বগুড়ায় উদীচীর জাতীয় সংগীত পরিবেশন মঞ্চে হামলা
Published: 14th, May 2025 GMT
বগুড়ায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে হামলা হয়েছে। আজ বুধবার শহরের সাতমাথায় মুক্তমঞ্চে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন অনুষ্ঠানে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ’–এর ব্যানারে অর্ধশত তরুণ প্রথমে বাধা দেন। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত উদীচীর অনুষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। একপর্যায়ে উদীচী বগুড়া জেলা সংসদ কার্যালয়ের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়।
উদীচী বগুড়া জেলা সংসদ সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মুক্তমঞ্চে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের আয়োজন করা হয়। বিকেল চারটা থেকেই উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা মঞ্চে অবস্থান নেন। বিকেল পাঁচটার দিকে অর্ধশত তরুণ সেখানে যান। তাঁরা ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের ব্যানারে ফ্যাসিস্ট ও তার দোসরদের বিচারের দাবিতে সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একপর্যায়ে তাঁরা সেখানে মাইক টানিয়ে দেন। এ কারণে মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান করতে না পেরে উদীচীর শিল্পীরা শহরের শহীদ খোকন পার্কে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন অনুষ্ঠান আয়োজনের চেষ্টা করেন। একদল তরুণ সেখানেও হামলা চালান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর উদীচীর শিল্পীরা শহরের সাতমাথায় জেলা সংসদ কার্যালয়ে অবস্থান নেন। আর ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের ব্যানারে আসা তরুণেরা সাতমাথায় মুক্তমঞ্চের সামনে অবস্থান নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একপর্যায়ে উদীচীর জেলা শিল্পী সংসদ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়া আয়োজক ও শিল্পীদের ধাওয়া দেন তরুণেরা। এ সময় তাঁরা উদীচী কার্যালয়ের ব্যানার ছিঁড়ে তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে।
উদীচী বগুড়া জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক সাহিদুর রহমান (বিপ্লব) বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের ব্যানারে আসা লোকজনের মধ্যে এনসিপির নেতা-কর্মীসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছিলেন। হামলার সময় পুলিশ নির্বিকার ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির বগুড়া জেলা সংগঠক আহমেদ সাব্বির প্রথম আলোকে বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ বা উদীচীর অনুষ্ঠানে হামলার সঙ্গে এনসিপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এনসিপির দু–একজন নেতা–কর্মী সেখানে সংহতি প্রকাশ করতে গেলে তাঁরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে গেছেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ দমন) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাতমাথায় মুক্তমঞ্চে উদীচী এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চের ব্যানারে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে শহীদ খোকন পার্কে উদীচী অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলে সেখানেও ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ ঝামেলা করার চেষ্টা করে। পুলিশের বাধায় উদীচীর কার্যালয়ে কেউ হামলা করতে পারেনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ক তমঞ চ অবস থ ন ন অন ষ ঠ ন এনস প র
এছাড়াও পড়ুন:
উল্লাস করে, চরম বর্বরতা দেখিয়ে রূপলাল ও প্রদীপকে হত্যা করা হয়
রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে রূপলাল দাস ও প্রদীপ লালকে যখন বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয়ে আনা হয়, তখনো তাঁরা জীবিত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৫ মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও তাঁদের বাঁচাতে পারেনি।
ভিডিওতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে একটি ভ্যানের ওপর রাখা হয়েছে রূপলাল ও প্রদীপকে। চারপাশে কয়েক শ মানুষ, প্রথম সারিতে তরুণ-যুবকেরা। পুলিশের চার সদস্য ভ্যানটি ঘিরে বাঁশিতে ফুঁ দিচ্ছিলেন এবং হাত তুলে জনতাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছেন। এ সময় রূপলাল দাঁড়াতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শোয়া অবস্থায় খুলে যাওয়া লুঙ্গি ঠিক করছিলেন তিনি। পুলিশ ধাক্কা দিয়ে জনতাকে সরানোর চেষ্টা করলে তাঁরা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। শোরগোল শুরু হলে পুলিশ পিটুনিতে অর্ধমৃত এই ব্যক্তিদের রেখে সরে যায়।
গত শনিবার রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জের সায়ার ইউনিয়নের বটতলা বুড়িরহাট এলাকায় দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই দুজন হলেন উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামের রূপলাল দাস (৪০) ও তাঁর আত্মীয় মিঠাপুকুরের ছড়ান বালুয়া গ্রামের প্রদীপ লাল (৩৫)। রূপলাল স্থানীয় বাজারে জুতা সেলাই করতেন ও প্রদীপ লাল ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ চলে যাওয়ার পর রূপলাল মাথা তুলতেই কালো গেঞ্জি পরা এক যুবক তাঁকে ঘুষি মারেন। এতে আবার লুটিয়ে পড়েন রূপলাল। এরপর ভ্যানের ওপর শোয়া অবস্থায় থাকা দুজনকে তরুণ-যুবকেরা যে যেভাবে পারেন কিল, ঘুষি, লাথি, লাঠি ও রড দিয়ে মারতে থাকেন। একপর্যায়ে ভ্যানের ওপর থেকে মাটিতে পড়ে যান প্রদীপ লাল। এ দৃশ্য মুঠোফোনের আলো জ্বালিয়ে ভিডিও করছিলেন অনেকেই।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, প্রদীপ লাল ভ্যান থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সেখানে তাঁকে অনবরত লাথি মারা হয়। রূপলালকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় ভ্যানসহ প্রদীপ লালের ওপর উল্টে দেওয়া হয়। এতে দুজনই ভ্যানের নিচে চাপা পড়েন। এরপর তাঁদের ওপরে থাকা ভ্যানে চাপ দিতে থাকেন তাঁরা। এ সময় বাঁশির শব্দ শোনা গেলেও কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘এ মরে নাই এ্যালাও। দে দে চাপা দে। আরও দে।’
একপর্যায়ে ভ্যানটি কয়েকজন যুবক-তরুণ রূপলাল ও প্রদীপের ওপর থেকে সরিয়ে নেন। এরপর রশি, জুতা, গাছের ডাল, ভ্যানের প্যাডেল দিয়ে মারধর করতে থাকেন। তখন নিস্তেজ ছিলেন রূপলাল ও প্রদীপ। মৃত্যু নিশ্চিত করতে হলুদ, কালো, লাল গেঞ্জি পরা চার-পাঁচজন তরুণ-যুবক রূপলালের পিঠে লাথি মারতে থাকেন। হলুদ গেঞ্জি পরা দুই তরুণ দুই পায়ে পিঠ বরাবর একাধিকবার লাথি দেন। এ সময় পাশে থাকে কয়েকজন বলতে থাকেন, ‘দে দে, আরও দে।’ প্রদীপ লালকে দেখিয়ে আঙুল উঁচিয়ে একজন বলতে থাকেন, ‘এ ওইটাকও দে। মার। নড়ি পা** ঢুকি দেও’ বলে উল্লাস করতে থাকেন। এ কথা শুনে এক হলুদ গেঞ্জি পরা তরুণ গাছের ডাল দিয়ে আরও মারতে থাকেন। ছাইরঙা গেঞ্জি পরা এক যুবক রূপলালের মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলায় পা তুলে দেন। আশপাশের কেউ কেউ তখন বলছিলেন, ‘পুলিশ পালাইছে।’
পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও তাঁদের বাঁচাতে পারেনি