রাজনীতি করবে।’’ বলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামীম আল মামুন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক আবুল কাশেম, উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন আল জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক নূরনবী আবু হায়াত খান নবু, বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি মীর মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
কাওছার//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণত ন ত র ক ব এনপ র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বৈরতন্ত্র উত্থানের দায় আসলে কাদের
প্রাচীন গ্রিসে ক্ষুদ্র অসংখ্য নগররাষ্ট্র ছিল। সেখানে নগরের অধিবাসীকেই বলা হতো নাগরিক, যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল নাগরিকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরা সেই সব ব্যক্তিকে নাগরিক বলব, যাদের আইন প্রণয়ন ও বিচারিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের ক্ষমতা আছে।’ তাঁর মতে, যে ব্যক্তি নগররাষ্ট্রের শাসনকাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে অক্ষম, তিনি প্রকৃত নাগরিক নন।
আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা নাগরিককে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে—যেকোনো রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন, রাষ্ট্র প্রদত্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করেন এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য ন্যায়ের সঙ্গে পালন করেন, তাঁকেই নাগরিক বলা যায়। একই সঙ্গে নাগরিককে অবশ্যই অন্য মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন না করার ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে।
প্রতিটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো সৎ, যোগ্য ও নীতিবান নাগরিক। রাষ্ট্রের কাঠামো ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করে নাগরিকের চরিত্র ও আচরণের ওপর। তাই রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন সচেতন নাগরিক—যিনি নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত। এ জ্ঞান ও সচেতনতাই রাষ্ট্রকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে বলা হয় জনগণের অংশগ্রহণে, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের কল্যাণে পরিচালিত শাসনব্যবস্থা; কিন্তু প্রশ্ন হলো যদি জনগণ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অসচেতন থাকেন, তবে কি গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বরূপ অক্ষুণ্ণ থাকে? বাস্তবতা হলো নাগরিকের অজ্ঞতা ও উদাসীনতাই স্বৈরতন্ত্রকে জন্ম দেয়।
প্রথমত, যেখানে মানুষ নিজের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞ, সেখানে শাসকগোষ্ঠী সহজেই ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে। ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন—এসব বিষয়ে নাগরিক উদাসীন থাকলে শাসকের জবাবদিহি বিলীন হয়ে যায়, তখন গণতান্ত্রিক কাঠামো টিকে থাকলেও এর প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত, নাগরিকেরা ভয়, অজ্ঞতা বা উদাসীনতার কারণে যখন অন্যায় ও অনিয়ম মেনে নেন, তখনই স্বৈরতন্ত্র শিকড় গাড়ে। শাসকের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত তারা অন্ধভাবে মেনে নিলে সরকার জবাবদিহি এড়িয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে; কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—শক্তিশালী শাসকের শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয় কেবল তখনই, যখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। জার্মানি থেকে পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশের অতীত—সবখানেই দেখা যায়, নাগরিক–সচেতনতার অভাবেই স্বৈরতন্ত্রের বিস্তার ঘটেছিল।
তৃতীয়ত, নাগরিক সমাজ দুর্বল হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন কিংবা নাগরিক সংগঠনগুলোও কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়। তখন শাসকেরা সহজেই বিকল্প কণ্ঠরোধ করে ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। অর্থাৎ, নাগরিকের নীরবতাই শাসকের জন্য সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্রে পরিণত হয়।
অতএব, স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নাগরিক শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতা। পরিবার থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে মানুষকে জানতে হবে তাদের অধিকার, কর্তব্য ও রাষ্ট্রের কাছে দাবি করার উপায়। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হতে হবে সত্য প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম, তোষণ বা প্রোপাগান্ডার যন্ত্র নয়। মনে রাখতে হবে—অধিকার চর্চা না করলে অধিকার হারিয়ে যায়। তাই প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হলো নিজের অধিকার সম্পর্কে জানা ও তা প্রয়োগ করা।
সবশেষে বলা যায়, নাগরিকের অধিকার বিষয়ে অসচেতনতা কোনো ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়; বরং তা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর। সচেতন নাগরিক সমাজই পারে জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র গড়ে তুলতে আর অসচেতন নাগরিক সমাজই সৃষ্টি করে স্বৈরতন্ত্রের জন্মভূমি।
ইসরাত জাহান
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়