বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় বরাদ্দ কমছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, কোন খাতে কত
Published: 18th, May 2025 GMT
দেশে উন্নয়ন প্রকল্প নিতে সরকার যে ব্যয় করে, তা আগামী অর্থবছরে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমছে। প্রায় সব খাতেই বরাদ্দ কমছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতও। যদিও আশা করা হয়েছিল, এবার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে এবং সেখানে বরাদ্দ বাড়বে।
উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায়। ৬ মে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বর্ধিত সভায় আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। আজ রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় নতুন এডিপি পাস হবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এতে সভাপতিত্ব করবেন।
বাজেট ব্যয়ের দুটি ভাগ থাকে। একটি উন্নয়ন ব্যয় বা এডিপি, অন্যটি অনুন্নয়ন ব্যয়। সার্বিকভাবে বাজেটে কোন খাত কতটা গুরুত্ব পেল, তা বোঝা যায় সামগ্রিক বরাদ্দ দেখে। তবে উন্নয়ন বরাদ্দ দেখে বোঝা যায়, উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোন খাত গুরুত্ব পেল।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে নতুন অবকাঠামো প্রকল্প নেওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। গুণগত পরিচালনায় বেশি বিনিয়োগ করতে চাইপরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদনতুন এডিপিতে উন্নয়ন বরাদ্দের দিক দিয়ে সবচেয়ে অগ্রাধিকার পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এরপর রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। বিগত বছরগুলোতেও এই দুটি খাতকেই অগ্রাধিকার পেতে দেখা গেছে। এবার শিক্ষা খাতের অবস্থান তিন নম্বরে। চার নম্বরে আছে গৃহায়ণ। স্বাস্থ্য খাতের অবস্থান পঞ্চম।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি যেন না হয় এবং প্রকল্প যেন বাস্তবায়নযোগ্য হয়; সে জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতসহ প্রায় সব খাতেই বরাদ্দ কমানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে নতুন অবকাঠামো প্রকল্প নেওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। গুণগত পরিচালনায় বেশি বিনিয়োগ করতে চাই।’
উন্নয়ন বাজেটকে দুষ্টু চক্র থেকে বের করে আনার চেষ্টার কথা উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘এবার চলমান প্রকল্পকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। নতুন প্রকল্প কিংবা মেগা প্রকল্প নিচ্ছি না। বাড়তি ব্যয় কমানোর চেষ্টা করছি। প্রকল্পের দুর্নীতি, অসংগতি দূর করতে পরিবীক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হবে আগামী ২ জুন। নতুন বাজেটে এডিপির আকারও চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। নতুন এডিপির আকার ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
বাস্তবায়নযোগ্য করতে হলে ব্যয় কমাতে হবে; কিন্তু সব খাতে কমিয়ে দেব, এটা নীতি হতে পারে না। আমরা আশা করেছিলাম শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার মতো খাতে বরাদ্দ বাড়বে; কমবে পরিবহন, জ্বালানির মতো খাতে।বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে কত বরাদ্দচলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেটে উন্নয়ন ব্যয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এ বছর এডিপি বাস্তবায়ন কম হয়েছে। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদেরা এডিপির আকার কমানোর পক্ষে। তাঁরা বলছেন, বিগত সরকারের আমলে বড় বাজেট তৈরি করা হতো। কিন্তু বাস্তবায়নের হার হতো কম। যেমন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৮১ শতাংশের মতো।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাস্তবায়নযোগ্য করতে হলে ব্যয় কমাতে হবে; কিন্তু সব খাতে কমিয়ে দেব, এটা নীতি হতে পারে না। আমরা আশা করেছিলাম শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার মতো খাতে বরাদ্দ বাড়বে; কমবে পরিবহন, জ্বালানির মতো খাতে।’ তিনি মনে করেন, বাজেটে কোন খাত অগ্রাধিকার পেয়েছে, তা পুরো বাজেট দেখে বিবেচনা করাই ভালো। তবে উন্নয়ন বরাদ্দের ক্ষেত্রেও সরকারের অগ্রাধিকার বোঝা যায়। এডিপি দেখে মনে হচ্ছে, অগ্রাধিকার আগের মতোই রয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, পৃথিবীর যে ১০টি দেশ অর্থনীতির আকারের তুলনায় শিক্ষা খাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়, বাংলাদেশ তার একটি। শিক্ষা খাতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশ খরচ করার প্রয়োজন হলে বাংলাদেশে উন্নয়ন ও পরিচালনা মিলিয়ে মাত্র ২ শতাংশ খরচ হয়।পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের খসড়া এডিপি অনুসারে, শিক্ষা খাতে ৯১টি প্রকল্পে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা, যা চলতি এডিপির বরাদ্দ থেকে ২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা কম। শতকরা হারে এডিপির বরাদ্দ কমেছে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য খাতের ৩৫টি প্রকল্পে আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ থাকছে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। চলতি এডিপিতে বরাদ্দ ২০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। বরাদ্দ কমেছে সোয়া ১২ শতাংশ।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্পগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই স্কুল-কলেজ, হাসপাতালের ভবনসহ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প। প্রকল্প বা কর্মসূচির আওতায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের গুণগত মান উন্নয়নে বরাদ্দ কম থাকে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, পৃথিবীর যে ১০টি দেশ অর্থনীতির আকারের তুলনায় শিক্ষা খাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়, বাংলাদেশ তার একটি। শিক্ষা খাতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশ খরচ করার প্রয়োজন হলে বাংলাদেশে উন্নয়ন ও পরিচালনা মিলিয়ে মাত্র ২ শতাংশ খরচ হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার হবে, বরাদ্দ বাড়বে। সুযোগ ছিল পুরোনো বাজেট কাঠামো বাদ দিয়ে নতুন বাজেট কাঠামো তৈরি করার। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হলে তা হবে আশ্চর্য হওয়ার মতো।সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হানঅন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে একজন বাংলাদেশির বছরে ৮৮ ডলার খরচ করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে মাথাপিছু খরচ হয় ৫৮ ডলার, যার বড় অংশই নাগরিকেরা নিজেরা সংস্থান করেন।
এই প্রসঙ্গে এডিপি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, আগামী এডিপি যাতে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়, তাই সক্ষমতা বিবেচনা করে এডিপির আকার কমানো হয়েছে। অন্য বছরে দেখা গেছে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ থাকলেও তা পুরো খরচ করতে পারেন না ওই দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাই বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
অবশ্য অর্থনীতিবিদদের মত হলো, কেন বরাদ্দ ব্যয় হয় না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জবাবদিহি নিশ্চিত করা উচিত। তার বদলে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া যৌক্তিক নয়। শিক্ষা-স্বাস্থ্যে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে।
কোন খাতে কত বরাদ্দপরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুসারে, আগামী এডিপির অর্থের মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। আর প্রকল্প সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। মোট প্রকল্প সংখ্যা ১ হাজার ১৪২।
প্রস্তাবিত এডিপিতে বরাদ্দের ৭০ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে পাঁচটি খাতে। এগুলো হলো পরিবহন ও যোগাযোগ; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি; শিক্ষা; গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলি; স্বাস্থ্য। এই পাঁচটি খাতে বরাদ্দ কমছে ৮ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত।
নতুন খসড়া এডিপিতে বরাদ্দের দিক থেকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে। এ খাতে মোট ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিক্ষা খাতে। এ খাতে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের পরিমাণ ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা। গৃহায়ণ খাতে ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা; স্বাস্থ্যে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা; স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা; কৃষিতে ১০ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা; পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ১০ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা; শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৫ হাজার ৩৮ কোটি টাকা; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ যাচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে শিক্ষার দ্বিগুণ ও স্বাস্থ্যের তিন গুণের বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার হবে, বরাদ্দ বাড়বে। সুযোগ ছিল পুরোনো বাজেট কাঠামো বাদ দিয়ে নতুন বাজেট কাঠামো তৈরি করার। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হলে তা হবে আশ্চর্য হওয়ার মতো। যাঁরা এখন নীতিনির্ধারকের দায়িত্বে, তাঁরা এত বছর বলে আসছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর বহন ও য গ য গ বর দ দ র খ ন প রকল প প রকল প ন বর দ দ দ ন বর দ দ সরক র র খরচ কর অন স র সব খ ত শ খরচ সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।
এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।
আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।
এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।
এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।