Prothomalo:
2025-08-02@11:01:10 GMT

দ্রুত অচলাবস্থার অবসান হোক

Published: 25th, May 2025 GMT

প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হলে সব অংশীজনকে আস্থায় নিয়ে করতে হয়। এর ইতি-নেতি প্রতিক্রিয়া আগে থেকে চিন্তা করতে হয়। অন্যথায় যে হযবরল হওয়ার উপক্রম হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান অচলাবস্থাই তার প্রমাণ। শনিবার পর্যন্ত সেখানকার কর্মকর্তারা কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন। আজ রোববার থেকে কমপ্লিট শাটডাউনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। যে প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরীণ অর্থ আদায়ের উৎস, সেই প্রতিষ্ঠানে এ রকম অচলাবস্থা কখনো কাম্য হতে পারে না। 

এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করে আসছেন। এর ফলে জনগণ যেমন সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তেমনি রাজস্ব আদায়ও কমে যাচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ সংশোধন করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছে, যেহেতু অধ্যাদেশটি প্রয়োজনীয় সংশোধন করে বাস্তবায়ন করার কাজটি অনেক সময়সাপেক্ষ, এনবিআরের সব কার্যক্রম আগের মতো অব্যাহত থাকবে এবং কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যমান ব্যবস্থায় সব কার্যক্রম সম্পাদন করবেন। 

সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে তাঁরা কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন। তঁাদের অভিযোগ, যাঁরা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন, তঁারা রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি ভালো বোঝেন। তারপরও সরকার প্রশাসন ক্যাডারের ব্যক্তিদের এখানে এনে ঊর্ধ্বতন পদে বসাচ্ছে। এনবিআরের সদস্যদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা করা হয়নি। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই সব সময় এই পদে অধিষ্ঠিত হন।  

সরকারের স্পষ্ট ঘোষণার পর এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে এনবিআর কর্মকর্তাদের অভিযোগ, দুটি পৃথক অবকাঠামো গঠিত হলে প্রশাসন ক্যাডারের দাপট আরও বেড়ে যাবে। এ অবস্থায় রাজস্ব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের চাকরি থাকলেও কর্তৃত্ব থাকবে না। 

সরকারের দাবি, এনবিআরের পুনর্গঠন শুধু আমলাতান্ত্রিক রদবদল নয়; এটি ন্যায্য, উন্নত ও সক্ষম করব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। কিন্তু সরকারের নীতি ও পরিকল্পনা যত মহৎ হোক না কেন, রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের আস্থায় না আনতে পারলে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না।

সরকার রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে এনবিআর ভেঙে দুটি প্রতিষ্ঠান করার উদ্যোগ নিয়েছে। গত পাঁচ দশকে কখনো রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। এর জন্য কেবল কাঠামোগত দুর্বলতা নয়, নীতিগত অস্বচ্ছতাও দায়ী। এনবিআর ভেঙে দুটি প্রতিষ্ঠান করলেই সরকারের রাজস্ব বাড়বে তার নিশ্চয়তা কী? সরকার মাঠপর্যায়ে দুর্নীতি কমানোর কথা বলছে। খুবই ভালো কথা। কিন্তু সেটা তখনই সম্ভব হবে, যখন উচ্চ পদাধিকারীরা স্বচ্ছতা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। এনবিআরে মতিউর–কাণ্ড বন্ধ করতে হলে কেবল কাঠামোগত সংস্কার নয়, নীতিগত সংস্কার জরুরি বলে মনে করি। 

এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘ভুল–বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে’। বাস্তবে সেটি হয়নি। বরং এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবিনামায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের পদত্যাগও যুক্ত হয়েছে। এনবিআরের মতো অতি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে এই অচলাবস্থা চলতে পারে না। ভুল–বোঝাবুঝির অবসানে প্রয়োজনে আবারও আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুন। 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর মকর ত দ র সরক র র ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়ার কাছে ট্রাম্পের পরমাণু সাবমেরিন মোতায়েনের ঝুঁকি আসলে কতটা

সাধারণ সময়ে এই ঘটনা খুবই অস্বাভাবিক, যুগ পরিবর্তনকারী ও ভয়জাগানিয়া বলে মনে হতো। কারণ, স্নায়ুযুদ্ধকালেও কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে রাশিয়ার উপকূলের দিকে পরমাণু সাবমেরিন পাঠানোর এমন নির্দেশ দেননি।

এই ধরনের পরমাণু উত্তেজনার খেলায় আগে কখনো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নেতা জড়াননি।

সত্যি বলতে, ১৯৬২ সালে কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র–সংকটে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূল থেকে মাত্র ৯০ মাইল দূরে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়ে বিশ্বকে পরমাণু যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় ১৩ দিন ধরে পুরো পৃথিবী ভয় আর অনিশ্চয়তায় কাঁপছিল।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কল্পনাবিলাসী শাসনব্যবস্থার কারণে এবার তেমন ভয় বা আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে না। এটি মোটেই কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র–সংকটের দ্বিতীয় সংস্করণ নয়, তা খুব স্পষ্ট।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কল্পনাবিলাসী শাসনব্যবস্থার কারণে এবার তেমন ভয় বা আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে না। এটি মোটেই কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র–সংকটের দ্বিতীয় সংস্করণ নয়, তা খুব স্পষ্ট।

তবে তার অর্থ এই নয় যে ট্রাম্প যা করলেন, সেটি কোনো ঝুঁকিমুক্ত সিদ্ধান্ত।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অবস্থান এমনভাবে বদলেছেন, যেটা তাঁর পূর্বসূরিদের কেউই সাহস করেননি। এমনকি অনেকটা হালকাভাবেই তিনি পারমাণবিক উত্তেজনার সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা রেখেছেন।

এখন যদি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পাল্টা জবাব দিতে চান, তাহলে বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে।

ট্রাম্প হয়তো মনে করছেন, পুতিন তেমন কিছু করবেন না। আসলে ট্রাম্প সম্ভবত এবার রাশিয়ার কৌশলই ব্যবহার করছেন।

পুতিন দীর্ঘদিন ধরেই পারমাণবিক অবস্থান বদলানোকে চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনার সময় তিনি প্রায়ই কালিনিনগ্রাদে পারমাণবিক ওয়ারহেড ছুড়তে সক্ষম ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেন। এই কালিনিনগ্রাদ এলাকাটি ন্যাটোর সদস্যদেশ পোল্যান্ডের সীমান্তে অবস্থিত।

২০২৩ সালে পুতিন বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেন। স্নায়ুযুদ্ধের পর এই প্রথম রাশিয়া নিজেদের দেশের বাইরে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করল। তিনি ইউক্রেনে বারবার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিতও দিয়েছেন।

আর গতকাল শুক্রবার পুতিন ঘোষণা দিলেন, রাশিয়া ওরেশনিক নামে একধরনের হাইপারসনিক মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি শুরু করেছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৫ সালের মধ্যেই বেলারুশে মোতায়েন করা হবে। তিনি দাবি করেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের জন্য নির্দিষ্ট স্থানও ইতিমধ্যে বাছাই করে রাখা হয়েছে।

গত কয়েক দিনে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্পের নানা হুমকি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে। মেদভেদেভ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করছেন। তিনি এর আগেও পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন।

পুতিন দীর্ঘদিন ধরেই পারমাণবিক অবস্থান বদলানোকে চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনার সময় তিনি প্রায়ই কালিনিনগ্রাদে পারমাণবিক ওয়ারহেড ছুড়তে সক্ষম ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেন।

কিছুদিন আগেও পুতিনের ভক্ত হিসেবে পরিচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছেন এবং তার মোকাবিলায় পাল্টা চাল দিচ্ছেন।

অন্যভাবে বললে, রাশিয়া যেটাকে ‘কেবল হুমকি’ হিসেবে দিচ্ছে, ট্রাম্প সেটাকে ‘আসল হুমকি’ হিসেবে নিচ্ছেন। এটা অনেকটাই উল্টো পরিস্থিতি। কারণ, ট্রাম্পের সমর্থকেরা সাধারণত বলে থাকেন, তাঁর কথাকে সরাসরি না নিয়ে রূপকভাবে বুঝতে হবে।

মেদভেদেভকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প তাঁর নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লেখেন, ‘শব্দের গুরুত্ব অনেক। আর সেগুলো অনেক সময় এমন পরিণতি ডেকে আনতে পারে, যা কেউ চায় না।’

তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই হুমকিকে অনেকটাই নাটকীয় ‘পারফরম্যান্স’ বলা যায়। হ্যাঁ, এটি উচ্চ ঝুঁকির, দায়িত্বহীন। তবে শেষমেশ এটি একধরনের ‘লোক দেখানো কার্যকলাপ’।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের পেছনে অন্য উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। আগামী কয়েক দিনে ট্রাম্পকে ব্যাখ্যা করতে হবে, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। দিন দিন এটির গুরুত্ব আরও বাড়ছে। কারণ, গতকাল শুক্রবার কিয়েভে রাশিয়ার এক হামলায় ৩১ জন নিহত হয়েছেন।

এ ছাড়া রাশিয়ার তেল-গ্যাস কেনা দেশগুলো বিশেষ করে চীন, ভারত, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপর দ্বিতীয় স্তরের নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরিকল্পনাও ট্রাম্পের জন্য কূটনৈতিক চাপে পরিণত হয়েছে।

এ সবকিছুর মাঝখানে ট্রাম্প যদি পরবর্তী সময়ে তাঁর হুমকি থেকে সরে দাঁড়াতে চান, তাহলে তিনি দেখাতে পারবেন যে সাবমেরিন মোতায়েনের মাধ্যমে তিনি রাশিয়াকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। তিনি এমন একটি কৌশল নিয়েছেন, যার ঝুঁকি হয়তো বেশি, কিন্তু অর্থনৈতিক খরচ তুলনামূলকভাবে কম। বিশেষ করে যেসব মিত্রদেশকে তিনি অন্য ক্ষেত্রে পাশে পেতে চান, তাদের ওপর শুল্ক আরোপের চেয়ে এই মূল্য তুলনামূলক কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ