বাংলাদেশকে হুমকি দিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী
Published: 21st, May 2025 GMT
চিকেন নেক নিয়ে বাংলাদেশকে হুমকি দিয়েছেন ভারতের আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। বুধবার তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশ যদি কখনো ভারতের চিকেন নেক করিডোরে আক্রমণ করার কথা ভাবে, তাহলে ভারত তাদের উভয় চিকেন নেককেই লক্ষ্য করে প্রতিশোধ নেবে।”
আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তাদের (বাংলাদেশের) দুটি মুরগির গলা আছে, আমাদের একটি। যদি তারা আমাদের উপর আক্রমণ করে, আমরা তাদের দুটিতে আঘাত করব।”
তিনি বলেন “মেঘালয় থেকে চট্টগ্রাম পোর্ট চিকেন নেকের আয়তন আমাদের থেকেও ছোট। আমরা চাইলেই এর গলা ধরতে পারি। আমরা আমাদের অভ্যন্তরের রাজনীতিতে চিকেন নেকের কথা বলি। তাই বলে যে কেউ এসে আমাদের চিকেন নেকে এসে হাত রেখে দেবে?”
এসময় তিনি ভারতের অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, “ভারতকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পুনর্জন্ম প্রয়োজন। বাংলাদেশকে এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। ওটা একটা ছোট দেশ। ভারতের সঙ্গে তাদের কখনোই তুলনা হয় না।”
সুচরিতা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আইরিশ নাবিকের চোখে বাংলার হজযাত্রী
১৯৫৪ সালে আইরিশ নাবিক নরম্যান ফ্রিম্যানের লেখা ‘অ্যান আইরিশম্যানস ডায়েরি অন আ পিলগ্রিম শিপ টু জেদ্দা’ প্রবন্ধে বাংলার হজযাত্রীদের একটি প্রাণবন্ত বর্ণনা পাওয়া যায়। প্রবন্ধটি ‘আইরিশ টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এতে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজ সারধানাতে ফ্রিম্যানের অভিজ্ঞতার বিবরণ পাওয়া যায়। এই জাহাজে তিনি চাকরিরত অবস্থায় ১ হাজার ৫০০ হজযাত্রীকে জেদ্দা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার একটি কন্ট্রাক্টে অংশ নেন।
১৯৫৪ সালের আগস্ট মাসে হজ অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় বিমানযাত্রার বিস্তৃতির কারণে জাহাজে হজযাত্রী পরিবহন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল। তবে সারধানা জাহাজ এই কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে জেদ্দা থেকে চট্টগ্রামে হজযাত্রী পরিবহনের দায়িত্ব পায়। এটি ফ্রিম্যান ও তাঁর ক্রুদের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতা ছিল, কারণ তাদের কোম্পানির অন্যান্য জাহাজ অতীতে হাজার হাজার হজযাত্রী পরিবহন করলেও এ ধরনের কাজ তখন বিরল হয়ে পড়েছিল।
হজযাত্রীদের দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রা এবং হজ পালনের ক্লান্তি, সৌদি আরবের প্রচণ্ড গরম আবহাওয়া ও ভিড়ের কারণে অনেকে দুর্বল বা অসুস্থ হতে পারেন—এই সম্ভাবনা বিবেচনা করে জাহাজে একজন ডাক্তার, তিনজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং তিনজন নার্স নিয়োগ করা হয়। জাহাজের ভারতীয় ক্রুরা দরিদ্র হজযাত্রীদের জন্য লোয়ার ডেকে বাংক, দড়ির ঝুলন্ত বিছানা এবং কাঠের মেঝেতে ম্যাটের ব্যবস্থা করে। প্রস্তুতি সম্পন্ন করে খালি জাহাজটি করাচি থেকে জেদ্দার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। পথে আপার ডেকে ইউরোপীয় ক্রুরা টেবিল টেনিস খেলে সময় কাটাত। তবে ভারত মহাসাগর থেকে আরব সাগরে প্রবেশের সময় জাহাজের রোলিং সামলাতে ক্যাপ্টেন ও ক্রুদের দক্ষতার প্রয়োজন হতো।
আরও পড়ুনবিরে শিফা: একটি অলৌকিক কুয়ার গল্প০৫ মে ২০২৫জেদ্দা বন্দরে পৌঁছে ফ্রিম্যান ও তাঁর ক্রুরা এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সম্মুখীন হন। সৌদি পুলিশ হজযাত্রীদের ইহরামের কাপড়ে খোলা আকাশের নিচে প্রচণ্ড গরমে গাদাগাদি করে রেখেছিল। অনেক হজযাত্রী দুর্বল, এমনকি কঙ্কালসার অবস্থায় ছিলেন। এই দৃশ্য ক্রুদের মনে গভীর বেদনার সৃষ্টি করে। গ্যাংওয়ে (জাহাজে ওঠার সিঁড়ি) নামানোর পর হজযাত্রীরা ধীরে ধীরে জাহাজে উঠতে শুরু করেন। শারীরিক দুর্বলতার কারণে অনেককে সাহায্য করতে হয়। সব হজযাত্রী জাহাজে উঠতে অনেক সময় লাগে। অবশেষে গ্যাংওয়ে উঠিয়ে দীর্ঘ হর্ন বাজিয়ে সাদা রঙের সারধানা জাহাজ চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
জাহাজে একজন ইমাম ছিলেন, যিনি চমৎকার গলায় আজান দিতেন। প্রতিদিন নামাজের সময় তিনি জাহাজের পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে আজান দিতেন এবং হজযাত্রীরা জাহাজের সামনের ডেকে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করতেন। ডেকের কাঠের মেঝেতে নামাজের জন্য লাইন ধরে জায়নামাজ সাজানো থাকত।
অপুষ্টি ও ক্লান্তির কারণে অনেক হজযাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। জাহাজের মেডিকেল স্টাফ সাধ্যমতো তাঁদের সেবা দিলেও চারজন হজযাত্রী মারা যান। তবে ফ্রিম্যান উল্লেখ করেন, নিয়মিত জাহাজের তুলনায় এই সংখ্যা ছিল অনেক কম। আরব সাগর ও ভারত মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় ইমামের নেতৃত্বে জানাজা পড়ে মৃত হজযাত্রীদের ইহরামের কাপড়ে কাফন পরিয়ে, ক্যানভাসে মুড়ে এবং ভারী সিসা বেঁধে ভারত মহাসাগরে সমাধিস্থ করা হয়।
দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার পর জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। ক্লান্ত হজযাত্রীরা তাঁদের সামান্য মালপত্র নিয়ে ধীরে ধীরে জাহাজ থেকে নামেন। হজ পালনের কঠিন ও কষ্টকর পরিশ্রম তাঁদের ফ্রিম্যান এবং জাহাজের ক্রুদের কাছে এক অনন্য মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে।
(সূত্র: পুণ্যপথের যাত্রীরা: হজ হজযাত্রী ও পথ,মুহাম্মদ সাঈদ হাসান শিকদার, প্রথমা প্রকাশন)
আরও পড়ুনবদর যুদ্ধক্ষেত্রে একটি দিন২০ জুলাই ২০২৩