নিঃসন্দেহে এটি একটি ঐতিহাসিক অর্জন— ভারতের কন্নড় ভাষায় লেখা একটি বই আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতো বিশ্বসেরা সাহিত্যের স্বীকৃতি পেল। লেখক বানু মুশতাকের ছোটগল্প সংকলন ‘হার্ট ল্যাম্প’ দক্ষিণ ভারতের মুসলিম নারীদের জীবনের গভীর বেদনা, লুকোনো যন্ত্রণা ও নীরব প্রতিরোধকে এক সংবেদনশীল ও সাহসী ভাষ্যে তুলে ধরেছে।

এই পুরস্কার শুধু একটি সাহিত্যিক স্বীকৃতি নয়, এটি রাজনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ। এমন এক সময়ে যখন ভারতে মুসলিম সম্প্রদায় এবং বিশেষ করে মুসলিম নারীরা সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে নানা চাপে রয়েছেন, সেই প্রেক্ষাপটে ‘হার্ট ল্যাম্প’ যেন তাদের নীরব কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি হয়ে উঠেছে। বইটির প্রতিটি গল্পেই উঠে এসেছে গৃহের অন্দরমহলের নিঃশব্দ হাহাকার, শরীর ও আত্মার ওপর চালানো শাসনের রূপ, এবং সেই সঙ্গে নিঃশব্দ অথচ প্রবল প্রতিরোধের ভাষা।

এই সংকলনের গল্পগুলো লেখা হয়েছে ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে—তিন দশক ধরে। সময়ের বিস্তৃত এই পরিসর লেখককে তার চরিত্রদের জীবনের বিবর্তন দেখাতে দিয়েছে পর্যাপ্ত অবকাশ। গল্পগুলোতে আমরা দেখি কীভাবে একজন নারী ধর্মীয় অনুশাসনের ভিতর আটকে থেকেও নিজের স্বর টিকিয়ে রাখেন—কখনো চিঠিতে, কখনো স্বপ্নে, কখনো কোনো নিরীহ সেলাইফোঁড়ার কায়দায়। এই গল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে নিখুঁত ভাষার কারুকাজ, দেহরাজনীতি, দৈনন্দিন নির্যাতনের বিষণ্ণ অথচ কাব্যিক চিত্র এবং আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলতে থাকা মানুষের মর্মবেদনা।

দীপা ভাস্তির ইংরেজি অনুবাদ এই কাজটিকে আন্তর্জাতিক পাঠকের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। অনুবাদ কেবল ভাষান্তর নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধ, যেখানে স্থানীয় বাস্তবতা বিশ্বসাহিত্যের পরিসরে নতুনভাবে প্রতিফলিত হয়। দীপার অনুবাদ কাজ গল্পগুলোর সংবেদনশীলতাকে নষ্ট না করে বরং আরও গভীরতা দিয়েছে।

এই প্রথম কন্নড় ভাষার কোনো সাহিত্যকর্ম আন্তর্জাতিক বুকার পেল। এটি কেবল বানু মুশতাকের ব্যক্তিগত বিজয় নয়, এটি ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষাসাহিত্যের জন্য একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। বাংলাসহ অন্য আঞ্চলিক ভাষার লেখকদের জন্যও এটি এক বড় অনুপ্রেরণা। এই পুরস্কার প্রমাণ করে দিল, স্থানীয় অভিজ্ঞতা আর আঞ্চলিক ভাষা দিয়েও বিশ্বসাহিত্যে কথা বলা সম্ভব।

‘হার্ট ল্যাম্প’ মূলত একটি নীরব বিপ্লবের ভাষ্য। এটি দেখায় কীভাবে সাহিত্য একান্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে রাজনৈতিক করে তোলে। আর সেই রাজনীতি যদি হয় নারীর জীবন, দেহ, ধর্ম, প্রেম, প্রতিবাদ ও কষ্টের রাজনীতি, তাহলে সেই সাহিত্য হয়ে ওঠে জীবনেরই একটি রূপান্তর। বানু মুশতাক ও দীপা ভাস্তিকে এই সাহসী ও সংবেদনশীল কাজের জন্য অভিনন্দন। এই বই এখন কেবল একটি পুরস্কারজয়ী গ্রন্থ নয়, এটি দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের অন্তর্জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

তারা//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ক র র জ বন জ বন র র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

আবার ‘লাস্ট মিনিট শো’, জন্মদিনের রাতে স্লটকে জয় উপহার ফন ডাইকের

লিভারপুল ৩–২ আতলেতিকো মাদ্রিদ

জন্মদিনের রাতে এর চেয়ে ভালো উপহার আর কী হতে পারে!

রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই মাঠে ঢুকে পড়লেন আর্নে স্লট। লিভারপুলের সমর্থকেরা তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে থাকলেন, দল জেতায় অভিনন্দনও জানালেন। মুখে চওড়া হাসি নিয়ে হাত নেড়ে স্লট সেই অভিবাদনের জবাব দিলেন।   

ভার্জিল ফন ডাইকের সঙ্গে আলিঙ্গনের সময় স্লটকে একটু বেশিই খুশি মনে হলো। কারণ, লিভারপুল অধিনায়ক ফন ডাইক ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত না হলে তাঁর বিশেষ রাতটা যে অনেকটাই পানসে হয়ে যেত!

২০২৫–২৬ মৌসুমে শেষ মুহূর্তে জয়সূচক গোল করাকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছে লিভারপুল। যেটিকে বলা হচ্ছে লাস্ট মিনিট শো, কয়েকটি সংবাদমাধ্যম নাম দিয়েছে স্লট টাইম।

এবার সেই শো–এর নায়ক ফন ডাইক। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে তাঁর হেডারেই আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ড্রয়ের পথে থাকা ম্যাচটা ৩–২ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়নস লিগে শুভসূচনা করল লিভারপুল।

এ নিয়ে এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতল লিভারপুল। সবকটি ম্যাচে অলরেডরা জয়সূচক গোল করল ৮০ মিনিটের পর; এর তিনটিই যোগ করা সময়ে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ