পাকা ও আধপাকা কাঁঠালের ঘ্রাণে ম–ম করছে চারপাশ। সারি সারি গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করছেন মালিকেরা। কেউ সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে বিক্রি করছেন, কেউবা ঝুড়িভর্তি কাঁঠাল নিয়ে ছুটছেন বাজারের দিকে। আবার কেউ গাছের নিচে দাঁড়িয়ে গুনছেন—ফল ধরেছে কতটি! এ যেন একটুকরা ‘কাঁঠালরাজ্য’!

গত রোববার এ দৃশ্যের দেখা মেলে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধঘেঁষা সেচখাল এলাকায়। এই এলাকা একসময় বর্ষার পানিতে তলিয়ে থাকত। আশির দশকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ১৪টি ইউনিয়নজুড়ে ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধের সঙ্গে নির্মিত হয় শতাধিক সেচখাল। এর পরই বদলায় দৃশ্যপট। সেচখালের দুই পাশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সারি সারি কাঁঠালগাছ রোপণ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আর এসব গাছ থেকে সংগৃহীত কাঁঠাল নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি বিক্রি করে আসছেন তাঁরা। এখন সেই গাছই হয়েছে তাঁদের আয়-রোজগারের বড় উৎস।

ওই দিন দুপুরে উপজেলার সানাতেরকান্দি, লুধুয়া, রসুলপুর, সিপাইকান্দি, এনায়েতনগর, সুজাতপুর, নয়াকান্দি, বিনন্দপুর, গজরা, নবুরকান্দি, নাউরী ও রাঢ়িকান্দিসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেড়িবাঁধ–সংলগ্ন সেচখালের দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য কাঁঠালগাছ। এসব গাছে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন আকারের কাঁচা, আধপাকা ও পাকা কাঁঠাল। কিছু কিছু স্থানে কাঁঠালের ভারে নুইয়ে পড়েছে গাছ। সেচখাল–সংলগ্ন এই গোটা এলাকাই হয়ে উঠছে কাঁঠালময়।

লুধুয়া গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেনের বাড়ির পাশেই সেচখাল। সেখানে পাউবো ও নিজের জায়গায় তিনি ২৫টি কাঁঠালগাছ রোপণ করেছিলেন। কয়েক বছর ধরে এসব গাছে ফলন আসছে। এবার তাঁর ২৫টি গাছে ৫ শতাধিক কাঁঠাল ফলেছে। এরই মধ্যে কিছু পাকা কাঁঠাল বাজারে বিক্রি করেছেন। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে বিক্রি করবেন। তাঁর দাবি, কাঁঠাল বিক্রি করে প্রতিবছর ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় হয়। ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি এটি তাঁর বাড়তি আয়। এতে সংসারে সচ্ছলতাও পেয়েছেন তিনি। মাঝেমধ্যে ট্রাকে করে এসব ফল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়েও বিক্রি করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলার লোকজন এলাকাগুলোতে গিয়ে পাইকারি দরে কাঁঠাল কিনে নিয়ে যান।

বাঁধের ভেতর সেচখালের পাশে শুধু কাঁঠাল আর কাঁঠাল.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ