হিলির হাটে-বাজারে গুণেভরা তালশাঁসের রাজত্ব
Published: 23rd, May 2025 GMT
দিনাজপুরের হিলির বিভিন্ন হাট-বাজারে রীতিমতো রাজত্ব করছে তালশাঁস। মৌসুমি এই তালশাঁস বিক্রিতে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। মৌসুমি এই ফলের স্বাদ ভিন্ন রকম। গুণেও ভরা। তাই তালশাঁস খেতে ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা গেছে।
আবহাওয়া ভাল থাকায় গেলো বছরের চেয়ে এ বছর তালের পরিমাণ বেড়েছে। এবছর দামও খানিকটা কম, তাই বেচাবিক্রিও বেশি।
সরেজমিনে, হিলি চারমাথা মোড়ে তালশাঁস ব্যবসায়ীদের তালের খামাল দিয়ে বসে থাকতে দেখা গেল। তাল কেটে শাঁস বের করতে ব্যস্ত তারা। এ ফল খেতে তার চারপাশে ভিড় করেছেন ক্রেতারা। প্রতিজন ১২ থেকে ১৫টি করে শাঁস নেবেন। দ্রুত তাল কেটে শাঁস বের করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। কাজটি সহজ নয়।
এই অঞ্চলে তালের শাঁস জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতে উঠতে শুরু করে। গেলো বছর ১০ থেকে ১২ টাকা দরে প্রতিটি তাল কিনেছিলেন ব্যবসায়ীদের। এবার মিলছে ৭ থেকে ৮ টাকায়। একটি তালের মধ্যে ২ থেকে ৩টি শাঁস থাকে। হিলি বাজারে প্রতিটি তালশাঁস মিলছে ৪ টাকা করে।
এদিকে, যতদিন যাচ্ছে ততই হারিয়ে যাচ্ছে তাল গাছ। এতে দিন দিন দুর্লভ হয়ে পড়ছে তালের শাঁস। এক সময় গ্রামগঞ্জের মাঠে-ঘাটে আর রাস্তার পাশে দেখা যেত প্রচুর তালের গাছ। এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।
তালশাঁস কিনতে আসা রাকিবুল ইসলামের বলেন, “তালের শাঁস স্বাদে ভরা। পরিবারের সবারই পছন্দ, তাই তালশাঁস কিনতে এলাম। প্রতি পিচ ৪ টাকা করে নিচ্ছে। ১০টির অর্ডার দিয়েছি।”
অপর ক্রেতা রহমত আলী বলেন, “অন্যান্য ফলের চেয়ে তালশাঁসের স্বাদ একটু ভিন্ন। অন্য ফলের মাঝে এই স্বাদ খুঁজে পাই না। প্রতি বছর তাল উঠলে আমি প্রতিদিন ৪ থেকে ৫টা করে তালশাঁস খাই। আবার বাড়ির জন্যেও কিনে নিয়ে যাই।”
তাল ব্যবসায়ী মিলন মিয়া বলেন, “আমার বাড়ি পাঁচবিবির আটাপাড়ায়। আমি নওগাঁ জেলার ধামরহাট এলাকা থেকে তালের গাছ কিনি। এবার প্রতিটি তাল ৭ থেকে ৮ টাকায় কিনছি। তালের ফলন এবার অনেকটা ভাল হয়েছে। তবে গাড়ি ভাড়া বেশি। প্রতিটি তাল থেকে ৩ থেকে ৪টি করে তাল শাঁস মেলে। প্রতিটি তাল বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়।”
তিনি আরো বলেন, “তাল শাঁস এই এলাকার মানুষের খুব পছন্দের। ক্রেতারা প্রচুর অর্ডার দিচ্ছেন। কাটতে হিমশিম খাচ্ছি। দীর্ঘদিন যাবৎ হিলিতে এই সময় তাল বিক্রি করে আসছি। দিন গেলে গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা লাভ হচ্ছে। এই লাভ দিয়ে আমার সংসার সুন্দর চলছে।”
ঢাকা/মোসলেম/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বন্যপ্রাণী রক্ষায় সাদিকের সংগ্রাম
বাবা ছিলেন সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সে কারণে আব্দুল্লাহ আস সাদিকের এক জায়গায় বেশিদিন থাকা হয়নি। বাবার বদলিজনিত কারণে তাঁর পারিপার্শ্বিকতাও বদলেছে নিয়মিত। ২০০৬ সালে ভৈরবের কমলপুর হাজী জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৮ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। প্রাণিবিজ্ঞানের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল আগে থেকেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিজ্ঞানে স্নাতক এবং বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বাবা, ছোট বোন, স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে থাকেন ঢাকার মগবাজার এলাকায়।
গাছপালা, প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী– সবকিছুই সাদিককে খুব টানে। একবার এক প্রতিবেশী একটি বানরকে খাঁচায় বন্দি করে রেখেছিল।
অনেক চেষ্টা করে সেটি মুক্ত করার পর সাদিকের মনে হলো, বন্যপ্রাণী রক্ষায় তাঁর কাজ করা দরকার। এভাবে এ কাজের শুরু। এরপর পেশাগতভাবে বন অধিদপ্তরে যোগ দেওয়ার সুযোগ হলো। তখন আর তাঁকে পায় কে! এমনটাই যেন তিনি মনে মনে চাইছিলেন। সাদিকের ভাষায়, বন্যপ্রাণী রক্ষার কাজ শুধু চাকরি না– একটি দায়িত্ব, একটি ভালোবাসা। সাদিক ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বন অধিদপ্তরের অধীনে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটে বন্যপ্রাণী পরিদর্শক পদে চাকরিতে যোগদান করেন। এই নতুন সৃষ্ট পদে বর্তমানে সারাদেশে মোট ছয়জন কর্মকর্তা কর্মরত। এ পদে কাজের অন্ত নেই। তিনি আইন প্রয়োগ ও তদন্ত, অভিযান ও উদ্ধার, সচেতনতা ও শিক্ষা, নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই শিক্ষক, সহপাঠী, সিনিয়রদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক জায়গায় ঘুরে বেড়ান। মা ছিলেন তাঁর অন্যতম অনুপ্রেরণা। অথচ সাদিকের অনেক প্রাপ্তি তিনি দেখে যেতে পারেননি। ২০২৪ সালে মা চলে যান না ফেরার দেশে। এই কষ্ট সাদিকের চোখের পাতা ভারী করে তোলে যখন-তখন।
মাস্টার্স থিসিসের সময় কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে বিশ্বের মহাবিপন্ন চামুচঠুটো বাটান পাখি নিয়ে গবেষণায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ হয় তাঁর। তিনি প্রায় দুই বছর পাখিটির আবাসস্থল, চলাচল ও শিকারের ওপর গবেষণা করেন।
সাদিকের বন্যপ্রাণী নিয়ে সরকারি কাজের ৯ বছর হয়েছে। এতদিনে বহু অভিযান চালিয়েছেন তিনি। প্রথম অভিযানটি ছিল গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজারের নগর হাওলা এলাকায়, ২০১৬ সালের এক বিকেলে। একটি চক্রের খবর পান, যারা তক্ষক পাচার করছিল। নিজেই ক্রেতা সেজে পাচারকারীর বাড়িতে প্রবেশ করেন। ওদিকে র্যাব সদস্যরা আশপাশে লুকিয়ে ছিলেন। সংকেত পেয়েই তারা অভিযান চালান। ৪৮টি তক্ষক উদ্ধার ও ১০ পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাদিক বলেন, ‘এই প্রথম অভিযানটি আমার জন্য ছিল দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। শুধু অভিজ্ঞতার দিক থেকেই নয়, বন্যপ্রাণী রক্ষার অঙ্গীকার আরও দৃঢ় করার দিক থেকেও। সেদিনের সাহসী পদক্ষেপ ও সফলতা আমাকে আজও অনুপ্রাণিত করে।’
সাদিকের আরও কিছু উল্লেযোগ্য অভিযান হলো– ২০২৩ সালের ২৯ মে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ ৬৪টি সাইটিস তালিকাভুক্ত পাখি জব্দ; ২০২১ সালের ৫ নভেম্বর সাতক্ষীরার মন্টু মিয়ার বাগানবাড়িতে অভিযান; ২০১৯ সালের অক্টোবরে যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের বাড়িতে অভিযান; ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি চকরিয়ায় গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে পাচার হওয়া দুই ভালুক শাবক উদ্ধার। সাদিক বন্যপ্রাণী পাচার, সংরক্ষণে প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ বিশ্লেষণ করেন। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৬০টির বেশি অভিযান পরিচালনা করেছেন তিনি। এতে আনুমানিক ৯ থেকে ১০ হাজার বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অভিযান পরিচালনার জন্য গিয়েছেন বাংলাদেশের ৫০টির বেশি জেলায়।
ভবিষ্যতে সাদিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং পরিবেশগত সচেতনতা বাড়ানোর দিকে আরও গভীরভাবে মনোযোগ দিতে চান। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী রক্ষায় আইনি প্রয়োগের পাশাপাশি জনগণের মধ্যে আরও বেশি সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। v