বাকৃবির ভাসানী হলে পুনরায় ‘গেস্টরুম’ চালুর অভিযোগ
Published: 14th, May 2025 GMT
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাওলানা ভাসানী (নাম প্রস্তাবিত) হলে পুনরায় গেস্টরুম চালুর অভিযোগ উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ফেসবুক পোস্ট ও একটি অডিও ক্লিপে দাবি করা হয়েছে, ওই হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়মিতভাবে গেস্টরুমে ডেকে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ছাত্র সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণে আবাসিক হলগুলোতে নবীন শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের যে সংস্কৃতি প্রচলিুত ছিল, সেটিই মূলত ‘গেস্টরুম’ নামে পরিচিত। গত জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের পর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ধারার ক্যাম্পাস রাজনীতি শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিনের নিপীড়নমূলক রাজনীতি ও গেস্টরুম সংস্কৃতি অনেকাংশে বন্ধ হয়।
আরো পড়ুন:
গবি ক্যান্টিনে ফের দুরবস্থা, স্থায়ী সমাধান দাবি
জাবিতে ছাত্রশিবিরের মেডিকেল ক্যাম্প
ফেসবুক পোস্টে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা হয়েছে, “প্রায় প্রতিদিন রাতে আমাদের গেস্টরুমে ডাকা হয়। সেখানে মানসিক চাপ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বর্ষের ১০ জন সিনিয়র ভাই গেস্টরুমে কথা বলতেন। তারা দাম্ভিকতার সুরে বলতেন, প্রশাসনও আমাদের কিছু করতে পারবে না। যদি কেউ গেস্টরুমের খবর বাইরে দেয়, তাকে হত্যা করব বলেও হুমকি দেওয়া হয়। আরও বলা হয়, যদি আমাদের কথা না মানো, তাহলে হল থেকে বের করে দেওয়া হবে।”
ছড়িয়ে পড়া একটি অডিও ক্লিপে শোনা যায়, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ‘ভুলত্রুটি’ ধরিয়ে দিচ্ছেন এবং ‘আদব-কায়দা শেখানোর’ নামে বকাঝকা করছেন।
তবে হলের কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ওই অডিওটি কয়েক মাস আগের, যখন হলে আন্তঃহল ইনডোর গেমস টুর্নামেন্ট চলছিল। সে সময় টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার জন্য এবং শিক্ষার্থীদের খেলার সমর্থনে মাঠে উপস্থিত থাকার জন্য ডাকা হয়েছিল।
সত্যতা যাচাইয়ের জন্য হলের প্রথম বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলা হলে তারা জানান, প্রচলিত অর্থে নিয়মিত গেস্টরুম না হলেও কয়েকদিন ডাকার ফলে আমরা কিছুটা মানসিক চাপ অনুভব করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের গেস্টরুমে ডাকা হলেও পূর্বের প্রচলিত ধারার মতো সেরকমভাবে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা হয়নি। টুর্নামেন্ট বা বিভিন্ন ইভেন্টের আগে সিনিয়র ভাইয়েরা কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদেরকে ডাকতেন।”
ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, “গত ২৮ এপ্রিলের আগে টানা চার-পাঁচদিন আমাদের ডাকা হয়েছিল, যাতে আমাদের হলে শুরু হওয়া ফুটবল টুর্নামেন্টের সফল আয়োজন নিশ্চিত করা যায়।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “রাত ৯টা বা ১০টার দিকে ডাকা হতো এবং সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট কথা চলত। শারীরিক নির্যাতন না হলেও কারো দোষত্রুটি থাকলে সামনে এনে বকাঝকা করা হত। বিষয়টি আমাদের কিছুটা বিরক্তিকর লেগেছে এবং মানসিকভাবে চাপ অনুভব করেছি।”
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ আগে আন্তঃহল ভলিবল খেলায় অংশ নেওয়ার পর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মাঠে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। সে উপলক্ষে আবারো তাদের গেস্টরুমে ডাকা হয়েছিল।
এ বিষয়ে ওই হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শরীফ-আর-রাফি বলেন, “র্যাগিংয়ের প্রতি আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে গেস্টরুম হয়েছে বলে জানতে পারি। পরে খোঁজ নিয়ে দেখি, আমার হলে টুর্নামেন্ট চলছিল। ফলে টিম মিটিং, ভলেন্টিয়ার্স মিটিংয়ের কারণে কিছু ছাত্র গেস্টরুমে বসেছিল।”
তিনি বলেন, “সম্প্রতি আমরা একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি যে, গেস্টরুম সবসময় তালাবদ্ধ থাকবে এবং চাবিটি থাকবে নিরাপত্তারক্ষীর কাছে। কেউ গেস্টরুম ব্যবহার করতে চাইলে খাতায় নাম লিখে অনুমতি নিতে হবে। গেস্টরুমের অপব্যবহার বা অনাকাঙ্ক্ষিত ‘গেস্টরুম কালচার’ ঠেকাতে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। যদি কারো কাছে কোনো তথ্য বা প্রমাণ থাকে, দয়া করে আমাকে জানাবেন।”
তিনি আরো বলেন, “আমার অগোচরে কিছু ঘটে থাকলেও তথ্যপ্রমাণ পেলে আমি অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমি যেকোনো অভিযোগ পেলে তা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখি। কোনো অপরাধ যেন ঘটতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। অপরাধ সংগঠনের আগে তা প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে জরুরি।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বর ষ র শ ক ষ র থ আম দ র হয় ছ ল র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
শুভ জন্মাষ্টমী আজ
অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করতে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ—এই বিশ্বাস পোষণ করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। শ্রীকৃষ্ণের এই আবির্ভাব তিথি শুভ জন্মাষ্টমী হিসেবে উদ্যাপন করা হয়।
সনাতন ধর্মের মানুষ বিশ্বাস করেন, পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। আজ শনিবার শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শুক্রবার এক বাণীতে তিনি বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। সমাজে বিদ্যমান শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে কেউ যেন নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণ আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ভরপুর বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি জানিয়েছে, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে আজ সকাল আটটায় দেশ-জাতির মঙ্গল কামনায় শ্রীশ্রী গীতাযজ্ঞ, বেলা তিনটায় ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিল ও রাতে শ্রীকৃষ্ণপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি জানিয়েছে, রাজধানীর পলাশীর মোড়ে আজ বেলা তিনটায় কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলের উদ্বোধন করবেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন ও নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান।