প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিকে ভর্তি নিশ্চিত করতে সহায়তা দেয়। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করতে এ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ অর্থ পেতে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের আবেদনের সময় ২৯ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আগে এ আবেদনের সময় ছিল ২২ মে পর্যন্ত।

গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট। এ–সংক্রান্ত চিঠি সব উপজেলা ও থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫ হাজার টাকা, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৮ হাজার এবং স্নাতক ও সমমান পর্যায়ে ১০ হাজার টাকা হারে ভর্তি–সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

২৯ মে রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত নির্ধারিত লিংকে প্রবেশ করে ভর্তি–সহায়তা পেতে আবেদন করা যাবে।

আরও পড়ুনএসএসসি–এইচএসসির বোর্ডসেরাদের ১০ ও ২৫ হাজার টাকা দেবে সরকার, যেভাবে আবেদন ১৯ মে ২০২৫

শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ভর্তি সহায়তা নির্দেশিকা’ অনুসারে শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিকের যেকোনো শ্রেণির ভর্তিতে আর্থিক সহায়তা পাবেন। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিতকরণে ভর্তি–সহায়তা দিয়ে থাকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সহ য ত

এছাড়াও পড়ুন:

ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারের ফিরে আসার আশঙ্কা কতটা 

২০২৪ সালের জুলাই মাসে যখন ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল, তখন মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় দেড় হাজারের বেশি মানুষ মারা যান। বিশ হাজারের মতো মানুষ আহত হন। আন্দোলনে অংশ নেওয়া এখন অনেকেই ডিপ্রেশনে (মানসিক অস্থিরতা বা হতাশা) ভুগছেন, আবার কেউ কেউ আত্মহত্যাও করেছেন। মনোবিজ্ঞানীরা এ ধরনের অবস্থাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, যখন কেউ সরাসরি দুর্ঘটনার শিকার না হয়েও কাছ থেকে মৃত্যু বা যন্ত্রণা দেখেন, তখন তাঁর নিজের মনেও গভীর একধরনের মানসিক আঘাত (ট্রমা) তৈরি হয়। 

৫ আগস্টের পর সবকিছুতেই যেন অস্থিরতা। ভেতরে-ভেতরে কতজন মানুষ আসলে ভালো আছেন? এই ভয়, এই শোক, এই মানসিক ধাক্কার যে শিকার, কে নিচ্ছে তাঁর দায়িত্ব? নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু সরকারিভাবে, জাতীয় পর্যায়ে বড় কোনো কাউন্সেলিং বা মানসিক সহায়তা কার্যক্রম কি চোখে পড়েছে? এর উত্তর হচ্ছে—‘না’। আমরা কি এটাকে ‘বাঙালি সব সহ্য করার ক্ষমতা রাখে’ বলে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি? 

গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এমনভাবে দেশ চালিয়েছিল, যেখানে হত্যা, গুম, হামলা, মামলা আর ভয় দেখিয়ে মানুষকে চুপ করিয়ে রাখা হয়েছিল। এই শাসনের মধ্যে তরুণেরা কোনো মুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারেনি। আর এই সবকিছু মিলিয়ে এবং জুলাইয়ের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পরিস্থিতির যে মানসিক ধাক্কা, এই অস্থিরতা ও অশান্তির বহিঃপ্রকাশ আমরা প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি; হঠাৎ দাবিদাওয়া, রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর, রোড ব্লক, হিংসাত্মক সংঘর্ষ—এ সবকিছুর মধ্যে আছে একধরনের মানসিক চাপ। 

অনেক কিছু ঘটে যাওয়ার পরও এখন একটা প্রশ্ন মানুষজনের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, সরকারি আদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পরও আওয়ামী লীগ কি আবার ফিরে আসতে পারবে?  

স্বৈরশাসকেরা সাধারণত বড় শক্তিধর বা রাজনৈতিকভাবে নিরাপদ দেশে আশ্রয় নিলেও তাঁরা খুব কমই দেশে ফিরে ক্ষমতায় ফিরতে পারেন। 

সরকারের কারও কারও মধ্যে নিজস্ব মামলা মিটমাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদেশ ভ্রমণ করা এবং রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। 

একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ

 বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, একবার কোনো স্বৈরশাসক (ডিক্টেটর) ক্ষমতা হারিয়ে নির্বাসনে গেলে, তাঁরা খুব কমই আবার দেশের ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারেন। ২০২২ সালে জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কুবোতা, হিদাকা ও ইউকাওয়া একটি গবেষণা করেন, যার শিরোনাম ছিল ‘দ্য পোস্ট-এক্সাইল ফেট অব লিডার্স: আ নিউ ডেটাসেট’। সেখানে তাঁরা দেখিয়েছেন, ১৯৭০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৯১ জন নির্বাসিত নেতার মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশই ফেরত এসে আবার রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে পৌঁছাতে পেরেছেন। 

এ ছাড়া ২০১৭ সালে এসক্রিবা-ফলক ও ক্রকমারিক নামের দুই গবেষক ‘ডিক্টেটরস ইন এক্সাইল: এক্স-রুলারদের গন্তব্য ব্যাখ্যা’ নামে একটি প্রবন্ধে বলেছেন, স্বৈরশাসকেরা সাধারণত বড় শক্তিধর বা রাজনৈতিকভাবে নিরাপদ দেশে আশ্রয় নিলেও তাঁরা খুব কমই দেশে ফিরে ক্ষমতায় ফিরতে পারেন। এমনকি যাঁরা দেশে ফিরেছেন, যেমন হাইতির জঁ-ক্লদ দুভালিয়ে বা পাকিস্তানের পারভেজ মোশাররফ, তাঁরাও আইনি ঝামেলা, বিচার বা রাজনৈতিক ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছেন। 

এ গবেষণাগুলো দেখায়, একজন স্বৈরশাসক একবার ক্ষমতা হারিয়ে নির্বাসনে গেলে, তাঁর পুরোনো সমর্থকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান, দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ বদলে যায় এবং আইনগত বাধাও তৈরি হয়, ফলে তাদের আবার ক্ষমতায় ফেরা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। 

কে আবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছেন? 

ফিলিপাইনে ১৯৮৬ সালে গণ-অভ্যুত্থানে বিদায় নেওয়া ফার্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে বংবং মার্কোস ২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। একইভাবে ফিলিপাইনে বিতর্কিত সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে সম্প্রতি দাভাও শহরের মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হলেও তাঁর ‘রাজনৈতিক ব্র্যান্ড’ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তাঁর কন্যা সারা দুতার্তে বর্তমানে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। 

শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষে পরিবার এখনো রাজনীতিতে সক্রিয়, যদিও জনগণের বিপুল আন্দোলনে তারা একবার ক্ষমতা হারিয়েছিল। ইরানে শাহ পালিয়ে গেলেও তাঁর অনুসারীরা এখনো প্রবাসে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়। হাইতির অ্যারিস্টিড সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নির্বাসন থেকে ফেরেন এবং আবার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। 

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণার তথ্য অনুযায়ী এই প্রত্যাবর্তন সম্ভব হয়েছে কয়েকটি কারণে:

এক. অনেক সময় গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন সরকার স্থিতিশীলতা আনতে ব্যর্থ হয়;

দুই. বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি না হলে জনগণ পুরোনো পরিচিত নাম বা পরিবারের দিকেই ফিরে যেতে শুরু করে;

তিন. সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অতীতের অন্যায় ও দমননীতির স্মৃতি অনেকের মনে থেকে মুছে যায়; 

চার. অনেক শাসক বা তাঁর পরিবার নিজেদের নতুন রূপে তুলে ধরে জনসমর্থন আদায় করে এবং

পাঁচ. কোথাও কোথাও প্রভাবশালী রাষ্ট্রের সহযোগিতাও তাদের ফিরে আসতে সহায়তা করে। 

আওয়ামী লীগের ফিরে আসার সম্ভাবনা কতটা 

রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে কেবল রাজনৈতিক দর্শন থাকলেই হয় না, সেই আদর্শকে বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ নেতৃত্বেরও প্রয়োজন হয়। অনেকে ভাবেন, শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৭ সালের পরপরই বড় নেতা হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের আগপর্যন্ত শেখ মুজিব রাজনৈতিকভাবে দৃশ্যমান হলেও সে সময়েও আরও অনেকেই বড় নেতা ছিলেন, বিশেষ করে মাওলানা ভাসানীর কথা উল্লেখ করতেই হবে। এ ছাড়া এর (১৯৬৬) কিছুদিন আগপর্যন্ত শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু ছয় দফা ছিল সেই ধারাবাহিকতার চূড়ান্ত প্রকাশ, তিনি (শেখ মুজিব) অনেকটা হয়ে ওঠেন ‘একক নেতা’। এখানে রাজনৈতিক দর্শন এবং নেতৃত্বের গুণের একটা সম্মিলিত মিশ্রণ ছিল। 

স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব আর আগের মতো রাজনৈতিক আদর্শ ধরে রাখতে পারেননি; বরং তাঁর বিরুদ্ধে সরকার চালাতে গিয়ে দমন-পীড়নের অভিযোগ উঠেছিল। এতে তাঁর নেতৃত্বের দক্ষতা ও আদর্শ—দুটিই হারিয়ে যায়। আবার ’৭৫–এর পরও ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র মতো আদর্শের কারণে জনগণের মধ্যে তখনো আওয়ামী লীগের একটা আবেগ ও প্রত্যাশা কাজ করত। সেই সময় জোহরা তাজউদ্দীনের মতো দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতাদের কারণে পরবর্তী সংকটেও আওয়ামী লীগকে সংগঠিত রাখা সম্ভব হয়েছিল। 

কিন্তু ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শাসনামল গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা—এগুলোর বিভিন্ন ধরনের প্রমাণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনো রয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতেও থেকে যাবে। এ ঘটনা কেউ কেউ ভুলে গেলেও এসব প্রমাণ মুছে ফেলার সাধ্য কারও নেই। রাজনীতি বারবার ভুল করলে সেই ভুলের শাস্তি দীর্ঘ মেয়াদে দিতে হয়; অনেক ইতিহাসবিদ ও বুদ্ধিজীবীর মতে, শিগগিরই আওয়ামী লীগের ফেরত আসার সম্ভাবনা নেই। 

বিএনপির ক্ষেত্রে কি একই কথা প্রযোজ্য 

অনেকেই যুক্তি ও তর্কের খাতিরে বলেন, ‘বিএনপির আদর্শ ও ভবিষ্যৎ কী?’ বাস্তবতা হলো, বিএনপি একটি মধ্যপন্থী জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল, যার ভিত্তি তৈরি করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি ১৭ দফার মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দর্শন ও কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেটি দেশের প্রশাসন, শিক্ষা, অর্থনীতি ও জাতীয়তাবাদী ভাবনার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন, নেতৃত্বের গুণ ও দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনা—এই তিনের সংমিশ্রণের মাধ্যমে দেশকে সম্মানজনক স্থানে রেখে গিয়েছিলেন। 

খালেদা জিয়া সেই দর্শনকে নিজের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে এগিয়ে নেন। তাঁর নেতৃত্বে ’৯০-এর পর বিএনপি সাংগঠনিকভাবে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। এখন তারেক রহমান বিদেশে থেকেও দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে বিদেশে থেকেও তিনি প্রায় ১৭ বছর ধরে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে অবিভক্ত ও সক্রিয় রাখতে পেরেছেন। নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শন (৩১ দফা), নেতৃত্বকৌশল এবং দক্ষ ও ত্যাগী রাজনৈতিক সহকর্মী দলে না থাকলে তাঁর পক্ষে এটা সম্ভব হতো না। কাজেই ভবিষ্যতে বিএনপির অবস্থান ও ভাগ্য কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটা সময় বলবে। তবে দলটির সামনে আওয়ামী লীগের করুণ পরিণতির উদাহরণ আছে। 

তাহলে এত অস্থিরতা কেন 

চলমান অস্থিরতার পেছনে প্রতিটি পক্ষেরই দায় আছে। যদি ৫ আগস্টের পরবর্তী পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করি, তাহলে সবচেয়ে আগে দায় দিতে হবে অনলাইনভিত্তিক বিভ্রান্তিকর প্রচারণা, যেমন ভুল তথ্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা প্রচার এবং উসকানিমূলক প্রোপাগান্ডার মতো বিষয়গুলোকে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও দায় এড়াতে পারে না। কারণ, তাদের মূল কাজ ছিল জনগণের আস্থা ফেরানো, দ্রুত সংলাপ শুরু করা, গণ-অভ্যুত্থানে আহত-নিহতদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করা। কিন্তু সরকারের কারও কারও মধ্যে নিজস্ব মামলা মিটমাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদেশ ভ্রমণ করা এবং রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। 

এই বাস্তবতা একেবারেই বিপজ্জনক। আমরা এখনো বুঝতে পারছি না, তরুণদের মানসিক চাপ, হতাশা ও ভবিষ্যৎহীনতা কতটা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। 

২০১১ সালে ব্রিটেনে পুলিশের গুলির এক ঘটনা থেকে টটেনহামে শুরু হওয়া দাঙ্গা লন্ডন, লিভারপুল, বার্মিংহাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছিলেন, এটি শুধু আইন ভাঙার ঘটনা নয়, এটি একটি ভাঙা সমাজের প্রতিচ্ছবি। 

ক্যামেরনের এই উপলব্ধির পর যুক্তরাজ্য সরকার দমন-পীড়ন নয়, বরং শিক্ষা, কাউন্সেলিং, সৃজনশীলতা ও সামাজিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে তরুণদের মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য তারা প্রায় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দিয়ে ‘ন্যাশনাল সিটিজেন সার্ভিস’ কর্মসূচি চালু করে, যাতে তরুণদের সঙ্গে কাজ করেছেন কাউন্সেলর, থেরাপিস্ট, নাটক, খেলাধুলা ও সমাজকর্মে প্রশিক্ষণদাতা পেশাজীবীরা। 

আসলে আমাদের মূল সমস্যা কোথায়? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সবার মধ্যে ‘ক্ষমতা ভাগের লোভ’ কাজ করছে। অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, ধর্মীয় নেতা, এমনকি তরুণেরা—সবাই ক্ষমতার হিস্যা চাইছে। তাহলে কি সবাই ক্ষমতালোভী? 

বিএনপির করণীয় কী 

বর্তমান বাস্তবতায় স্বীকার করতে হবে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো ‘রাজনৈতিক শক্তি’ নেই, যার মাধ্যমে সব পক্ষকে শান্ত করতে পারবে। কাজেই ভবিষ্যতে যদি নির্বাচন হয়, অনেকের মতে ‘রাজনৈতিক শক্তি’ হিসেবে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারে। বিএনপির উচিত এখনই একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা। বিএনপি সারা দেশে জনগণের সামনে ৩১ দফা উপস্থাপন করতে পারে। এই রোডম্যাপ কেবল প্রতিশ্রুতি নয়, এটাকে হতে হবে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগের অংশ। 

নির্বাচন–পরবর্তী পাঁচ বছর বিএনপি জুলাইয়ে আহত, নিহত ও তাঁদের পরিবারের জন্য কী করবে? আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের কীভাবে বিচার করবে? আগামী কয়েক বছরে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের ওপর ভিত্তি করে সংসদে প্রতিবছর কী পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ করা হবে? বিএনপিকে এসব পরিকল্পনা আগেই দিতে হবে, যাতে জুলাইয়ের চেতনা অক্ষুণ্ন থাকে। 

গত বছর জুলাই-আগস্টে তরুণেরা শুধু পরিবর্তন আনেননি, তাঁরা নিজের জীবন দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য ‘ভিত্তি’ তৈরি করেছেন। কেউ কেউ ভুলে গেলেও ইতিহাস তাঁদের ভুলে যাবে না। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা ভবিষ্যতের সরকার—কেউই এই রক্তের দায় এড়াতে পারবে না। 

মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার: শিক্ষক ও গবেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

* মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ